উইলিয়াম শেক্সপীয়রের সফলতার কাহিনী | William Shakespeare success story |Success Story In Bengali

Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around William Shakespeare.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                          

  উইলিয়াম শেক্সপীয়র 

     মহাকবি শেক্সপীয়রের নাম কে না জানে ! আজ তার লেখা নাটকগুলি পৃথিবীর সব দেশে অভিনীত হয় । স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাে বটেই সাধারণ পাঠকও তাঁর নাটকগুলি মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়ে । মানুষের বিচিত্র চরিত্র আর মানুষের মনের অতল রহস্যের যে ছবি তিনি তুলে ধরেছেন তার নাটকে , আজও বিশ্বসাহিত্যে তার তুলনা নেই । তার লেখা সংলাপগুলাে প্রবাদ প্রবচন হয়ে আজও শিক্ষিত মানুষদের মুখে মুখে ফেরে । 

     এতাে বড়াে যে মানুষটি , এই চারশাে বছর ধরে মানুষ যাঁকে এতাে সম্মান দিয়েছে , দিয়েছে এতাে ভালােবাসা , সে মানুষটার নিজের জীবন কিন্তু মােটেই খুব সুখের ছিল না । প্রদীপ যেমন নিজে পুড়ে আলাে ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে , শেক্সপীয়রও তেমনি নিজের জীবনের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের অভিজ্ঞতা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন তার সৃষ্টির ঘর । তাই বােধহয় তা এমন অনবদ্য , এতাে অতুলনীয় ।

      ইংল্যান্ডের স্টাটফোর্ড গ্রামের জন নামে এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলে উইলিয়ামের ছােটোবেলা থেকেই পড়াশােনায় মন নেই । বহু চেষ্টার পর শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে উইলিয়ামের বাবা তাকে ব্যবসায় নামিয়ে দিলেন । পড়াশােনায় ইতি টেনে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সেই উইলিয়ম নেমে পড়লেন ব্যবসায় । কিন্তু তাতেই বা মন বসে কই ! মন যেন সবসময় উড়ু উড়ু । কি যেন সব ভাবেন ! কাজে কেবলই ভুল হয় । পয়সাকড়ির হিসাব দিতে পারেন না ঠিকমতাে । উইলিয়ামের সর্বদাই মনে হতাে- “ কেন এসব ফালতু কাজ করে সময় নষ্ট করছি ? আমার যে কথা ছিল অনেক বড়াে কাজ করার । ' 

       কিছুই ভালাে লাগে না । এমনি সময় হঠাৎই বিয়ে করে বসলেন । পাত্রী শুধু যে তার চেয়ে আট বছরের বড়াে— তাই নয় বেশ কয়েকটি ছেলেমেয়েরও তিনি মা । এইরকম বকা ছেলেকে কোন অভিভাবকই বা বাবা বাছা বলে আদর করবেন ? বাড়ি থেকে উইলিয়ামকে তাড়িয়ে দেওয়া হল । 

       নব বিবাহিতা স্ত্রী এবং কতকগুলি নাবালক বাচ্চা কাচ্চা সমেত পথে এসে দাঁড়ালেন শেক্সপীয়র । পরিচিত আত্মীয়বন্ধুরা ভাবল অপদার্থ অপরিণামদর্শী ছোঁড়াটাকে এবার বােধহয় ভিক্ষে করতে হবে নয়তাে চুরি ডাকাতি । কিন্তু উইলিয়াম হার মানলেন না । হাল ছাড়ালেন না । 

       কিছুদিন উইলিয়াম পথে পথে ঘুরলেন । পেটের দায়ে যখন যে কাজ পান তাই করেন । কিন্তু কোনাে কাজেই তিনি বেশিদিন টিকে থাকতে পারেন না । 

       এর ওপরে এল আর এক বিপদ । তখন উইলিয়াম কাজ করছিলেন । এক মস্ত জমিদারের বাগান দেখাশােনার । হঠাৎ একদিন কিভাবে যেন ওই বাগানের একটি হরিণ কোথায় হারিয়ে গেল । নিশ্চয় এ পাহারাদারেরই কাজ অথবা তার অন্যমনস্কতার সুযােগে কেউ সেটিকে চুরি করেছে । যাই হােক , সব দোষ কিন্তু গিয়ে পড়ল উইলিয়ামের ওপর । জমিদার পুলিশে খবর দিলেন । বিচারে বেত্রাঘাত ও হাজতবাসের শাস্তি হলো তার ।

        উইলিয়াম রাতের অন্ধকারে জেল থেকে পালালেন । তারপর আর একটি মুহূর্তও দেরী না করে সপরিবারে পালিয়ে এলেন লন্ডন শহরে । 

       লন্ডন শহর ধনীদের জায়গা । উইলিয়াম লেখাপড়া কিছুই শেখেননি । হাতের কাজকর্ম বলতেও কিছু জানেন না । এতােবড় শহরে কি করে এতােগুলি মানুষের অন্নসংস্থান হবে ? 

      হঠাৎ একটা সুযােগ এসে গেল । তখনকার দিনে গ্লোব ছিল লন্ডনের নাম করা থিয়েটার হল । সেখানে শহরের সব নামীদামী বুদ্ধিজীবী মানুষেরা আসতেন নাটক দেখতে । একদিন নাট্যশালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে উইলিয়াম দেখলেন এক ভদ্রলােক কাউকে যেন খুঁজছেন । উইলি কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলন স্যার , আপনি কি কিছু খুঁজছেন ?

     -হ্যা , আমি একটি ছেলে খুঁজছি যে আমার ঘােড়ার গাড়ির এই ঘােড়াগুলিকে কিছুক্ষণ দেখাশােনা করবে । বেশিক্ষণ নয় , মাত্র ঘণ্টা তিনেক যতক্ষণ আমি নাটক দেখতে ব্যস্ত থাকব । 

      উইলিয়াম এগিয়ে এসে কাজটি নিলেন । ঘণ্টা তিনেক বাদে পারিশ্রমিকও পেলেন ভালােই । এরপর প্রতিদিনই আসতে লাগলেন সেখানে এবং ক্রমে থিয়েটারের অশ্বরক্ষকের কাজটি তার বাঁধা হয়ে গেল ।

      খুবই তুচ্ছ কাজ । কিন্তু কে জানত _এই অশ্বশালা থেকেই একদিন উঠে আসবে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার ? 

       উইলিয়ামের কাজে ও ভদ্র আচরণে থিয়েটারের মালিক তাঁর প্রতি খুব সদয় ছিলেন । একদিন কি কারণে য়েন থিয়েটারের জনৈক অভিনেতা উপস্থিত হতে পারলেন না । ওই চরিত্রে উইলিয়ামকে খুব সুন্দর মানাবে । এই ভেবে তক্ষুনি ডাক পড়ল তার । সেদিনের অভিনয় সুন্দরভাবে উৎরে দিলেন তিনি । এরপর থেকে প্রায়ই ডাক পড়তে লাগল তার । ধীরে ধীরে উইলিয়াম হয়ে গেলেন পেশাদার রঙ্গমঞ্চের নিয়মিত অভিনেতা । সুপ্ত অভিনয় প্রতিভা সামান্য সুযােগ পেয়েই ফুটে উঠতে লাগত । 

       কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই শেক্সপীয়রের নজরে পড়ল যে অভিনেতাদের চেয়ে নাট্যকার টাকা পান অনেক বেশি । তার এখন টাকার দরকার । প্রচুর টাকা । তাই অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লেখাতেও মন দিলেন তিনি । 

       সারা সন্ধ্যে অভিনয় করে বাড়ি ফিরে এসে নাটক লিখতে বসে গেলেন উইলি । নাটকের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি ততােদিনে ভালােরকম জানা হয়ে গেছে তার । সঙ্গে ছিল প্রতিভা আর ছিল কিছুতেই হার না মানা নাছােড়বান্দা মনােভাব ।

        তাই এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে । ঝড়ের গতিতে একের পর এক লিখে চললেন হ্যামলেট , ম্যাকবেথ , ওথেলাে , মিডসামার নাইটস ড্রিম , কমেডি অব এরর্স , এ্যান্টনী ক্লিওপেট্রা , রােমিও জুলিয়েট ইত্যাদি সব কালজয়ী নাটক । 

        ততদিনে অর্থাভাবও দূর হয়েছে । তাই ঐতিহাসিক নাটকগুলি লেখার প্রয়ােজনে নিজের খরচেই বইপত্র কিনতে লাগলেন । পড়তেও লাগলেন ঝড়ের গতিতে । গা থেকে আকাট মূখের কোটটা তার খুলে পড়তে দেরী হলাে না । 

      স্বশিক্ষিত উইলিয়াম শেক্সপীয়র ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠলেন মহাপণ্ডিত ।

      অন্নের অভাবে একদিন যাকে রাতের পর রাত জেগে নাটক লিখতে হত তিনিই হলেন প্রচুর প্রচুর অর্থের মালিক । নিজের জন্মভূমি ষ্ট্যাটফোর্ডে গিয়ে বিশাল জমিদারি কিনে রাজার হালে বসবাস করতে লাগলেন । যারা একদিন এ গ্রাম থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তারাই দেখল সারা বিশ্বের অসংখ্য শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত মানুষ তাকে দেখবার জন্য ছুটে আসছে । জগৎজোড়া কতাে সম্মান তার । কতাে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালােবাসা তার জন্যে সাজানাে । 

        মৃত্যুর পর তাঁরই জমিদারির অন্তর্গত ওয়েস্ট মিনস্টার এ্যাবেতে তাকে সমাহিত করা হল । আজও তাঁর গুণমুগ্ধ লক্ষ লক্ষ মানুষ তার সমাধিতে পুস্পার্ঘ নিবেদন করতে আসে । আসে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে । যদি হাল ছেড়ে দিতেন , হার মানতেন তবে এই শেক্সপীয়রকে কি পেত , আমাদের এই পৃথিবী ?

       Only dead fish swim with the stream .


                      সমাপ্ত 

0 Comments: