ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ
বাধনের প্রশ্ন শুনে আমি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।
বাঁধন বলল, দেখো আমরা দুজন দুজন কে ভালোবাসি। সময় হলে আমাদের বিয়েও হবে। আর বিয়ের পর যদি এসব করতে পারি তাহলে এখন কেন পারবো না?
নাকি তুমি আমাকে বিলিভ করোনা?
আমি চুপ করেই শুনছি। গত কয়েক দিন যাবত বাঁধন শারীরিক সম্পর্ক গড়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
আজও সে আমাকে উলটা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে।
বাঁধন বলল, আজকালকার দিনে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।
তাহলে ৫-৬ বছরের রিলেশন গুলা টিকে আছে কিভাবে?
এই জিনিস টার উপর ভিত্তি করেই সম্পর্ক টিকে থাকে। তুমি যদি তোমাকে টাচ করতে দাও, আমার ইচ্ছা পূরণ করতে দাও, তবে আমি পূর্ণ বিশ্বাস পাবো যে তুমি আমার ই।
আমি তোমাকে দখল করে রাখতে চাই যাতে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে না পারো।
আর শুনতে পারছি না কথাগুলো। বিষের মত লাগছে।
নিজের উপর নিজেরি রাগ হচ্ছে যে এরকম একটা ছেলেকে আমি ভালোবেসেছি!
কিন্তু আমিতো এই বাঁধন কে ভালোবাসিনি।
আমি ভালোবেসেছি একটা পাগল কে যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসত।
আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যে কত কি করতো! সেই বাঁধন আজ এমন বাজে প্রস্তাব দিচ্ছে?
সেকি বদলে গেছে নাকি সে আগে থেকেই এমন ছিলো? তার পাগলামো গুলা ছিলো মেয়ে পটানোর ধান্ধা!
বাঁধন বলল, আমি আর থাকতে পারছি না অবনী। প্লিজ কিছু একটা করো। তুমি সবসময় একটা রেস্ট্রিকশন রাখো কেন বলোতো? কিস করা যাবেনা,
হাগ করা যাবে না,কাছাকাছি বসা যাবেনা।
এসব কি অবনী?
এখন কার দিনে কি এমন রিলেশন আছে?
সব রিলেশনেই তো এসব কমন ব্যাপার। প্রতিবার দেখা হলে একটা কিস হবেই। বাট তুমি!
আমাদের এই নিয়ে অসংখ্য বার মিট হয়েছে কিন্তু কখনো ই কাছে আসতে দাওনা।
নাহ,এভাবে আর পারবো না অবনী।
এবার শুধু জিজ্ঞেস করলাম, কি চাইছো বাঁধন?
- জানোনা কি চাই? একটু কাছে পেতে চাই তোমায়।প্লিজ অবনী, আমাদের মাঝে আর দূরত্ব রেখো না।
- এটাই তোমার শেষ কথা?
- মানে!
- আর কিচ্ছু চাও না?
আমি যে পাগলের মত ভালোবাসি তোমাকে, সেটা তোমার কাছে মূল্যহীন?
- পাগলের মত ভালোবাসলে এই দূরত্ব রাখতে না।
এটলিস্ট একটা পাপ্পি দিতে এতদিনে।
এ তোমার কেমন ভালোবাসা তুমিই জানো!
বাধনের এই কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
ফিজিক্যাল রিলেশন ছাড়া সম্পর্ক টেকে না?
- আচ্ছা অবনী, এই পর্যন্ত আমরা অনেক পার্কেই ঘুরেছি।আশেপাশে কি হয় দেখো ই তো।
আমাদের সাইডে কি হচ্ছে দেখো।
পাশের ভাইয়া আপুরা কি করছে একবার দেখো।
- আমি কেন দেখবো? কে কি করছে তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নাই।
আমি আমার মত করে তোমাকে ভালোবাসি।
আর ওসব কাজ করলে সেটা খারাপ হয়ে যাবে।
ওতে অনেক পাপ হয়।
- ইহ,হাজিগিরি দেখাইতে আসছে।
পাপ হয় তাইলে প্রেম করতে আসছো ক্যান?
এই যে আমার পাশে বসে আছো, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছো তাতে পাপ হয়না?
শুনো, ওইসব হাজিগিরি দেখাইলে প্রেম করতে আইসো না। আজাইরা..
- দেখো বাঁধন,আমরা এমন একটা যুগে জন্মেছি, এখানে প্রেম ভালোবাসা হবেই।
সবাই তো জানি বিয়ের আগে প্রেম টাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবুও তো সেভেন্টি পারসেন্ট ছেলে মেয়েরা প্রেমে পড়ে আর ইদানীং নিজেদের পছন্দেই সবাই বিয়ে করছে।
- এটা বুঝো আর আমার কথাটা বুঝো না?
অত কথা বাদ,আমি যা চাই তা দিবা কি না বলো।
- সম্ভব না কখনো।
- তাইলে রিলেশন চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব না আমার দ্বারা।
আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
আমার বাঁধন আজ এ কথা বলতে পারলো!
অথচ কদিন আগেও সে বলতো, আমি তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না।
হায় রে ভালোবাসা!
বাঁধন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
আমি শুধু বললাম,আচ্ছা ঠিক আছে।
মনের বিরুদ্ধে কিছু করে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে একা থাকাই ভালো।
আর কখনো তোমাকে ফোন দিবো না।
.
এরপর তুমুল কথা কাটাকাটির পর সেদিনের মত চলে আসলাম।
আসার আগে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে এসেছি।
আর কখনো ভালোবাসার অধিকারে কথা বলতে পারবো না।সেটা নাকি আমাকে মানায় না! আমি নাকি ভালোবাসতেই জানিনা!
.
১ সপ্তাহ কেটে গেলো।
অনেক কষ্ট হলেও নিজেকে সামলে নিয়েছি।
বিকেলবেলা হঠাৎ বর্ষা আমাদের বাসায় এলো।
বর্ষা বাধনের ছোট বোন।
এবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিবে।
বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতাম আমি।
আর টিউশনিতে গিয়েই বাধনের সাথে পরিচয় আমার।
বর্ষাকে কেমন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
কিছুতেই বলতে চাইছিল না।
অনেক বার জিজ্ঞেস করার পর বলল,আপু আমি একজন কে ভালোবাসি।
ছেলেটা অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।
তিন মাসের রিলেশন আমাদের।
ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
কথাগুলো শুনে কয়েক মুহুর্ত থমকে তাকিয়ে রইলাম। বললাম,হুম। কেন চলে গেলো?
- সেটা জানিনা।
- চলে গেলে আর কি করার।
ভুলে যাও ওকে।
যে তোমাকে ছেড়ে গেছে তাকে মনে করে কষ্ট পাবা কেন?
- আপু,ওর সাথে আমার অনেক কিছু হয়ে গেছে।
- মানে?
তারপর বর্ষা সবকিছু খুলে বলল আমাকে।
শারীরিক সম্পর্ক গড়ার পর ছেলেটা নিজের মত বর্ষাকে ব্যবহার করে ছেড়ে চলে গেছে।
কিন্তু বর্ষার বয়স কম,আবেগ টা বেশি।
কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছে না।
বারবার বলছে, ওকে ছাড়া বাচতে পারবো না।
বর্ষাকে অনেক বুঝালাম, দেখো তুমি ছোট মানুষ।
ভালো মন্দ বুঝার বয়স হয়নি।
কিন্তু যা ভুল হওয়ার হয়ে গেছে, এখন ওকে ভুলে যাও।কারণ ও তোমাকে ভালোই বাসেনা।
অযথা ওকে ভেবে কষ্ট পাবে কেন?
- না আপু। আমি ওকে ছাড়া বাচবো না।
- কয়েক দিন গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে আপু।
শক্ত হও।
- উহু,মরে যাবো আমি।
বর্ষাকে বুঝানো দায় হলো। তাই জিজ্ঞেস করলাম, সে তো চলেই গেছে।
তা কিভাবে ফিরাবে ওকে শুনি?
- তুমি হেল্প করবা আপু। ভাইয়াকে একটু বুঝিয়ে বলবা সবটা।
ভাইয়ার অনেক গুন্ডা টাইপের ফ্রেন্ড আছে,
সোহানকে একটু ভয় দেখালেই ও আমার কাছে ফিরে আসবে।
- সে তো মন থেকে চায় না।
ভয় দেখিয়ে ভালোবাসা আদায় করবা?
- আমি জানিনা কিছু।
- ছোটদের নিয়ে এই এক যন্ত্রণা
।ভুল করে সেটা বুঝতেও চায়না,শোধরাতেও চায়না।
- আপু প্লিজ।
- কিন্তু বাধনের সাথে আমার গত সপ্তাহে ব্রেকাপ হয়ে গেছে।
ওর সাথে কথা বলার সুযোগ নাই আমার।
- তোমরা তো দুজন ই খুব ভালোবাসো একে অপরকে।তাহলে ব্রেকাপ হলো কেন?
- একই কাহিনিরে বোন।
বাঁধন ও এসব করতে চেয়েছিল।
রাজি হইনি বলে ব্রেকাপ করলো।
আমিতো বড় হয়ে গেছি।
ম্যাচিউরিটি এসেছে,ভালো মন্দ বুঝি।
তাই রাজি হইনি।
তোমার মত থাকলে হয়ত আমিও একই ভুল করে ফেলতাম।
তারপর আমাকে ও তোমার মত কাঁদতে হত।
নিজের সম্মান হারিয়ে কাঁদবো কেন?
আগেই কাঁদছি, এটা ই ভালো।
জিত টা তো আমার ই হয়েছে।
বর্ষা অনেক্ষণ চুপ করে বসে রইলো।
তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ল।
আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আর বলল,ছেলেরা এমন কেন আপু?
দুনিয়ায় কি ভালো ছেলে নাই?
আমরা কি কাউকে বিশ্বাস করবো না?
- সব মেয়েরই এখন এই একটাই প্রশ্ন।
মেয়েরা বলে,ছেলেদের বিশ্বাস করা যায় না।
আর ছেলেরা বলে মেয়েদের বিশ্বাস করা যায় না।আসলে উভয়কেই বিশ্বাস করা যায়।
কিছু বিশ্বাস ঘাতকদের জন্য আমরা তো আর সবাইকে অবিশ্বাস করতে পারিনা।
- হুম আপু। কিন্তু আমি কি ওকে ভুলে যাবো?
- সেটাই ভালো হবে।
কারণ যে তোমাকে চায় ই না,তাকে কেন জোড় করে বেধে রাখবে?
তাতে দুজনের কেউই সুখী হবা না।
বরং এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনা করো মন দিয়ে।
এবার বর্ষা কিছুটা বুঝেছে।অনেক্ষণ কান্নাকাটি করার পর বাসায় চলে গেলো। বলেছে ছেলেটিকে ভুলে যাবে।
কিন্তু দুদিন পর শুনলাম বর্ষা হাসপাতালে।হাত কেটে ফেলেছে সুইসাইড করবে বলে।মৃত্যু তো এত সহজ না।অযথা নিজেকে কষ্ট দেয়া।
এরা যে জীবন টাকে এত তুচ্ছ ভাবে কেন আমি বুঝিনা!
এসব ভাবতে ভাবতে বাসার কাজ করছিলাম। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়লে দরজা খুলে দেখি বাঁধন!
আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি।বাঁধন বলল,বর্ষার অবস্থা খুব খারাপ।
তোমাকে একবার দেখতে চাইছে।
বাধনের সাথে হাসপাতালে আসলাম।
বর্ষাকে খুব মানসিক রোগীর মত দেখাচ্ছিল।
প্রায় এক ঘন্টা ওকে বুঝালাম।
পুরোটা সময় ওর হাত ধরে ছিলাম।
অনেক বুঝানোর পর মেয়েটা কিছুটা স্বাভাবিক হলো।এতক্ষণ বাঁধন আমার পাশেই বসা ছিলো।
.
বাইরে আসতেই বাঁধন এসে আটকে ফেললো আমাকে।অনেক বার করে মাফ চাইলো।
কান্না করলো আর বলল,আর ভুল হবেনা।
এখন থেকে সবসময় সম্মান করবো তোমাকে আর আমাদের ভালোবাসা টাকেও শ্রদ্ধা করবো।
বাঁধন যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তাতেই আমি খুশি।
আসলে এসব জিনিস আজকাল খুব কমন হয়ে গেছে। এসবের শিকার হয়ে মানুষ ভালোবাসার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।
ভালোবাসা পবিত্র জিনিস,দুটি মানুষের হৃদয়ের বন্ধন। এখানে যারা লুতুপুতু যোগ করতে চায়,তারা আসলে ভালোবাসাকে অসম্মান করে।
ক্রমাগত সেক্সুয়াল কথাবার্তা বলা,জান তুমি ভিতরে কি পড়ছো,তোমার সাইজ কত, এইগুলা আসলে ভালোবাসার নামে বেয়াদবি।
এসব কথা যারা বলে, প্রকৃত অর্থে তারা লুইচ্চা,আর যারা শুনে তারা লুচু।
ভালোবাসলে বারবার আই লাভ ইউ জান বলতে হয় না।এটা অনুভব করার জিনিস।যাকে ভালোবাসেন, সে অবশ্যই বুঝবে।
এত লুতুপুতুর প্রয়োজন নেই।
আসলে আমাদের কি করা উচিৎ?
বাস্তবিক পক্ষে বিয়ের আগে প্রেম থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
আর যদি প্রেমে পড়েই যান,কিংবা ভালোবাসা হয়ে যায় তবে পবিত্রভাবে ভালোবাসুন।ভালোবাসা কে সম্মান করুন,এটা স্বর্গীয় সুখানুভূতি এনে দেয়!
.
(গল্পটিতে একজন আপুর জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে)
0 Comments: