রাত্রি মেনন
আর একটা ছােট্ট গল্প শােনাই হার না মানার ।
২২ বছরের তরুণী রাত্রি , রাত্রি মেনন বি এ পাশ করার পর ইনকাম ট্যাক্সের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল এক দূরপাল্লার ট্রেনে চেপে । তীব্র গতি ছিল গাড়িটার । রাত্রি মাঝখানের প্যাসেজে দাঁড়িয়ে বেসিনে মুখ হাত ধুচ্ছিল । পাশেই খােলা দরজা । হঠাৎ কে বা কারা যেন এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল রাত্রিকে । কিছু বুঝে ওঠবার আগেই লােহার চাকায় গুড়িয়ে পিষ্ট হয়ে গেল রাত্রির ডান হাতখানা আর মেরুদণ্ডের হাড়খানা চৌচির হয়ে গেল ফেটে ।
মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল মেয়েটা । কিন্তু সহসা আবার আর একটা ট্রেনের গর্জনে জ্ঞান ফিরে এলাে তার । দেখল আবার আর একটা ট্রেন দৈত্যের মতাে ধেয়ে আসছে তার দিকে ওই একই লাইনের ওপর দিয়ে ।
প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগল রাত্রি কোনােমতে শরীরটাকে লাইনের ওপর থেকে একটুখানি সরিয়ে নিয়ে যেতে । কিন্তু এমনই দুর্ভাগ্য তার যে একচুলও নড়াতে পারল না সে নিজেকে আর ভয়ঙ্কর যন্ত্রদানব তার একখানি পা গুড়িয়ে দিয়ে চলে গেল ।
অর্ধমৃত অবস্থায় লাইনের ওপরই পড়েছিল রাত্রি মেননের ছিন্নভিন্ন দেহটা । কতােক্ষণ পর কে জানে একটা ইঞ্জিন চালিয়ে শান্টিংয়ে আনছিলেন এক ড্রাইভার । তারই প্রথম নজরে পড়ল । তিনি রাত্রিকে লাইন থেকে তুলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেন ।
ডাক্তাররা রাত্রির জীবনের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন । এমনকি তারা একথাও পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন যে যদিও বা কোনােমতে বাঁচেও , সারাজীবন রাত্রিকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে ।
ডাক্তারদের আলােচনা পৌঁছে গিয়েছিল রাত্রির কানে । মাত্র ২২ বছরের জীবনের তৃষ্ণায় ভরপুর এক তরুণী সে । সে কেন শুয়ে থাকতে যাবে সারাজীবন ? কতাে কাজ আছে তার করবার । পৃথিবী থেকে পাবার , পৃথিবীকে দেবার কতাে অফুরন্ত সম্ভাবনার ভাণ্ডার লুকিয়ে রয়েছে তার মধ্যে । সে কি সব ব্যর্থ হয়ে যাবে ?
না , হাল ছেড়ে দিলে চলবে না । মনকে শক্ত করল রাত্রি । ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করতে লাগল আমি বাঁচব , বাঁচব , বাঁচব ...। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষ যেমন করে বাঁচে ঠিক তেমন সসম্মানে , সানন্দে , স্বনির্ভরতায় ।
তীব্র ইচ্ছাশক্তির জোরে আশ্চর্য ফল ফলল রাত্রির জীবনে । অপারেশনের পর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এল সে ।
এরপর তার পায়ের সঙ্গে লাগিয়ে নেওয়া হল কাঠের এক নকল পা ও হাত । প্রথম প্রথম খুব যন্ত্রণা ও অসুবিধা হলেও প্রচণ্ড মনের জোরে ধীরে ধীরে রীতিমতাে সহজ হয়ে গেল তার এই কৃত্রিম হাত পা ব্যবহারের প্রণালী ।
এবার নেমে পড়ল শ্রুতি প্রতিযােগিতার লড়াইয়ে । পর পর তিনটি পরীক্ষা দিল সে ইনকাম ট্যাক্স - এ এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অধিকার করে নিল । বর্তমানে রাত্রি ইনকাম ট্যাক্সের ইন্সপেক্টর হিসাবে ভারত সরকারের অধীনে কর্মরত ।
পৃথিবীর কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে সে তার যােগ্যতা । সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে মনের জোর হল এমন এক আশ্চর্য অলৌকিক শক্তি যা যে কোনাে পরিস্থিতিতে , যে কোনাে মুহূর্তে যে কোনাে মিরাকল ঘটিয়ে দিতে পারে । যেমন ঘটেছে তার নিজের জীবনে ।
Adversity is the diamond dust that heaven polishes its jew els with
- Leighton
0 Comments: