প্ৰাগথন
জয়ন্তী চক্রবর্তী
জীবন মানেই হল যুদ্ধ । যুদ্ধ প্রতিকুলতার সঙ্গে । তিনভাগ চোখের জল আর একভাগ বেঁচে বর্তে থাকা এই দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে পৃথিবীর দিনগুলি কাটিয়ে দেবার নামই হল জীবন । এর বাইরে যাঁরা , তাঁরা কোটিতে গুটিক । পৃথিবীর সেইসব আদর্শ , নমস্য ব্যক্তিদের জীবন পর্যালােচনা করলে আমরা দেখতে পাব কী প্রচণ্ড সংগ্রাম একদিন তাদের করতে হয়েছে সফলতার শীর্ষবিন্দুকে ছুঁতে ।
বিশ্ববাসীর কাছে তাঁরাই চিরকালের অনুপ্রেরণা । জীবনসংগ্রামে ক্রমাগত হারতে হারতেই মানুষ একদিন জেতে । কিন্তু সেই পরম ক্ষণ আসার আগেই কেউ কেউ হতাশায় হাল ছেড়ে দেয় । বেছে নেয় আত্মহননের পথ । বর্তমানে এই আত্মহত্যার হার ভয়াবহ রকম বৃদ্ধির দিকে ।
কোন পথে মিলবে পরিত্রাণ ?
জীবনের পথ তাে কোনােদিনই কুসুমাস্তীর্ণ নয় । আগেও ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় ফেল করত , গুরুজনদের বকাঝকা খেত , মারধােরও খেত প্রচুর । আগেও মানুষ প্রণয়ে ব্যর্থ হত , আগেও কৃষক আকণ্ঠ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ত , বণিকের হত ভরাডুবি , আর বেকারাত্ব ? সে তাে তিনশাে বছরের ট্রাডিশান । সেই যেদিন থেকে ইংরেজ এদেশে এল , তখন থেকে ।
আজ মানুষ চূড়ান্ত রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে । স্বনির্ভর এবং স্বার্থপর মানুষের আজ সমাজ নেই , বন্ধু নেই , পরিবার ছােটো হতে হতে বিন্দুতে ঠেকেছে এমনকি ঈশ্বরেও নেই কণামাত্র বিশ্বাস । তাই হয়তাে কঠিন মুহূর্তে প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়ালেই সে নিজেকে বড় একা , বড় অসহায় , বড় নিরুপায় বলে ভাবছে আর খুঁজে নিচ্ছে জীবন থেকে পালাবার পথ ।
আজ মানুষের জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে গেছে । আগে শ্রমক্লান্ত মানুষ ঘরে ফিরে যােগ দিত সমবেত গান , অভিনয় , নাচ , আচ্ছা , খেলা কিংবা ধর্মীয় কোনাে সভায় । অনেকের সঙ্গে বসে ভাগ করে নিত সুখদুঃখ । আজ ধনী দরিদ্র সবাই বিনােদন বলতে বােঝে টি ভি কিংবা কম্পিউটারে গেম বা ইন্টারনেটে চ্যাটিং যার সবটাই কৃত্রিম । পর্দার জীবন মানুষকে এমন এক পৃথিবীর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় যার সঙ্গে বাস্তবের কোনাে সম্পর্ক নেই । স্বপ্নরাজ্যে ক্ষণিক বিচরণের পর মানুষ যখন সেই রূঢ় বাস্তবের কঠিন মাটিতে এসে দাঁড়ায় তখন সে দিশাহারা হয়ে পড়ে । তাকে গ্রাস করে স্বপ্নভঙ্গের হতাশাও ।
মানুষের মনের শক্তি অসীম । মনের জোরেই একজন অন্ধ মানুষ পৌঁছে যেতে পারেন এভারেস্টের চূড়ায় , পঙ্গু মানুষ সাঁতরে পার হয়ে যান দুস্তর পারাপার , কেউ শুধুমাত্র মগজটুকু সম্বল করে ভেসে থাকেন মহাকাশে , কেউ একটি মাত্র আঙ্গুলের সাহায্যে নির্মাণ করে ফেলেন অতুলনীয় সেতু , সাধারণের যা কল্পনার ও অগম্য আবার কেউ বা অক্ষর জ্ঞান হীন আকাট মূখ হয়েও পরিচালনা করে যান সুবিশাল সু - সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য ।
হ্যা , আমি সম্রাট আকবরের কথা বলছি । নিজের নামটিও তিনি সই করতে পারতেন না । অথচ মুঘল বাদশাহদের আড়াইশাে বছরের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে সফল শাসক । কাজেই লেখাপড়া শেখাটাই বড় হবার একমাত্র পথ নয় । প্রত্যেকেরই জীবনে কিছু না কিছু সম্ভাবনা আছে । প্রয়ােজন শুধু সেটাকে খুঁজে বের করা আর ঠিকঠাক কাজে লাগানাে । এটা করতে পারলেই মিরাকল ঘটে যায় । ইতিহাস তার সাক্ষী ।
জন আব্রাহাম লিঙ্কন জীবনে সব শুদ্ধ ১৮ মাস স্কুলে গেছেন । অথচ তিনিই হয়েছিলেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট । আলভা এডিসনকে তাে অপদার্থ , গাধা বলে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল । ওয়াল্ট ডিজনি ১৬ বছর বয়সে ‘ ভাল্লাগেনা’বলে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন । তারপর যা ভাল্লাগে তাই নিয়ে রাতদিন পড়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই একদিন দেখা গেল অর্ধশিক্ষিত সেই ছেলেটিরই হাতে গােটা ছাব্বিশ অস্কার আর গােটা সাতেক এমি পুরস্কার জমা হয়ে গেছে । বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান শচীন তেণ্ডুলকর কোনাে রকমে ঘসটাতে ঘসটাতে ক্লাস টেনটুকু পাশ করেছিলেন । তারপেরই স্কুল ছুট । তাতে কি ? বাইশ গজের সাম্রাজ্যে রাজাধিরাজ হয়ে উঠতে তার তাে আটকায়নি কোথাও । আর আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ । বার চারেক স্কুল পাল্টে প্রাইমারিতেই বুঝে নিলেন এই দশটা চারটের আন্দামান তার জন্য নয় । এখন বিশ্বের তাবড় তাবড় চিন্তাবিদ দার্শনিক থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ কৃতি মানুষের জীবনের বুনিয়াদ গড়ে চলেছেন । এই রবীন্দ্রনাথ নামের প্রাইমারি ছুট মানুষটি ।
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন- glory lies in the attempt to reach ones goal and not in reaching it .
' জীবন মানেই হল কিছুটা পাওয়া আর অনেকটা না পাওয়ার যােগফল । আর এই না পাওয়ার পেছনে লাগাতার ছুটতে ছুটতেই মানুষ একদিন নিজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে আবিষ্কার করে ফেলে , আর নিজেই তখন অবাক হয়ে যায় নিজের ক্ষমতায় । তখন তার কাছে কোনাে কিছুই আর অধরা থাকে না ।
ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকে এক জায়গায় বলেছেন- no one is useless in this world who lightens the burden of it to any one else . এ পৃথিবীতে কেউই ফেলনা নয় । জীবনে কোথাও না কোথাও , কারাে না কারাে কাছে বিরাট প্রয়ােজন আছে তার । তাকে আঁকড়ে ধরেই হয়তাে কোনাে দুঃখী মানুষ খুঁজে পাবে নতুন জীবনের আলাে । নতুন করে শুরু হবে জীবনের ছন্দ ।
সফলতা পেতে হলে অনেক ব্যর্থতার কাটা মাড়িয়েই সেখানে পৌছুতে হয় ।
‘ কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমলতুলিতে
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয়কি সহিতে ?
Motivational Speech Real Life Success Story :- এটা জয়ন্তী চক্রবর্তী এর লেখা একটি প্রাগথন । এখানে শুরু করবো কিছু Succesfull মানুষদের জীবনী নিয়ে । তারা কিভাবে সংগ্রাম করে জীবনে Success পেয়েছে ।হয়তো অন্য কেউ হলে হার মেনে যেত জীবনের কাছে । তবু ও তারা হার মেনে যায় নি । যার জন্য আজ তারা সফল ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন । যদি আজ তারা হার মেনে নিত ,হয়তো তারা ও হয়ে যেত অসফল ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন । জীবনে কঠিন সময়ে ও কিভাবে হাল না ছেড়ে এগিয়ে গেছে লক্ষ্যের দিকে । হয়তো এটা পড়ে অনেক নিরাশাগ্রস্থ মানুষদের একটু হলে ও মনে আশা জেগে যাবে । এগিয়ে যেতে পারবে নিজের লক্ষ্যে । যদি এগুলো পড়ে একটু ও আশাহত জীবনে নতুন করে জ্বলে ওঠে আশার আলো , যদি একটি ও প্রাণ অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায় , তবে আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো ।
Story গুলো আমার এই Site এই পর পর পেয়ে যাবে । Success Story এর যে Level টা আছে ওখানেই ।
Thank You So Much
0 Comments: