টমাস আলভা এডিসন
টমাস আলভা এডিসন আজ আমাদের এই আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের দান ছড়ানাে চারিদিকে । পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানা বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের ভূতটাকে নিজের নিজের বুদ্ধির ফাদে ধরে নিজের নিজের পছন্দমতাে নানা কাজ করিয়ে নিয়েছেন । এঁদের মধ্যে টমাস আলভা এডিসন নামের এক আমেরিকান বিজ্ঞানীর নাম বােধহয় সবার আগেই উচ্চারণ করতে হয় কারণ তিনি দু - একটা নয়- বিজ্ঞানভূতের ঘাড়ে ধরে একসঙ্গে একগাদা যন্ত্রপাতি তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন । যেমন , চলচ্চিত্র ,লাইট বাল্ব , গ্রামাফোন , কাইনােটোস্কোপ , ইলেকট্রিপ পেন ইত্যাদি প্রায় ১৩০০ টিরও বেশি আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট নিয়েছিলেন আলভা এডিসন । আজ আমরা যা দিয়ে প্রতিদিন কাজকর্ম করি তার বেশির ভাগই এডিসনের আবিষ্কার ।
অথচ শুনলে কেউ কি বিশ্বাস করবে স্কুল থেকে এই এডিসনকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তার শিক্ষিকারা । কারণ ছােটোবেলায় মােটেই ভালাে ছেলে ছিলেন না এডিসন । দরিদ্র পিতা স্যামুয়েল এডিসন ও মা ন্যান্সি ইলিয়ট এডিসনের সপ্তম সন্তান এডিসন ছােটোবেলায় মােটেই কোনাে বিশেষত্বের পরিচয় দেননি । তার কানে কিছু খুঁত থাকার জন্য ক্লাশের পড়াশােনা , শিক্ষিকাদের কথাবার্তা শুনতে তার খুব অসুবিধা হত । তাই তারা কোনাে প্রশ্ন করলে তিনি তাঁর কোনাে সদুত্তর দিতে পারতেন না । চুপ করে বােকার মতাে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন শুধু । শিক্ষিকারা রাগ করে এডিসনকে বলতেন অপদার্থ , পচা ডিম । সব ক্লাসেই দাঁড়িয়ে থাকতেন বলে শিক্ষিকারা তাকে কোনাে পড়াই আর জিজ্ঞেস করতেন না । বছরের পর বছর , একই ক্লাসে , একই কোণে চুপচাপ বসে বসেই কেটে যেত আলভা এডিসনের শৈশবের দিনগুলাে । স্কুলে যেতে একটুও ভালাে লাগত । ছুতােয় নাতায় স্কুল কামাই করে ঘরে বসে থাকতেন তিনি । সমবয়সী শিশুরা তাকে খেলায় সঙ্গে নিত না । তাকে দেখলে ব্যঙ্গ , বিদ্রুপ করত । একলা একঘরে হয়ে সর্বদা মনমরা হয়ে থাকত ছেলেটা । এইসব দেখে মার মন কেঁদে উঠতাে ।
এদিকে স্কুল থেকেও সমানে আসছে অনুযােগের পর অনুযােগ , পড়াশােনায় মন নেই । শুধু বাইরে তাকিয়ে থাকে , কোনাে কিছু বুঝতে পারে না । এসব কমপ্লেন শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা হয়ে গেল ন্যান্সির । শেষপর্যন্ত বিরক্ত হয়ে তিনি স্কুল ছাড়িয়ে দিলেন । আলভা এডিসন মাত্র ৯ বছর বয়সেই স্কুলের পড়াশােনায় ইতি টেনে ঘরে চলে এলেন ।
আসলে ন্যান্সি বুঝতে পেরেছিলেন আলভা এডিসন এক বিশেষ ধরনের শিশু । বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া শিক্ষায় এদের মনের বিকাশ ঘটে না । চিন্তা ও কাজকর্মের স্বাধীনতা পেলে এই ধরনের বিশেষ স্বভাবের শিশুরা অনেক সময় আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে । সাধারণত এইসব অন্তর্মুখী শিশুরা হয় অলৌকিক প্রতিভাসম্পন্ন । এক্কেবারে আলাদা , মৌলিক চিন্তাভাবনা করে বলেই সাধারণের থেকে তারা একটু আলাদা । শিশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের বিশেষত্ব বা লণকে বলে ডিসলেক্সিয়া ( disexsia ) ।
বিশ্ববাসীর সৌভাগ্য যে ন্যান্সি এডিসন তার সন্তানকে সঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন । স্কুল ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকার সময় গাদা গাদা বইপত্র পড়তে শুরু করে দিলেন এডিসন । যখন যা হাতের কাছে পেতেন গোগ্রাসে পড়ে ফেলতেন । ফলে মাত্র বছর দশেক বয়সের মধ্যেই প্রচুর সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হয়ে উঠলেন তিনি । এছাড়াও ছিলেন বাবা - মা । যখনি মনে কোনাে বিষয়ে কোনাে প্রশ্ন জাগত এডিসন বাবা মা - কে প্রশ্ন করতেন । যতক্ষণ না সম্পূর্ণ তৃপ্ত হতেন ততক্ষণ প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে জেরবার করে তুলতেন মা - বাবাকে । তারাও বিরক্ত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে ধীরে ধীরে তার প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাব দিতেন । এভাবেই এডিসন ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলেন নিজস্ব পথে , জ্ঞানবিজ্ঞানের মহাতীর্থের দিকে ।
একটু বয়স বাড়তেই এডিসনের মনে জ্ঞানতৃষ্ণা আরাে গভীর হল । তার মনে হল বইতে যে সব কথা লেখা আছে- মা মুখে যা যা বলেন— সবই যে সত্যি তার প্রমাণ কি ? প্রমাণ পেতে হলে চাই পরীক্ষাগার বা ল্যাবরেটরি । কিন্তু স্কুলের পাড়া মাড়ায় নি যে ছেলে , সে ল্যাবরেটরি কোথায় পাবে ?
তাই বলে হাল ছাড়লেন না এডিসন । এখান ওখান থেকে এটা সেটা যােগাড় যন্ত্র করে এনে নিজের বাড়িতেই একটা ছােটোখাটো গবেষণাগার গড়ে তুললেন এডিসন । দিন নেই , রাত নেই সেখানেই পড়ে থাকেন এডিসন । নিজের খেয়ালখুশি মতাে পরীক্ষানিরীক্ষা করে যান তার সাধের এই কেমিস্ট্রি ল্যাবে বসে । ধোঁয়ার কুণ্ডলী সহ বিচিত্র সব দুর্গন্ধ বের হতে থাকে ল্যাব থেকে । এক একদিন তাে এমন দুগন্ধি ছাড়তে থাকে যে এডিসনের মা ন্যান্সির প্রায় পাগল হবার যােগাড় । একদিন রেগেমেগে তিনি সাফ বলে দিলেন ‘ বাড়ির মধ্যে ও সব পাগলামাে চলবে না ।
কিন্তু হাল ছাড়লেন না এডিসন । গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রেলওয়ের ট্রেনবয় হিসাবে কাজ করা শুরু করেছিলেন । সেইসঙ্গে সমান তালে চলল গবেষণা । এবার আর তাড়া খাবার কোনাে ভয় নেই কারণ দাড়িয়ে থাকা পরিত্যক্ত একটি মালগাড়ির কামরায় কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তৈরি করে নিয়েছেন তার নতুন গবেষণাগার ।
শুধু কি গবেষণা ? এডিসনের বয়স যখন মাত্র ১২ বছর তখনি তিনি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করতে লাগলেন , নাম দিলেন গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক হেরাল্ড । ১২ বছরের সম্পাদক মশাই নিজেই স্টেশনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিক্রি করতেন এই সাপ্তাহিক । যারা কিনে পড়তেন তাদের কেউ বলতেন নেহাতই পাগুলে কাণ্ড , আবার কেউ কেউ বলতেন জিনিয়াস ।
এভাবেই কাটছিল । হঠাৎ একটা আশ্চর্য ঘটনায় পুরােপুরি পাল্টে গেল এডিসনের জীবনের ছক । সেদিনও অন্যান্য দিনের মতাে রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লাইন মেরামতির কাজে সাহায্য করছিল এডিসন । পাশের লাইনে দূর থেকে এগিয়ে আসছিল একটি দ্রুতগামী দূরপাল্লার ট্রেন । হঠাৎ এডিসনের নজরে পড়ল একটি ছােটো ছেলে লাইনের ঠিক মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলেছে । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ট্রেন এসে পড়বে । এক মুহূর্ত চিন্তা না করে এডিসন দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ছেলেটাকে দুহাতে তুলে নিয়ে লাইনের বাইরে সরে এলাে । মাত্র কয়েকটি মুহূর্তের জন্যে বেঁচে গেল দুটি প্রাণ কারণ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুতগামী ট্রেনটি চারিদিক কাপিয়ে ঝড়ের গতিতে পার হয়ে । গেল স্টেশন এলাকা ।
খবর পেয়ে দৌড়ে এলেন সদ্য রক্ষা পাওয়া শিশুটির বাবা । তিনি আর কেউ নন , স্বয়ং স্টেশন মাস্টার । এডিসনকে আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি । বললেন- ‘ আজ থেকে তােমার লেখাপড়া শেখার সব দায়িত্ব আমার ।
কিন্তু এডিসন যে লেখাপড়া শিখতে চান না । স্কুল কলেজের নামে গায়ে জ্বর আসে তার । তিনি চান যন্ত্রপাতি , কলকজার ভিতরে কী রহস্য লুকোনাে , সেগুলােকেই জেনে বুঝে নিতে , নিজে হাতে নেড়ে চেড়ে ।
তাই হল । এডিসনের অনুরােধে স্টেশন মাস্টার কেমন করে টেলিগ্রাফের সাহায্যে খবর দেওয়া নেওয়া করা হয় তার কলাকৌশল যত্ন করে শিখিয়ে দিলেন এডিসনকে । তখন তার বয়স মাত্র পনেরাে বছর । তখন অর্থাৎ ১৮৬২ থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত এই ৬ বছর ভ্রাম্যমান টেলিগ্রাফার হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করলেন এডিসন ।
টেলিগ্রাফ আরাে উন্নত করার তাগিদ থেকেই এডিসনের যাবতীয় আবিষ্কার । এইসময় তিনি এমন একটি টেলিগ্রাফিক রিপিটিং যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব হল । আরাে কিছুদিনের মধ্যেই আবিষ্কার করে ফেললেন ডুপ্লেক্স টেলিগ্রাফ ও ম্যাসেজ প্রিন্টার । এইসব আবিষ্কারের ফলে এডিসনের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল । অর্থাগমও হতে থাকল । প্রচুর । তখন টেলিগ্রাফের চাকরি ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে এডিসন পুরােপুরি আত্মনিয়ােগ করলেন আবিষ্কার করা আর সেই আবিষ্কারকে বাজারে চালু করার কাজে । এরপর আর পিছনে তাকাতে হয় নি । বিয়ে করে রীতিমতাে সংসারী হয়ে পাকাপাকিভাবে আবিষ্কারের কাজে আত্মনিয়ােগ করলেন টমাস আলভা এডিসন ।
সংসারের খরচপত্রের হিসাব রাখা তার ধাতে ছিল না । দিনরাত মশগুল হয়ে থাকতেন নতুন নতুন আবিষ্কারের চিন্তায় । নিজস্ব এক গবেষণাগার তৈরি করলেন । রেখে দিলেন দুজন সহকারী বিজ্ঞানীকে চার্লস ব্যাচেলর ও জন ক্ৰয়েশি । শুরু হল একের পর এক উদ্ভাবন । কার্বন বাটন ট্রান্সমিটার , টিন ফয়েল ফোনােগ্রাফ ইত্যাদি আবিষ্কার ও তার বাণিজ্যিক ব্যবহার এডিসনকে প্রচুর অর্থ ও সুনাম এনে দিল । ১৮৭০ সালে পত্তন করলেন এডিসন ইলেকট্রিক লাইন কোম্পানি । ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল তার আবিষ্কারের কথা । লােকে তার নাম দিল ‘ উইজার্ড অব মেনলাে পার্ক ’ | বা মেনলাে পার্কের যাদুকর । মেনলাে পার্কেই এডিসন তার বাবার অর্থসাহায্যে গড়ে তুলেছিলেন তার নিজস্ব স্বপ্নের গবেষণাগার । কেমন করে করলেন এই অসাধ্য সাধন ? স্কুল যার গায়ে সেঁটে দিয়েছিল addled ' অর্থাৎ ‘ পচা ’ - র তকমা সেই এক্কেবারে বাজে ছেলেটি কেমন করে হয়ে দাঁড়ালেন বিশ্বের আন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ?
শুধুমাত্র একাগ্রতার জোরে । শুধুমাত্র ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাসের জোরে । পৃথিবী যার ওপর সব রকম বিশ্বাস হারিয়েছে সে নিজে কিন্তু একটুও বিশ্বাস হারায় নি নিজের ওপর ।
তাই তাকেও হারতে হলাে না । জয়ী হলেন সব কাজে । শােনা যায় ইলেকট্রিক বালব আবিষ্কার করার সময় তিনি নাকি ৭০০ বার ব্যর্থ হয়েছিলেন । কোনাে একজন এ ব্যাপারে যখন তাকে প্রশ্ন । করল যে এতােবার ব্যর্থ হবার পর তার মনে কিরকম হতাশা এসেছিল ?
এডিসন হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন কৈ ? আমি তাে একবারও ব্যর্থ হইনি ? বরং বলতে পারেন ৭০০ টি সফল পরীক্ষায় ৭০০ টি ভুল পথকে চিহ্নিত করতে পেরেছি । I have not failed 700 times ... I have not failed once . I have successeded in proving that those 700 ways will not work .
' জীবনের প্রতি এই গভীর ইতিবাচক ( positive ) দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে কেউ কি কোনােদিন কোনােকিছুতে বিফল হয় ?
" God helps those
Who help themselves .
Thomas Alva Edison :- Thomas Alva Edison was an American inventor and bussinessman who has been described as America's greatest inventor . He developed many devices in fields such as electric power generation ,the incandescantlight bulb, mass communication , the phonograph, sound recordning , and motion picture.In his 84 years , he acquired astounding 1,093 patents . He was born Milan, Ohio, United States ( 11 February 1847 ) and died West Orange , New Jersey, United States ( 18 October 1931 ) .
0 Comments: