রাকেশ গুপ্তা এর সফলতার কাহিনী | Jayanti Chakrabarty | Bangla Motivational success story

Bangla success story :- Rakesh Gupta Bio graphy( Success Story) Bangla. This success story written by jayanti Chakraborty. This story revolves around Rakesh Gupta Success Story like Rakesh Gupta biography. Rakesh Gupta life story in bengali. Bangla Motivational success story. We are collected this type of success story that revive your lost mind. You get more success story on Bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind. So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story. Thank you so much. 

 রাকেশ গুপ্তা 

       বিহারের সহর্ষ জেলার ঘিনা গ্রাম । গাঁয়ের ছেলে , ১৩ বছরের রাকেশ গুপ্তা একদিন গাঁয়ের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিল । হঠাৎ এক গ্রাম সম্পর্কে চাচা তার পাশে পাশে হাঁটতে লাগল । একথা সেকথার পর হাতের ব্যাগ থেকে কটা বড় বড় লাল লাড্ডু বের করে সে রাকেশকে খেতে দিল আদর করে । 

       গরিবের ছেলে রাকেশ । বাড়িতে অনেকগুলি ভাইবােন । মেঠাই মণ্ডা সে বহুবার শহরের দোকানগুলির কাচের শােকেশে সাজানাে থাকতে দেখেছে বটে কিন্তু কোনােদিন চেখে দেখার সৌভাগ্য হয় নি । লাড়ু দেখেই লােভে দু চোখ চকচক করে উঠল তার । সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েই মুখে পুরে দিল সে । 

       তারপর আর কিছু মনে নেই রাকেশের । সেই দিনই রাতারাতি তার সেই দেশােয়ালি চাচা স্থানীয় দালালের মাধ্যমে তাকে বিহার থেকে পাঞ্জাবের অমৃতসরে পাচার করে দিল । সম্পূর্ণ অচৈতন্য অবস্থায় এক রাজ্য থেকে আর এক রাজ্যে চলে এল রাকেশ । 

     জ্ঞান ফেরার পর রাকেশ দেখল সে এক পাঞ্জাবী চাষি পরিবারে কৃতদাস হিসাবে বন্দী । তার সঙ্গে আছে তারই মতাে আরও পাঁচজন বালক । কিন্তু রাকেশকে নিয়ে তার ক্রেতা অর্থাৎ মনিব মােটেই খুশী হতে পারল না । কারণ বিহারের ছেলে রাকেশ তার গুমুখী ভাষার বিন্দুবিসর্গ বােঝে না । শুধু বকে বকে মরতে হয় তাকে । গরুর মতাে মার , গালাগাল আর না খেতে দিয়ে দিনের পর দিন ঘরে তালাবন্ধ করে রাখার পরও যখন রাকেশের ভাষাজ্ঞানের কিছুমাত্র উন্নতি হল না , তার শিখ মনিব তখন তাকে বেচে দিল আর একজনের কাছে । এই নতুন প্রভু বেশ মােটা দামে রাকেশকে কিনেছিলেন । কাজেই খাটিয়ে সেই টাকা সুদে আসলে উশুল না করে ছেড়ে দেবার পাত্র তিনি নন । 

       শুরু হল তেরাে বছরের ক্রীতদাস রাকেশকে পুরােপুরি ব্যবহার করা । সকালে উঠেই রাকেশ মােষগুলােকে স্নান করায় বালতি বালতি জল তুলে এনে । তারপর চলে যায় মাঠে । সেখানে গমের ক্ষেতে কাজ করে সারাদিন । সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে এলে দুখানি শুকনাে রুটি খেতে দেওয়া হয় তাকে । 

       সারা দিনে রাত্রে মাত্র দুখানি শুকনাে রুটি আর ছােটো গ্লাসে আধ গ্লাস চা । প্রায় দিনই ক্ষিদের জ্বালায় জ্ঞান হারাতাে রাকেশ । তখন তার কপালে জুটত লােহার রডের বাড়ি প্রচণ্ড প্রহার । প্রহারের হাত থেকে বাঁচবার জন্য ক্ষিদেয় ক্লান্তিতে ধুকতে ধুকতে কাজে যেতে হত রাকেশকে । 

      এভাবেই হয়তাে একদিন ক্ষিদের জ্বালায় মাঠের মধ্যেই মরে পড়ে থাকতে হতাে রাকেশকে কিংবা মালিকের প্রহারে খুন হতাে সে । কিন্তু ভাগ্যটা তার অত খারাপ ছিল না । 

     বছর পাঁচেক বিস্তর খোঁজাখুঁজি আর প্রশাসনের দোরে দোরে প্রচুর ঘােরাঘুরি । শেষপর্যন্ত পুলিশ খুঁজে বের করল রাকেশকে । কিন্তু তখন সে প্রায় পঙ্গু । মানসিক কিছু জটিলতাও দেখা দিয়েছে তার মধ্যে । নিয়মিত ড্রাগ খাওয়ানাের ফলে সে তখন এক অর্ধমৃত , রুগ্ন , অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা আধপাগলা কিশাের যার আশ্রয় মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও নয় । 

      কিন্তু মনের জোর রাকেশকে এখানে থামতে দিল না । তার বাবা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন । ধীরে ধীরে রাকেশ আবার তার মাতৃভাষা হিন্দি বলতে বুঝতে ও লিখতে পড়তে শিখে গেল । তারপর সে শুরু করল এই নিষ্ঠুর সমাজের দিকে তার ঘুরিয়ে মার ।

       ২০০৬ সালে বিশ্বে শিশুর অধিকার রক্ষার বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার নেবার জন্য সুইডেনে উপস্থিত হয়েছিল সে । সেখানে বিচারকবৃন্দ ও হাজার হাজার দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে সে তার নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছিল তার অমানুষিক জীবনসংগ্রামের কাহিনি । তার পরিণত বুদ্ধি , সংবেদনশীলতা ও অভিজ্ঞতার পরিচয় পেয়ে বিচারকরা তাকে অন্যতম জুরি হিসাবে নির্বাচন করেছেন । তার কাজ হল ২০১৩ সাল পর্যন্ত পুরস্কার প্রাপক শিশুদের মনােনীত করা । 

       জীবনের লড়াইটা এভাবেই একেবারে গােহারা হারতে হারতে হঠাৎ জিতে গেল রাকেশ দারুণভাবে । কে জানে কার জন্যে কি পুরস্কার তােলা আছে ভাগ্যদেবতার হাতে । মানুষের কাজ শুধু লড়াইটা টেনে নিয়ে চলা । কখনােই লড়াইটাকে থামতে না দিয়ে লাগাতার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার নামই তাে জীবন ।

       রাকেশ এখন প্রতিদিন সকালে উঠে ধ্যান করে । ঈশ্বরের কাছে তার একমাত্র প্রার্থনা— জীবনের হেরে যাওয়া , মার খাওয়া শিশুদের পিঠে । সে যেন তার নিজের হাতখানা রাখতে পারে । যেন গভীর বিশ্বাস । মিশিয়ে বলতে পারে—

         ‘ভয় পেয়াে না । আমি তাে আছি । আমরা তাে আছি ।' 

সমাপ্ত 

0 Comments: