তোমার লেখা গল্প বা কবিতা আমাদের Website এ প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারো আমাদের সাথে, আমাদের Email Id, "lovejunction506@gmail.com." আমরা তোমার Email এর অপেক্ষায় আছি । ততক্ষনে এই কবিতাটি তোমার জন্য ।
উত্তমকুমার
There can be no rainbow without a cloud and a storm .
মহানায়ক উত্তমকুমার শুধু আপামর বাঙালির চিরদিনের স্বপ্নের নায়ক নন , তিনি মহানায়ক । বাংলা সিনেমার ১০০ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য নায়ক এসেছেন কিন্তু মহানায়ক একজনই । মানুষের উজাড় করা ভালােবাসা যেমন পেয়েছিলেন উত্তমকুমার তেমনি নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে নিঃশেষে নিঙড়ে দিয়েছিলেন সেই অকুণ্ঠ ভালােবাসার ঋণশােধ করতে । আজও উত্তমকুমার নামের ম্যাজিকে আপ্লুত মানুষ , মহানায়কের বিকল্প খুঁজে পায় না । কিন্তু কি মূল্য দিতে হয়েছে কতােখানি অপমান , লাঞ্ছনা আর উপেক্ষার কাঁটা বিছানাে পথ মাড়িয়ে , কতােটা রক্তাক্ত পায়ে তিনি উঠে এসেছিলেন এই সাফল্যের চূড়ায়— সে এক আশ্চর্য ইতিহাস , চিরকালের হার না মানা মানুষের অলৌকিক ধৈৰ্য্য আর সাধনার দিনলিপি ।
উত্তমকুমারের পিতৃদত্ত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় । বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মেট্রো সিনেমার এক সাধারণ অপারেটর । তিন ভাই অরুণ , বরুণ আর তরুণের মধ্যে গভীর ভালােবাসা । অকালমৃতা দিদি পুতুলের জন্যে মনের মধ্যে জমে ওঠে মেঘ । সেই দিদি বলত— ‘ ভাই তুই যাত্রা করবি , নাটক করবি , বেশ মজা হবে ।
অরুণের জন্মসূত্রেই অভিনয়ের উত্তরাধিকার । বাবা জ্যাঠা পাড়ার ক্লাব ‘ সুহৃদ সমাজে ’ নিয়মিত অভিনয় করেন । শিশু অরুণ সন্ধে বেলা বাড়ির চোখ এড়িয়ে ক্লাবের জানলায় উকি মেরে দেখতেন রিহার্সাল । তারপর বাড়িতে এসে অবিকল তা নকল করে শােনাতেন । মা দিদি আর ভায়েরা অবাক হয়ে যেতাে শুনে । স্কুলে পড়ার সময়েও ছােটো গয়াসুরের ভূমিকায় অভিনয় করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন । হেডমাস্টারমশাই নিজে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । পেলেন দু - দুখানি মেডেল । সেদিন আনন্দে আপ্লুত শিশুশিল্পী মেকাপ না তুলেই স্কুল থেকে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে এসে মায়ের পায়ে প্রণাম করেছিলেন । মা চপলা দেবী সেদিন প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছিলেন ছেলেকে ।
ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই প্রবলভাবে অরুণের মধ্যে চেপে বসল অভিনেতা হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা । পাড়ার স্টেজে নাটক কিংবা যাত্রা নয় , একেবারে রূপােলি পর্দার নায়ক হবার স্বপ্নে রীতিমতাে বিভাের হয়ে উঠলেন তিনি । চেনা পরিচিত যে কোনাে লােকের সঙ্গে সিনেমা বা রঙ্গমঞ্চের কোনােরকম যােগাযােগের কথা জানতে পারলেই ছুটে যেতেন যে কোনাে চরিত্রে ছােটো একটা সুযােগ পাবার আশায় । বন্ধুরা একদিন বলল— গান জানলে নায়কের ভূমিকায় সুযােগ পেতে সুবিধা হয় কারণ সে সময়ে প্লেব্যাকের তত চল হয়নি । নায়ক নায়িকারা নিজেদের গলাতেই গান গাইতেন । অরুণ নামের স্বপ্নসন্ধানী ছেলেটা এসব কথা ভেবেই ভর্তি হল নাইট কলেজে । সারাদিন সে সিনেমা থিয়েটার জগতের জানা অজানা সবার দোরে দোরে ধর্না দিয়ে বেড়ায় আর সন্ধ্যায় করে কলেজ । এরই ফাকে নিয়মিত চলে গান শেখা আর নায়ক জীবনের প্রস্তুতি । গান , সাঁতার , ব্যায়ামাগারে গিয়ে শরীরচর্চা , ভলিবল খেলা , হিন্দি উর্দু শেখা- সবকিছুর লক্ষ্য একটাই— নায়ক হতে হবে । শিশির ভাদুড়ি তখন বাংলার বিখ্যাত নটসম্রাট । মঞ্চকাপানাে অভিনয় তার । অরুণ শিক্ষার জন্য তাকেই গুরু মানলেন । যখনই যেখানে শিশির ভাদুড়ির অভিনয়ের খবর পেতেন অমনি ছুটে যেতেন । পরম নিষ্ঠাভরে একমনে দেখতেন । উপভােগ নয় শিক্ষা । শুধু অভিনয় কলা শিক্ষার জন্যেই তিনি যাত্রা , নাটক আর সিনেমার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন ।
শুধু দেখা আর শেখা নয়— হাতে কলমে অভিনয় চালিয়ে যেতে না পারলে অভিনেতা হওয়া যায় না । তাই কলেজের পড়াশােনার ফাঁকেই নিজস্ব থিয়েটারের দল গড়ে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকলেন । আগামী দিনের উত্তমকুমার । এভাবেই একদিন বি কম পাস করলেন । কিন্তু বাড়ির বড়াে ছেলে হিসাবে বৃহৎ পরিবারের দায় এসে চাপল তার কাধে । নায়ক হবার স্বপ্ন মনে হল জীবন থেকে চিরতরে বুঝি হারিয়েই গেল । কিন্তু পাদপ্রদীপের আলাের নেশায় রক্ত নেচেছে যাঁর , সাধারণের মতাে দশটা পাঁচটার চাকুরে জীবন সে কি মেনে নিতে পারে ? সেদিনের অরুণ চট্টোপাধ্যায়ও মেনে নিতে পারেন নি । তবু বাবা , মা আর ছােটো ভাইদুটির মুখ চেয়ে পাের্ট কমিশনে সামান্য এক কেরাণীর চাকরিতেই বহাল হয়ে গেলেন তিনি , মাসিক ২৭৫ টাকা মাইনের এই কেরাণীর জীবনই তার ভবিতব্য বলে মেনে নিলেন । সাংসারিক দায়বদ্ধতার কাছে । নতি স্বীকার করলেন বটে কিন্তু হাল ছাড়লেন না ।
দশটা পাঁচটা অফিস করেও নায়ক হবার স্বপ্নটাকে বুকের মধ্যে পুষে রাখলেন সযত্নে । নিয়মিত চলল সঙ্গীত চর্চা আর শরীর চর্চা । অব্যাহত রইল সুযােগের সন্ধানে চেনা পরিচিত মহলে অনুসন্ধান । এমনিভাবেই একদিন , তখন বছর কুড়ি বয়স তার হঠাৎ একদিন সুযােগ এসে গেল । ‘ মায়াডাের ’ নামের একটি সিনেমায় ছােট্ট একটা রােল । একস্ট্রা হিসেবে । মহানন্দে সেই ভূমিকাতেই নিজেকে উজাড় করে দিলেন অরুণ চট্টোপাধ্যায় নামের নবাগত সেই অভিনেতা । কিন্তু সেই ছবি মুক্তি পেল । না কোনাে অজ্ঞাত কারণে । দুঃখ পেলেন ঠিকই কিন্তু ভেঙে পড়লেন না অরুণ নামের সেই তরুণ যুবক । তখন গানও তিনি ভালাে গাইছেন ।পাড়ায় পাড়ায় ফাংশানে ডাক আসছে , কিন্তু সবই বিনা পারিশ্রমিকে । বড়াে জায়গায় সুযােগ পাবার জন্য উদ্যোক্তাদের কতাে অনুরােধ উপরােধ করেছেন । এমনও হয়েছে সুযােগ দেবার নাম করে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে । একের পর এক নামী শিল্পী গেয়ে গেয়ে চলে গেছেন আর অরুণকে বলা হয়েছে । এরপরই আপনার । শেষপর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে ভােরবেলা শুকনাে মুখে বাড়ি ফিরে এসেছেন একরাশ হতাশা বুকে নিয়ে । তবুও হাল ছাড়েন নি । কারণ আত্মবিশ্বাসী অরুণ জানতাে যে জয় একদিন তার হবেই হবে ।
আরাে বছরখানেক ঘোরাঘুরির পর দ্বিতীয় সুযােগ এল । দৃষ্টিদান ’ ছবিতে নায়কের ছেলেবেলার ভূমিকায় । এ ছবি পুরাে ফ্লপ করল । কিন্তু তার চেয়েও বেশি আঘাত অরুণ পেলেন , চরিত্রলিপিতে নিজের নাম কোথাও নেই দেখে মনকে প্রবােধ দিলেন এই বলে যে যেদিন সত্যি সত্যি যােগ্য হয়ে উঠবেন সেদিন তারই নাম থাকবে সবার উপরে ।
পরের বছর ১৯৪৯ ‘ কামনা নামের নতুন একটা ছবিতে সুযােগ পেলেন । কমদামী পরিচালকের কম বাজেটের ছবি । তবু পরিচালক রাজী হলেন একটা শর্তে । পিতৃদত্ত নামটিকে বদলে ফেলতে হবে কারণ অরুণ নামটি বােঝাই যাচ্ছে মােটেই তার পক্ষে শুভ ( লাকি ) নয় । জন্মকালে মায়ের বাবা নাম রেখেছিলেন উত্তম । কামনা ’ ছবিতে নাম হল তার উত্তম চ্যাটার্জী । কিন্তু না , সমস্ত আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে উত্তম চ্যাটার্জির এই কামনা ছবিও ফ্লপ করল ।
পরপর তিন বছরে তিনটি ছবি । তিনটিই ফ্লপ । কোনাে পরিচালকই আর রাজী হতে চান না উত্তম চ্যাটার্জীকে নিয়ে ছবি করতে । কিন্তু উত্তমকুমার যে নাছােড়বান্দা । তাছাড়া ততােদিনে বিয়ে করে বসেছেন । পিতা হয়েছেন একটি সন্তানের । ২৭৫ টাকার কেরানী কিছুটা বিকল্প উপার্জনের কথা ভেবেও মরীয়া হয়ে উঠেছেন কোনাে একটা সিনেমায় যে কোনাে রােল পাবার জন্যে । এমন সময় একদিন অফিসে বসেই খবর পেলেন ‘ মর্যাদা ’ নামের একটা ছবি হতে চলেছে যার নায়ক প্রদীপকুমার । কোনাে কারণে প্রদীপকুমার ‘ মর্যাদায় অভিনয় করতে রাজী হলেন না ।খবরটা পাওয়া মাত্র উত্তম ছুটলেন পরিচালক সরােজ মুখার্জীর কাছে । সরােজ মুখার্জী রাজী হলেন তাকে নিতে এবং নায়ক চরিত্রেই । শুধু বাধা একটাই । বার বার ফ্লপ হয় যার ছবি— তাকে নায়ক করলে প্রযােজক কেন অর্থ ঢালবেন ? তাই নামটা আবার বদলাতে হবে । অগত্যা এবার তার নাম হল অরূপকুমার ।
কিন্তু নাঃ ! অরূপকুমার অভিনীত মর্যাদা ও ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করল না । দু - দুবার নাম পরিবর্তন , প্রাণপণ সাধনা , সবরকমের চেষ্টা সব । কিছু ব্যর্থ করে দিয়ে আবারও ফ্লপ করল ছবি । নায়কের ভূমিকায় । উত্তমকুমার ব্যর্থ প্রমাণিত হলেন ।
বার বার পরাজয় । কিন্তু তবুও হাল ছাড়লেন না তিনি । সম্ভবত প্রযােজক সংস্থা এম পি স্টুডিও উত্তমের অভিনয় ক্ষমতায় লক্ষ্য করেছিলেন আগামী দিনের মহানায়ককে । তারা তাদের পরের ছবি ‘ ওরেযাত্রী ’ - তে নবাগত এই নায়ককে দ্বিতীয় সুযােগ দিতে চাইলেন । ওই একই বছর , অর্থাৎ ১৯৫১ সালে তিনটি ছবিতে সুযােগ পেলেন উত্তম । কিন্তু না ! একটি ছবিও হিট করল না । অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার কোনাে সম্ভাবনাই আর অবশিষ্ট রইল না । তার নাম হয়ে গেল । ফ্লপ মাস্টার জেনারেল । এর মধ্যে সহযাত্রী ’ ছবিতে তার নতুন নাম আবার পাল্টে হয়েছে উত্তমকুমার ।
কিন্তু তাতেও কিছু হল না । এতােদিনের লালিত সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল । ঘরে বাইরে , আত্মীয় , বন্ধু , পরিচিত মহলে , অফিসে - প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ আর বিদ্রুপের তীর নির্ভুল ভাবে বিদ্ধ করতে লাগল তাকে । তবু না । উত্তমকুমার হবেন যিনি ভবিষ্যতে তাকে তাে ভেঙে পড়লে চলবে না ।
যথারীতি অফিসের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে ব্যর্থতার গ্লানি ভুলতে চেষ্টা করতে লাগলেন । তবে , অব্যাহত রইল সুযােগের সন্ধান করে যাওয়া । পরের বছরই ‘ সঞ্জীবনী ’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় সুযােগ পেলেন । এবার তার নাম উত্তমকুমার । অরূপকুমার বদলে হয়েছিল । উত্তমকুমার সহযাত্রী ছবি থেকেই । কিন্তু তাতে প্রযােজক ভুললেও দর্শক ভুলল না । এবারও ছবি হল ফ্লপ । বিখ্যাত নায়িকা ও নামী দামী স্টার সমন্বয়ে তৈরি ছবিও ফ্লপ করল দর্শকদের নিরপেক্ষ বিচারে । অরুণ চ্যাটার্জী থেকে উত্তম চ্যাটার্জী , তা থেকে অরূপকুমার এবং অবশেষে উত্তমকুমার ।এতাে ভাবে নিজেকে বদলে ফেলেও সাফল্যের মুখ দেখতে পেলেন না মহানায়ক উত্তমকুমার ।
সাধারণত যারা হাল ছেড়ে দিয়ে জীবনের খেলার মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান তাঁর জানতেই পারেন না যে তীরের একেবারে কাছ থেকেই ফিরে গেলেন তারা । উত্তমকুমার কিন্তু এই ভুলটা করেন নি । এইসময় বসু পরিবার নামে একটা ছবি করার কথা চলছিল । পরিচালক তাঁর পছন্দের নায়কদের ডেট পাচ্ছিলেন না , কারণ তারা নামী দামী ও ব্যস্ত নায়ক । উত্তম মনে সাহস এনে পরিচালক নির্মল দে - কে ধরে পড়লেন তাকে অন্তত একটা সুযােগ দেওয়া হােক ।
উত্তমের মধুর ব্যবহার , আত্মবিশ্বাসে ভরপুর কথাবার্তা ও প্রচণ্ড নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়ের সম্মান দিলেন তারা । এই ছবিতেও নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করলেন উত্তমকুমার । সবাইকে চমকে দিয়ে বসু পরিবার ’ হিট করে গেল । প্রতিটি দর্শকের মুখে মুখে ফিরতে লাগল উত্তমকুমারের নাম । পত্রপত্রিকা উত্তমকুমারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠল একেবারে ।
এতােদিনে যে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উত্তমকুমার , সেটা সত্যিই একটা জীবনপণ সংগ্রাম । ৬ বছরে মােট ৯ টা সিনেমা ফ্লপ করার পরও মনের জোর বজায় রেখে নিজের সবটুকু ক্ষমতা নিঙড়ে দিয়ে অভিনয় করার মধ্যে যে অদম্য মনােবল ছিল তাতেই শেষপর্যন্ত এলাে সাফল্য ।
‘ বসু পরিবারের ' পরিচালক সাহস করে ভূমিকা লিপিতে ‘ ফ্লপ মাস্টার ’ উত্তমকুমারের নাম দেননি । কিন্তু পরবর্তী ছবি ‘ সাড়ে চুয়াত্তর ’ ছবিতে বড়াে বড়াে করে ছাপানাে হল নায়কের ভূমিকায় উত্তমকুমারের নাম । নায়িকা নবাগত সুচিত্রা সেন ।
এ ছবিতে সদ্য সফল নায়ক উত্তমকুমার প্রাণ ঢেলে অভিনয় করলেন । নবাগতা নায়িকার বিপরীতে কাজ করতে গিয়ে সব রকমের আড়ষ্টতাও কেটে গিয়েছিল । সম্পূর্ণ স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল হয়ে উঠলেন তিনি ‘ সাড়ে চুয়াত্তর ’ ছবিতে । জনপ্রিয়তায় সাড়ে চুয়াত্তর ’ ইতিহাস গড়ে তুলল । এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি । ১৯৮০ পর্যন্ত দাপটে অভিনয় করে গেছেন । রাষ্ট্রপতি পুরস্কার , ভারত সরকারের ভরত পুরস্কার , রাজ্য সরকারের পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন । বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছেন । কিন্তু সাফল্যে মাথা ঘুরে যায়নি তার । নিজের অতীত মনে রেখেই চিরদিন তিনি নবাগতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন । দুঃস্থ শিল্পীর সাহায্যে দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি ।
দীর্ঘ ৩৩ বছরের অভিনয় জীবনে ২০০ টি ছবিতে উত্তমকুমার প্রবল দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন । বাংলা চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ১০০ বছরের দূরত্বে একাই । তার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ একটাই— নিরলস অধ্যবসায় । প্রতিভা অনেকেরই থাকে । কিন্তু ধৈৰ্য্য আর অধ্যবসায়ের অভাবে , প্রতিকূলতার ঝড়ে তা অঙ্কুরেই শুকিয়ে যায় । উত্তমকুমার কখনাে ধৈৰ্য্য হারান নি । হতাশার সমুদ্রে বসেও হাল ছাড়েন নি । প্রতিটি চরিত্রকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে বােঝাবার চেষ্টা করেছেন । চরিত্রটি যাতে নিখুঁতভাবে রূপায়ণ করা যায় তার জন্য দিনের পর দিন সেই চরিত্রের খুঁটিনাটি প্রতিটি ব্যাপার নিয়ে ভেবে গেছেন । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজেই নিজেকে তালিম দিয়েছেন । সপ্তপদী ’ করার সময় তিনি দিনরাত শেক্সপীয়র আবৃত্তি করতেন । অথচ জানতেন ওথেলাের ওই অংশটুকু তিনি নয় , উৎপল দত্তকে দিয়ে বলানাে হবে । তবু শুধুমাত্র যাতে নিখুঁত অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে এইজন্যে তিনি এতাে পরিশ্রম করতেন । কোনাে ছবি রিলিজ হলেই হলের আশেপাশে । গােপনে ঘােরাঘুরি করতেন আর শুনে নিতেন দর্শকদের মতামত । পত্রপত্রিকার ফিল্ম সমালােচনার বিভাগের প্রতিটি লাইন মন দিয়ে পড়তেন । নিজের দোষত্রুটি পরের ঘাড়ে না চাপিয়ে নিজেই নিতেন ও তা সংশােধনের চেষ্টা করতেন নিজে নিজেই ।এসবই তাকে একদিন চূড়ান্ত সাফল্য এনে দিয়েছিল ।
শুধু শিল্পী হিসাবে নয় , মানুষ হিসাবেও উত্তমকুমার ছিলেন এতােবড়াে যে কোনাে বিশেষণ দিয়েই সেই বিশালত্বকে প্রকাশ করা যায় না ।
আসলে , একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে অনেক বাধার পাহাড় পার হয়ে । অনেক আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে তবেই খনির সােনা হয় । খাঁটি সােনা । আজকে যারা অভিনয় জগতে নাম করতে চায় , তারা শুধু রূপােলি পর্দার রূপটুকুই দেখতে পায় তার আড়ালে যে বিপুল সংগ্রাম প্রচ্ছন্ন থাকে , তাকে কেউ মেনে নিতে চায় না । তাই ব্যর্থতাকে তারা । মেনে নিতে পারে না । উত্তমকুমারের জীবন ও আদর্শ সামনে রাখলে এদের জীবনের সব ব্যর্থতাই একদিন সফলতার সােপান হয়ে উঠতে পারবে নিঃসন্দেহে ।
যে সয় সে রয় , যে না সয় , সে নাশ হয় ।
–ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
Success Story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti. This story revolves around Uttam Kumar like Uttam Kumar biography. We are collected this type success story that revive your lost mind. You get more success story on Bengali in our website and I think all success story will take place in your mind. So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story. Thank you so much.