জোস্না ও জননী
হুমায়ুন আহমেদ
মরিয়ম বসে আছে তাদের বাসার সিঁড়ির সামনে। আজ সারাদিন সে কিছুই খায় নি। যদিও ঘরে অনেক কিছু রান্না হয়েছে।...একটু পরপর মরিয়মকে খাওয়ার জন্যে সাধাসাধি করা হচ্ছে। তার খুবই বিরক্তি লাগছে। সে তো অনশন করছে না যে সেধে তার অনশন ভাঙ্গতে হবে। সে যথাসময়ে খেতে যাবে।
নাইমুল কথা দিয়েছিল দেশ যেদিন স্বাধীন হবে সেদিন সে উপস্থিত হবে। মরিয়ম জানে নাইমুল কথা রাখবে। যত রাতই হোক, সে বাসার সামনে এসে গম্ভীর গলায় বলবে - মরি, আমি এসেছি। কেউ কথা না রাখলেও আমি নাইমুল। আমি কথা রাখি। এই বলে সে নিশ্চয়ই ইংরেজি কবিতাটাও বলবে, Anable Lee নাকি কী সব হাবিজাবি।
সন্ধ্যার পর সাফিয়া এসে মেয়ের হাত ধরলেন। কোমল গলায় বললেন, মা তুই কতক্ষণ এখানে বসে থাকবি?
মরিয়ম বলল, মা, তুমি বিশ্বাস করো আমি ও না আসা পর্যন্ত বসেই থাকব।
রাত একটা বেজে গেল। মরিয়মের দুই বোন তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মরিয়মের মুখ ভাবলেশহীন। এক সময় মরিয়ম বলল, তোমরা এখান থেকে যাও। আমি একা বসে থাকব।
সবচে' ছোট বোন করুণ গলায় বলল, তুমি একা বসে থাকবে কেন? আমরাও বসি।
মরিয়ম কঠিন গলায় বলল, না। বোনেরা উঠে গেল।
তারও অনেক পরে ঘন কুয়াশার ভেতর দিয়ে বাড়ির সামনে দাড়ি-গোঁফ ভর্তি এক যুবক এসে দাঁড়াল। গম্ভীর গলায় বলল, সিঁড়িতে যে মেয়েটি বসে আছে, তাকে কি আমি চিনি? দীর্ঘকার এই যুবক দু হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মরিয়ম চিৎকার করে বলল, মা দেখ, কে এসেছে! মাগো দেখ কে এসেছে!
মরিয়ম যুবকটিকে জড়িয়ে ধরে আছে। যুবকের বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে বলছে - আচ্ছা, এইভাবে সবার সামনে আমাকে ধরে আছ কেন? আমাকে ছাড় তো। আমার লজ্জা লাগে।
নাইমুল কিন্তু তার স্ত্রীকে ধরে ছিল না। তার হাত এখনও প্রসারিত। কঠিন হাতে নাইমুলকে জড়িয়ে ধরেছিল মরিয়ম নিজেই।
পাঠক, মহান বিজয় দিবসে যে গল্প শেষ হবে, সেই গল্প আনন্দময় হওয়া উচিত বলেই আমি এরকম একটা সমাপ্তি তৈরি করেছি।
বাস্তবের সমাপ্তি এরকম ছিল না। নাইমুল কথা রাখে নি। সে ফিরে আসতে পারে নি তার স্ত্রীর কাছে। বাংলার বিশাল প্রান্তরের কোথাও তার কবর হয়েছে। কেউ জানে না কোথায়। এই দেশের ঠিকানাবিহীন অসংখ্যা কবরের মধ্যে তারটাও আছে। তাতে কিছু আসে যায় না। বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানদের কবরে অপূর্ব নকশা তৈরি করে। গভীর বেদনায় বলে, আহারে! আহারে!
সমাপ্ত
Love Story :- " Josna o Jononi " this love story is very intersting . bengali love story is very imterstimg amd enjoyfully . please share this love story to your friends or lover .
0 Comments: