সংসার | Sangsar | Smritikotha Dutta | Bangla Sad Family Story

     প্রিয় লেখকের প্রিয় লেখা । বাংলা জগতে "বাংলামোটিভ ডট কম" এক অন্যতম নাম। গল্প ও কবিতা পড়া বা প্রকাশের এক অন্যতম ঠিকানা। এই ওয়েবসাইট তোমায় সুযোগ দেবে নতুন কিছু লেখার, নতুন কিছু সৃষ্টি করার। তোমার সৃষ্টিশীল জগতের মোটিভেশন হয়ে হাত বাড়িয়ে তোমার পাশে থাকবে। মনে রাখবে কোনো লেখক বা লেখিকা পরিচয়হীন নয়। তাদের লেখাই তাদের নিজস্ব পরিচয়। তাই আর দেরি কেনো ! তোমার লেখা গল্প বা কবিতা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করো আমাদের সাথে, আমাদের Email Id, "lovejunction506@gmail.com". এখানে তোমার লেখা গল্প, কবিতা বা মোটিভেশনাল স্টোরি, তোমার পুরো নাম দিয়ে পাঠিয়ে দাও। আমরা তোমার Email এর অপেক্ষায় আছি। ততক্ষনে স্মৃতিকথা দত্তের  "সংসার " লেখাটা রইলো তোমাদের জন্য।

 সংসার

স্মৃতিকথা দত্ত

    বিয়ের পর থেকেই দেখি আসছি  প্রতিবার পুজায় আমার জন্য কেনা শাড়িগুলোতে তরী (আমার ননদ) সবসময়ই হাত বুলাতে বুলাতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়তো।

    কখনো কখনো নিজেই বলতাম যেটা পছন্দ হয় নিয়ে নাও। সবসময়ই দেখতাম সবচেয়ে দামী আর সুন্দর শাড়িটা তরী নিজের জন্য  নিয়ে নিতো কোনো দ্বিধা ছাড়াই।

    আমার শ্বশুর রিটায়ার্ড করেছে অনেকদিন হয়েছে কিন্তু শাশুড়ী মাকে সবসময়ই দেখতাম কথায় কথায় তরীর বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলে বলতো তোর বাপের কি কম আছে?

    যে তোর দাদার ভরসা করবো আমরা ভালো ছেলে ভালো ঘর দেখেই বিয়ে দিবো তোকে। খালি হাতে শ্বশুর বাড়ি যাবে না আমার মেয়ে।

    বুঝতাম কথাগুলো আমাকেই ইঙ্গিত করে বলছে। নিরবে চোখের জল ফেলতাম। অভ্রর সামনে কখনো আমাকে কোনো বিষয়ে কটু কথা বলতো না তরী বা আমার শাশুড়ী মা। কিন্তু অভ্র আমাদের বাসার কাজের মাসী সুমির মায়ের থেকে শুনে ঠিকই বুঝতে পারতো। হঠাৎ একদিন অভ্র মাকে ডেকে বলেছিলো মা,তরী আর পিহুকের মধ্যে এত পার্থক্য করো কেন তুমি? 

   সেই দিন সেই সময় আমাকে রান্না ঘর থেকে আমার হাতে হেঁচকা টানে ড্রয়িং রুমে এনেছিলো তরী। 
বাধ্য হয়ে অভ্র তরীকে একটা থাপ্পড় দেয়। পুরো একসপ্তাহ তরী আর আমার শাশুড়ী মা আমার মামা শ্বশুরের বাসায় ছিলো।

   কি এক কান্ড! আমার মা-বাবা পর্যন্ত ক্ষমা চেয়েছিলো এই ঘটনায়। শুধু মেয়ের সংসার বাঁচাবে বলে।
আটদিনের দিন এসেছিলো বাসায়। এসব কিছুর মধ্যে আমার শ্বশুর ছিলো সবসময়ই নিরব দর্শক। সে কোনো বিষয়ে কোনো শব্দ করতো না তবে প্রতিবাদ করতো না এমনও নয় বরং আমার শাশুড়ীর কাছে সে মতামত কোনো পাত্তা পেতো না।

    বিয়ের পর ছয় মাস খুব খারাপ গিয়েছিলো অভ্রর ব্যবসা সেজন্য প্রতিদিন কথা শুনাতো আমাকে।
ঠিক ছয়মাস পর যখন ব্যবসার উন্নতি হতে লাগলো। বছর খানেক এর মধ্যে আরেকটা বড় দোকান নিলো অভ্র  তখন তরী আমাকে বলে বসলো বৌদি দাদার যদি বিয়ের আগেই দুইটা দোকান থাকতো তবে কি তুমি এ বাড়িতে বউ হয়ে আসতে পারতে?

    সরাসরি ভাবে এটাই বুঝাতে চেয়েছিলো যে এখনকার মতো অবস্থা থাকলে এ বাড়িতে আমি বউ হয়ে আসতে পারতাম না।

   বিয়ের আড়াই বছর পরও যখন  আমার বাচ্চা হচ্ছিলো না। সেই সময় শাশুড়ী মা বললো সকালে আমার সামনে আসবে না। অপয়া মেয়ে মানুষের মুখ দেখে ঘুম ভাঙলে সারাদিন খারাপ যাবে। এভাবেই চলতে লাগলো সংসার। মানিয়ে নিতে মেনে নিতে। মেয়ে হয়েও অন্য মেয়েদের কাছে নিপীড়িত হতে হতে। 

    অনেক সাধ্য-সাধনার পর এক রাজকন্যার জননীও হলাম। হঠাৎ করে তরীর ভালো বিয়ের সম্বন্ধ আসলো। এক ছেলে, এক মেয়ে ছোট পরিবার। মেয়ের বিয়েও হয়ে গেছে। তরীর মতামত নিয়ে বিয়েও হয়ে গেলো।

    মাস ছয়েক সংসার করার পর হঠাৎ একদিন তরী খুব ভোরে এ বাসায় আসলো। এসেই আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। ক্ষমাও চাইলো আমার সাথে করা অন্যায়ের জন্য। কথার প্রসঙ্গে জানতে পারলাম ওর ননদ বাচ্চা হওয়ার জন্য বাপের বাড়ি এসেছে মাসখানেক । সেখানে এসেই মা মেয়ে মিলে তরীকে বেশ কষ্ট দিচ্ছিলো অথচ তরীর বর কোনো প্রতিবাদ করে না। মাকে অথবা বোনকে বুঝায় না। সেই অভিমানেই চলে এসেছে তরী।

     হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতি দেখে বেশ কষ্ট লাগছিলো। খারাপ লাগছিলো এটা ভেবে কিছু বউ রা হয়তো এভাবেই প্রতিনিয়ত সমাজের বাজে নিয়মে নির্যাতিত হয়। ছেড়ে দেওয়া বা ছাড় দেওয়ার পরিবর্তে যারা পরের বাড়ির মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে নিজের মেয়ের ভালো সংসার কামনা করে সেই সংসার কি আদৌ সুখকর হয়?

    শুধু শুধু কিছু সম্পর্ককে আমরা নিজেরাই জটিল করি তুলি। কারণ সৃষ্টিকর্তা কার জন্য কি প্রস্তুত রাখে কেউ বলতে পারে না!

    তাই অন্তত নিজেদের সংসারটাকে আর সংসারে থাকা মানুষগুলোকে আপন মনে করেই মেনে নিন।
তাহলেই দেখবেন!

 "সংসার পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে"।

0 Comments: