হেলেন কেলার
' So much has been given to me ; I have no time to ponder over that which has been denied .
' এতাে পেয়েছি জীবনে যে কি কি পাইনি তা নিয়ে মিছিমিছি মাথা ঘামাবার মতাে সময়ই নেই আমার ।
-কে বলেছেন বলাে তাে এই কথাগুলি ? বলেছেন এমন একজন মহিলা যিনি তাঁর চোখ আর কান দুটো ইন্দ্রিয়কেই সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছিলেন মাত্র ১৮ মাস বয়সে । কিন্তু মনের জোর হারান নি ।
এই পৃথিবীতে এরপরও ৮৭ টি বছর তিনি শুধু যে তুমুলভাবে বেঁচেই রইলেন তা নয় কোটি কোটি মানুষের কানে দিয়ে গেলেন বাঁচার এক মহামন্ত্র ।
‘ হার মেনাে না , হাল ছেড়াে না জয় তােমার হবেই ।
হেলেন কেলারের জন্ম আমেরিকার আলবামা শহরে । বছর দেড়েকের ছােট্ট খুকি । কথাও ফোটেনি মুখে । এমন সময় দুরন্ত জ্বরে পড়লেন । অনেকদিন পর , জ্বর যখন ছাড়ল তখন দেখা গেল মেয়েটি আর চোখেও কিছু দেখতে পায় না , কানেও কিছু শুনতে পায় না । কানে কারাে কথা শুনতে পেতেন না বলেই নিজেও কথা বলতে শিখলেন না । সবাই জানল- এ মেয়ে শুধু অন্ধ এবং কালা নয়- বােবাও । জীবনে আর কোনােদিনই ও কথা কইবে না ।
এমন মেয়ে নিয়ে বাবা মা - এর হতাশা আর দুশ্চিন্তা যে কতখানি তা নিশ্চয়ই তােমরা অনুমান করতে পারছ ।
কিন্তু তারা হাল ছাড়লেন না । প্রতিবন্ধী বলে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েটিকে বাড়ির এককোণে আবর্জনার মতাে ফেলে রাখলেন না । তারা চারিদিকে খোঁজ করতে লাগলেন এমন একজন সহৃদয়া , দয়াবতী শিক্ষিকার যিনি ধৈর্য ধরে , একটু একটু করে হেলেনকে জীবনযাত্রার সাধারণ কাজগুলি করতে শেখাবেন , যাতে ভবিষ্যতে তাকে পরমুখাপেক্ষি হয়ে না থাকতে হয় । হেলেন এবং তার বাবা মায়ের ভাগ্য ভালাে- ঠিক এমনই একজন শিক্ষিকা মিস এ্যানে মেসফিল্ড সুলিভান সানন্দে এগিয়ে এলেন হেলেনের দায়িত্ব নিতে । হেলেনের জীবনে তিনি ছিলেন দেবদূতী স্বরূপ । যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন হেলেনের ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন তিনি ।
হেলেনের জন্য মিস সুলিভান বিয়ে করলেন না সারাজীবন । তারই ভালােবাসার যাদুস্পর্শে অন্ধ , বােবা , কালা মেয়েটি কিভাবে একটু একটু করে পৌছলেন সফলতার শীর্ষ বিন্দুতে , সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যা পারে । তাই সে করে দেখাল— সে এক রূপকথার কাহিনি ।
কি করে এই অসাধ্য সাধন করলেন মিস সুলিভান ?
প্রথমে নানা আকৃতির বিভিন্ন জিনিস হেলেনের হাতে তুলে দিয়ে সুলিভান একটু একটু করে তাকে অক্ষর ও শব্দ শেখালেন । অক্ষরগুলাে অবশ্যই ছিল ব্রেইলের । ব্রেইল হল অন্ধদের জন্য বিশেষ ভাবে বানানাে কাগজের ওপর উঠে থাকা নানা চিহ্ন যা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বােঝা যায় । ব্রেইলির সাহায্যে অল্পদিনের মধ্যেই অন্ধ হেলেন লিখতে আর পড়তে শিখে গেলেন । লেখা ও পড়ার কৌশল শেখবার পর খুবই তাড়াতাড়ি হেলেন শিখে গেলেন ফরাসী , জার্মান , গ্রীক ও ল্যাটিন এই চারটি ভাষা । ১৮ বছর বয়সেই বি এ পাশ করে গেলেন তারপর লিখতে শুরু করলেন নিজের জীবন কাহিনি । এক আশ্চর্য উত্তরণের রূপকথা The story of my life । বইটি পৃথিবীর ৫০ টি ভাষায় অনুবাদ হল । লেখিকা হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পেলেন সারা বিশ্বে ।
সেই বােবা কালা অন্ধ মেয়েটি , একদিন যে ছিল পরিবার আর সমাজের বােঝা আজ সে - ই এগিয়ে এলাে সমাজের সেবায় । সুস্থ সবল । ধনী আর সুখী মানুষেরা যাদের কান্না শুনেও কর্ণপাত করে না , তাদের দুঃখের কথা আজ মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারলেন এই প্রতিবন্ধী মেয়েটি । সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে লাগল সে আর সেই বক্তৃতা যারা শুনতে এল তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে লাগলেন অর্থ । অন্ধদের জন্য গড়ে তােলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সেই অর্থ অকাতরে দান করে দিলেন তিনি ।
হেলেনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক গল্প , সিনেমা , উপন্যাস । এর মধ্যে দুটি সিনেমা অস্কার পেয়েছে । এছাড়াও মিস হেলেন কেলার পেয়েছেন নানা দেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ।
আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান হল মেডেল অব ফ্রিডম । স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এই সম্মান তুলে দিলেন হেলেনের হাতে । সারা বিশ্বের মানুষ আজ হেলেন কেলারের নামে জয়ধ্বনি দেয় । তার জীবনের ইতিহাস থেকে দুঃখী অসহায় হতাশ মানুষ খুঁজে নেয় জীবনের রসদ , খুঁজে নেয় কিছুতেই হাল না ছাড়ার , হার না মানার মন্ত্র ।
The most pathetic person in the world is someone , who has sight , but has no vision.- Helen Keller
0 Comments: