অ্যালবার্ট আইনস্টাইন
বিশ্ববিখ্যাত নােবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বােধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত , সবচেয়ে প্রশংসিত এবং সবচেয়ে নিন্দিত মানুষ । তার আবিষ্কার করা থিওরি অব রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিক তত্ত্বের সম্পূর্ণ স্বরূপ বুঝতে মানুষকে হয়তাে আরাে ৫০/১০০ বছর অপেক্ষা করতে হবে । তবে বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী , একবাক্যে স্বীকার করেছেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হলেন আধুনিক পৃথিবীর বিজ্ঞানে সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রতিভা । আর পৃথিবীর সমস্ত ভাবুক , অনুভূতিসম্পন্ন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন মানুষ হিসেবেও পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন এই অতি সাধারণ সাদামাটা পােষাকের নিরভিমান , শান্ত স্বভাবের ভাবুক মানুষটি । জীবনের শুরুতে তার কোনাে ambition ই ছিল । না জীবনের শেষেও না । আজ সারা পৃথিবীতে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাতত্ত্বের শতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে । ১৯২১ খ্রি . অন্য এক যুগান্তকারী আবিষ্কার - চুম্বক ও বিদ্যুত তরঙ্গ বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য পেয়েছেন নােবেল পুরস্কার । এছাড়া কোয়ান্টাম তত্ত্ব , পরমাণুতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে তার মৌলিক গবেষণা ও আবিষ্কার বিশ্বের বিজ্ঞান ভাবনার ভিত একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে ।
অথচ ছােটোবেলায় এই মানুষটি কেমন ছিলেন জানাে ? শুনলে হয়তাে বিশ্বাসই করবে না- তিন বছর বয়স পর্যন্ত তার মুখে কথাই ফোটেনি । তিন বছর বয়স থেকে একটু একটু ঠোকে ঠেকে কথা বলতে শুরু করলেন , অনেক সময় নিয়ে নিয়ে । একটু একটু করে কেটে কেটে ।
বাবা কাকার ছিল যন্ত্রপাতির দোকান । জার্মানির মিউনিখ শহরে অতি ছােট্ট একটি ভাড়া বাড়িতে বাবা , মা , কাকা আর দুবছরের ছােটো বােন মাজার সঙ্গে ছােটোবেলাটা কেটেছে তার । অত্যন্ত গরিব পরিবার তায় আবার ইহুদী । জার্মান দেশে ইহুদীদের লােকে ঘৃণার চোখে দেখত । এই ঘৃণা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়েছে তাঁকে । ছােটোবেলায় প্রায়ই অসুস্থ হতেন আলবার্ট । স্কুলে যেতে পারতেন না । বড়াে ভালাে লাগত । পরিবারের সবার সঙ্গে বাড়িতেই সময় কাটাতে । মা পলিন চমৎকার বেহালা বাজাতেন । রুগ্ন , অন্তর্মুখী , নিরীহ স্বভাবের আলবার্টের মন ভালাে রাখার জন্য মা মাত্র ৬ বছর বয়সেই তাঁর হাতে তুলে দিলেন এই করুণ সুর মাখানাে যন্ত্রটি । প্রথম প্রথম ভালাে লাগত না । কিন্তু শুধুমাত্র মাকে খুশি করার জন্য মাতৃভক্ত আলবার্ট বেহালার বুকে ছােট্ট কচি হাতে ছড় টেনে চলতেন । আসতে আসতে ভালাে লাগা শুরু হল । বছর সাতেক পর যখন মােৎসার্টের শিক্ষনীর সুর তুলছেন তখন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল । হঠাৎ করে তার মনে হল গানের সুরের মধ্যেও লুকিয়ে আছে কি আশ্চর্য গাণিতিক কাঠামাে । তারপর থেকে বেহালাই তার সারাজীবনের চিরবিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে দাঁড়ালাে । পরবর্তী জীবনে তার ছেলে হান্স তার সম্বন্ধে লিখেছেন- ‘ বাবা , সামনে আর পথ নেই দেখলেই বসে পড়তেন বেহালা নিয়ে আর সাধারণত সব বাধাই কাটিয়ে উঠতেন । দুঃখ্যন্ত্রণা , অপমান আর বিশ্বাসঘাতকতার চরম মুহূর্তগুলিতে বেহালার সুরের গভীরে নিজেকে আকণ্ঠ ডুবিয়ে দিতেন ।হয়তো এজন্যই সারা জীবন এতাে ঝড়ের মধ্যে দিয়ে চলেও তার মানসিক শান্তি , মগ্নতা ও শিষ্ট সভ্য আচরণ কখনাে ব্যাহত হয়নি ।এতাে শান্ত ভালােমানুষ ছেলেটিকে কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা মােটেই ভালাে চোখে দেখত না । গণিত ছাড়া আলবার্টের আর কোনাে বিষয়ই ভালাে লাগে না— সে পড়তেও চায় না পড়া শুনতেও ভালাে লাগে না তার ।
‘ পিছিয়ে পড়া , বেয়াড়া , খামখেয়ালী । কিচ্ছু হবে না ওর ।
এটাই ছিল আলবার্ট আইনস্টাইন সম্পর্কে তার শিক্ষকদের অভিমত । একবার তার বাবা ছেলের ভবিষ্যত সম্বন্ধে কথা বলতে গিয়ে হেডমাস্টারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ,
— বলতে পারেন , আলবার্টকে কোন লাইনে দেব ?
—যে লাইনে খুশি । কারণ কোনাে লাইনেই ওর কিস্যু হবে না । হেডমাস্টারমশাই হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলেন ।
শিক্ষকরা যেমন তাকে পছন্দ করত না — তিনিও তেমনি শিক্ষকদের হৃদয়হীন ব্যবহার , জবরদস্তি চাপ আর পিত্তি জ্বালা করা কড়া কড়া কথা একদম সহ্য করতে পারতেন না । যেমন প্রাথমিক স্কুলে , তেমনি মাধ্যমিক স্কুল জিমনিসিয়ামে । তার চোখে প্রাইমারি শিক্ষকরা হল সার্জেন্ট আর জিমনাসিয়ামের শিক্ষকরা লেফটেন্যান্ট ।
এই যখন ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক , লেখাপড়া তবে আর কেমন করে হবে ? হলও না । বাবার চোখে ধুলাে দিয়ে স্কুল ছাড়লেন । মিছিমিছি কোথেকে একটা ডাক্তারি সার্টিফিকেট যােগাড় করে আনলেন- কঠিন স্নায়ুরােগ হয়েছে ছেলেটির । দীর্ঘ বিশ্রাম চাই ।
ব্যাস ! পত্রপাঠ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ্যালবার্টকে টি সি দিয়ে দিল । তিনিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন । স্কুলও বাঁচল ।
বাড়িতেই থাকতেন । পারিবারিক বন্ধু ডাক্তারি ছাত্র মাকস টলেমির কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পড়তেন সাধারণ বিজ্ঞানের বই । আর ইঞ্জিনীয়ার কাকার কাছে শিখতেন অঙ্ক । বাকিটা বাজনা বাজিয়ে আর ঘুরে বেড়িয়ে কেটে যেত
বাবা নিয়ে গেলেন পলিটেকনিকে ভর্তি করতে । কিন্তু এ্যাডমিশান টেস্টে ফেল করলেন । একটি বছর পড়াশােনা করে পরের বছর ভর্তি হলেন জুরিখ পলিটেকনিক কলেজে । এইসময় চরম অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল । তার বাবার ব্যবসা চলছে না । আলবার্টের হাতে একটিও পয়সা নেই । কোনােদিন অর্ধাহার , কোনােদিন বা অনাহার । বন্ধুরা জানতে পারত যেদিন , নিজেদের থেকে টাকা পয়সা ও খাবার দিয়ে সাহায্য করত । অন্যথায় উপােস ।
শেষপর্যন্ত বন্ধুর নােট নিয়ে পড়ে কোনােরকমে পলিটেকনিক পাশ করলেন আলবার্ট । তবে চাকরি বাকরি কিছুই পেলেন না । ১৯০০ থেকে ১৯০২ এই তিনটি বছর প্রচণ্ড দরিদ্র আর হতাশার মধ্যে কেটে গেছে । আইনস্টাইনের । যেমন তেমন একটা চাকরির জন্যে পথে পথে ঘুরেছেন । কিন্তু যেখানেই গেছেন ভাগ্যের শিকে ছেড়ে নি । কারণ একটাই , তিনি যে ইহুদী । কতােবার ভেঙে পড়েছেন হতাশায় । কিন্তু হাল ছাড়েন নি ।
যাই হােক শেষপর্যন্ত বন্ধুর সাহায্যে সামান্য মাইনের এক কেরাণীর চাকরি জুটল তার । বার্ন কোম্পানির পেটেন্ট অফিসে । বিয়ে করলেন । দুটি সন্তানও হল তার । সংসারে পুরােপুরি জড়িয়ে পড়লেন । সারাদিন স্ত্রীকে রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করেন , অফিস করেন আর বাড়ি এসে বাচ্ছাদের সামলান । আবার তার ফাকে ফাকে টিউশানিও করেন সংসারের অভাব মেটাতে । গতানুগতিক একঘেয়ে জীবন । এক সাধারণ ছাপােষা কেরাণীর সঙ্গে কোনাে তফাত নেই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান বিজ্ঞানী । আইনস্টাইনের । এভাবেই চলল টানা এগারােটি বছর ।
কিন্তু জীবনের এই গভীর গাজায় পড়ে গিয়েও হাল ছাড়েননি তিনি । এসবের মধ্যেই ১৯০৫ সালে জার্মানির এক বিখ্যাত সায়েন্স ম্যাগাজিনে তাঁর একটি প্রবন্ধ ছাপা হল । সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বিজ্ঞানী মহলের নজর পড়ে গেল তার দিকে । শুরু হল খোজ নেওয়া— কে এই অ্যালবার্ট ? বিজ্ঞানীরা কেউ কেউ বাড়িতে এসে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন । সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা তাকে প্রস্তাব দিলেন বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করার জন্য । আলবার্ট তাে আনন্দে আটখানা । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অধ্যাপকের মাইনের চেয়ে কেরাণীর মাইনে অনেক বেশি । তাই সংসারের মুখ চেয়ে অধ্যাপনায় না গিয়ে সেই বার্ন কোম্পানির পেটেন্ট অফিসে কেরাণীর চাকরিতেই থেকে গেলেন আইনস্টাইন ।
কিন্তু হাল ছাড়েন নি । ততােদিনে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে তার মধ্যে । বাচ্চার দোলনা টানতে টানতে , কেরাণীগিরি করতে করতে আর টিউশানি পড়তে পড়তেই তিনি লিখে ফেললেন একের পর এক বিস্ফোরক প্রবন্ধ । সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল তার নাম । ১৯১০ খ্রি . তার নাম প্রস্তাব করা হল নােবেল পুরস্কারের জন্য ।
কিন্তু হায় ! বাইরে যখন এতাে প্রতিষ্ঠা , এতাে সম্মান — পরিবার জীবন তখন তার একেবারে ভাঙনের মুখে । যে সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিজের সাধনার এতাে সুযােগ তিনি ছেড়ে দিলেন , এতাে আত্মত্যাগ করলেন সেই সংসারও শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল । স্ত্রী মিলােভার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেল । তবে বুদ্ধিমতী মিলােভা স্বামীকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন যদি নােবেল প্রাইজ সত্যিই পান আলবার্ট তবে তার সব টাকা তাকেই দিতে হবে ক্ষতিপূরণ হিসাবে । স্ত্রীর প্রস্তাব মেনে নিলেন আইনস্টাইন । সংসারের এই ক্রুর স্বার্থপর স্বরূপ দেখে নিশ্চয়ই প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন অন্তরে ।
কিন্তু হাল ছাড়েন নি । ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে এতাে আদরের দুটি ছেলে , ভালােবেসে বিয়ে করা স্ত্রী আর বড়কষ্টে তিলতিল করে গড়ে তােলা ঘরকন্না চিরদিনের মতাে ত্যাগ করে আবার ফিরে গেলেন জার্মানি । সেই ইহুদী বিদ্বেষের , সেই ঘৃণা আর অপমানের জার্মানিতে ।
ব্যক্তিগত জীবনের চরম ব্যর্থতার আঘাত ভােলবার জন্য জার্মানির প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে বিজ্ঞান সাধনার মধ্যে ডুবে গেলেন আইনস্টাইন ।
কিন্তু এবার অন্য এক চরম আঘাত এল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে । তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর মুখে । জার্মান সম্রাট কাইজার চাইছেন যেনো তেনাে প্রকারে ব্রিটেনকে জব্দ করতে । তিনি বিশ্বের সমস্ত বড়াে বড়াে বিজ্ঞানীকে ডেকে পাঠালেন । মােটা মাইনে আর সবরকম সুযােগ সুবিধার বিনিময়ে বিজ্ঞানীরা দেবেন তাদের মগজের ফসল । তা দিয়ে বিজ্ঞানে , প্রযুক্তিতে , শিল্পে সবার চেয়ে এগিয়ে যাবে জার্মানি ।
সরল মনে আলবার্ট এই লােভনীয় প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেলেন । সেটা ১৯১৪ সাল । কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন কি ভুল তিনি করেছেন । ১৯১৪ সালেই শুরু হয়ে গেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মগজের ফসল ব্যবহার করা হতে লাগল নির্বিচারে মানুষ মারার কাজে ।
যে যুদ্ধকে জন্মাবধি তীব্রভাবে ঘৃণা করতেন আলবার্ট , যার মনে হত যুদ্ধে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালাে , সৈনিক বৃত্তিকে মনে হত পৃথিবীর জঘন্যতম , পাশবিক বৃত্তি সেই তাকেই পরােক্ষভাবে বিশ্বযুদ্ধের নর ঘাতক সৈনিক হতে হল । পুতুল হয়ে যেতে হল যুদ্ধবাজ জার্মানির হাতে ।
শুধু কি তাই ! জার্মান রাজকর্মচারীরা এই আত্মভােলা সরল বিজ্ঞানীকে সারাদিন নির্দেশ দিয়ে যেতে লাগলেন তিনি কি পােষাক পরবেন , কি স্টাইলে হাঁটবেন , কার সঙ্গে কিভাবে কথা বলবেন ।
বিরক্ত , অপমানিত বিজ্ঞানী সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে এলেন সুইজারল্যান্ডে মায়ের কাছে । মায়ের হাতের স্নিগ্ধ স্পর্শে জুড়িয়ে গেল যন্ত্রণার ক্ষত । আবার উঠে দাঁড়ালেন মানুষ আইনস্টাইন ।
যুদ্ধকে রুখতে হবে । বন্ধ করতে হবে শক্তিমানদের এই দানবলীলা । যেভাবেই হােক । এই সময় ফরাসি দার্শনিক ও সাহিত্যিক রােমা রোলা সারা পৃথিবীতে তার যুদ্ধবিরােধী প্রচার চালাচ্ছিলেন । আইনস্টাইন তার সঙ্গে দেখা করলেন । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও দীর্ঘ আলােচনা চালালেন । কিন্তু কিছুই করতে পারলেন না । চার চারটি বছর যুদ্ধ চলল । কেড়ে নিল কোটি কোটি প্রাণ ।
১৯১৮ খ্রি . যখন যুদ্ধ থামল তখন প্রচণ্ড মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বজুড়ে । সবার আয়ই কমে গিয়ে হল কুড়ি ভাগের এক ভাগ । তবু এইরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝখানে বসেও মহাবিজ্ঞানী একের পর এক লিখে যেতে লাগলেন গবেষণামূলক প্রবন্ধ । প্রায় ৩০ টি গূঢ় তত্ত্বমূলক প্রবন্ধ লিখলেন তিনি আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব তার এই সময়ের রচনা ।
আইনস্টাইন বার্লিনে নিজের কাজ নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন । কিন্তু হল না । হিটলার ক্ষমতায় এসেই নির্বিচারে শুরু করে দিল ইহুদী নিধন যজ্ঞ । আইনস্টাইনের মাথার দাম ঘােষিত হল এক লক্ষ টাকা । প্রচার করা হতে লাগল আপেক্ষিকতার তত্ত্ব কিছুই নয় । আসলে এটি হচ্ছে একটি ইহুদী চক্রান্ত । বার্লিনে তার বিষয় সম্পত্তি সব বাজেয়াপ্ত করা হল । সাধের বাড়ি , বাগান আর গবেষণাগার গুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিল নাৎসী বাহিনী । প্রাণভয়ে রাতের অন্ধকারে জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে গেলেন বিজ্ঞান সাধক । জার্মানির বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত তার নামে নানা কুৎসা রটাতে লাগল । তার পাণ্ডুলিপি চুরি করে প্রকাশ করল । নিজেদের নামে । তার বই - এর প্রকাশও নিষিদ্ধ হল হিটলারি হুকুমে । তাঁর বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রচার চালাবার জন্যে একটি বিশাল কমিটি তৈরি হল জার্মানির বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের নিয়ে যার মধ্যে বেশ ক - জন ছিলেন নােবেল বিজয়ী ।
সভ্য শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী মানুষের মুখােশের আড়ালে এইসব হিংস্র পরশ্রীকাতর পশুদের মুখ দেখতে দেখতে হয়তাে ঘৃণায় শিউরে উঠেছিলেন আইনস্টাইন । বিশ্বাস হারিয়েছিলেন মানুষের প্রতি । কিন্তু হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের সাধনা থেকে এক তিল সরে দাঁড়ান নি তিনি ।
বার্লিন থেকে পালিয়ে এলেন আমেরিকায় । সেখান থেকে পালিয়ে বেলজিয়ামে । সেখান থেকে আশ্রয়চ্যুত হয়ে আবার আমেরিকায় । জীবনের সায়াহ্নে এভাবেই ক্রমাগত এক কূল থেকে আর এক কূলে ভেসে ভেসে বেড়িয়েছেন তিনি শুধু একটু নিশ্চিন্ত সাধনার অবকাশ খুঁজে । শেষপর্যন্ত আমেরিকার প্রিন্সটনে ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্স স্টাডিতে এসে মনের মতাে একটি নিরিবিলি আশ্রয় পেলেন তিনি । কিন্তু ততােদিনে সদাহাস্যময় প্রসন্ন এই বিজ্ঞান তাপস দেহে - মনে বিধ্বস্ত , বিপর্যস্ত । চোখে মুখে শুধু আতঙ্ক আর উদ্বেগ ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার ফাদে ফেলা হল তাকে । আমেরিকার আশ্রয়ে আছেন । কাজেই তার কথা শুনতে হবে । ততদিনে পরমাণুশক্তি বিষয়ে আইনস্টাইনের আবিষ্কারের কথা সবাই জানেন । প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট আইনস্টাইনের কাছে পরমাণু বােমা নির্মাণের ব্যাপারে সাহায্য চাইলেন । আইনস্টাইন হয়তাে ভেবেছিলেন হিটলারের জার্মানি , ইহুদী বিদ্বেষী জার্মানিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এটা একটা গ্রহণযােগ্য পন্থা । কিন্তু সেদিন তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নি যে বিশ্বের শক্তিমানেরা সকলেই দানবীয়তায় সমান — তা সে জার্মানই হােক কিংবা আমেরিকা । রুজভেল্ট আর হিটলার ক্ষমতার দম্ভে আর নিষ্ঠুরতায় দুজনেই সমান ।
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যখন পরমাণু বােমা ফেলল জাপানের হিরােসিমা ও নাগাসাকিতে তখন বেদনায় , ক্ষোভে , দুঃখে ও অপরাধবােধের বােবা যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠেছিলেন তিনি । মানুষের ওপর বিশ্বাসের শেষতম বিন্দুটাও মুছে গিয়েছিল তার মন থেকে ।
না , তবুও ভবিতব্য বলে হাল ছেড়ে দিয়ে স্থানুর মতাে বসে থাকেন নি তিনি । জীবনের বাকি যে দশটা বছর বেঁচেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর সর্বস্বহারানাে দুঃখী মানুষদের সেবার জন্য জীবনের সমস্ত সঞ্চয় অকাতরে ব্যয় করে গেছেন । দানব দানবের কাজ করছে করবে । তাই বলে দেবতা কি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবেন ? নিজের পাণ্ডুলিপিগুলি নিলামে একের পর এক বিক্রি করে দিলেন কোটি কোটি ডলার মূল্যে আর ঢেলে দিলেন যুদ্ধ বিধ্বস্তদের ত্রাণ তহবিলে । মৃত্যুর সময় নিজের প্রায় কিছুই রেখে যাননি তিনি । এমনকি আত্মীয়দের অনুরােধ করে গিয়েছিলেন তাঁকে ঘিরে যেন কোনাে স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিফলক তৈরি করা না হয় ।
আইনস্টাইনের কোনাে ambition ছিল না । ছিল শুধু প্রতিভা আর আকাশের মতাে উদার , শিশুর মতাে সরল , একটি বিশাল হৃদয় । আর ছিল হার না মানা অদম্য মনের জোর । তাই তাে শিক্ষকদের ভবিষ্যৎবাণী এমনভাবে উল্টে দিতে পেরেছিলেন যারা বলেছিলেন ও ছেলের কিছু হবে না ।
Nothing can dim the light that shines from within .
Albert Einstein :- Alrbert Einnstein ( born March 14, 1879, Ulm , Writtemberg , Germany_ Died April 18 , 1955, Princeton, New Jersey, U.S ) was a German-born theoretical physicist who developed the theory of rellativity , one of the two pillars of modern physics. He own the nobel prize for physics in 1921 for this explanation of the photoelectric effect. I told you Albert Einstein success story. How he got success in life . How he overcome all obstacles and got success. I told his success story in bengali language. I told you this success story for tthis reason that you do not lose. Thank you so much .
0 Comments: