তুমি আসবে বলেই
মানব মন্ডল
Offshore চাকুরীতে মাইনে বেশি , কারণ জীবনের ঝুঁকি বেশি। তাই এখানে আমাদের দায়িত্ব অনেকবেশি । কারণ কাজের জায়গায় দুর্ঘটনার প্রধান কারণ, ইউম্যান এরর, মানে মানুষের করা ভুল। offshore একটা দূর্ঘটনার পরিমাণ ভয়াবহ। কারণ এখানে আমাদের সাহায্য করার কেউ নেই। offshore কথাটা যাদের জন্য নতুন তাদের জন্য তাদের খুলে বলি, shore কথার অর্থ হলো জমি। সমুদ্রের মধ্যে শুধু জাহাজে চলে না, রিগ ,বার্জ, প্লাটফর্ম, থাকে , সাধারণত এগুলো খনিজ তেল আর গ্যাস উত্তোলন শিল্পের সাথে যুক্ত। আমি সৌদি আরবে চাকুরী করি এ রকম রিগে। আমি লোহিত সাগরে মিশরের কাছে আছে আমার রিগ, এখন যাচ্ছি ।
কোলকাতা থেকে এমার্জেন্সি এসেছি সকালে। দাম্মাম বিমান করে তিন ঘণ্টা পর পৌছালাম তাবুক, ওখান থেকে মরুভূমির ,ছোট পাহাড় ফাঁক ফোকর দিয়ে, আরো ঘন্টা ছয়েক পথ পেরালে আসবো দুবা তারপর চপারে করে যেতে হবে রিগে।
ক্যাটারিং সার্ভিসের কাজ করতে এসে পদোন্নতির জন্য সবচেয়ে কার্যকর শব্দ হলো কাস্টমার ফিডব্যাক। সেইটাই আমার ক্ষেত্রে বিপদ হলো। আমাদের ওখানে আরবি খাবার বানানোর জন্য, মিশরীয় রাঁধুনি ছিলো। ও সেফটি রুল ফলোই করে না। যে কোন কাজের জন্য আমাদের PPE, মানে Personal Protective Equipment ব্যাবহার করা নিয়ম আছে। আপনার বাইক চালাতে গেলে PPE হলো হেলমেট। মাংস কাটার জন্য আমাদের ব্যবহার করতে হয় চেন গ্লাভস, ও সেটা না পরেই মাংস কাটা ছিলো। অসাবধানতাবশত ওর হাত একটা কোপ পরে গিয়ে আঙ্গুল একটু কেটে গেছে। তাই ওর চাকুরী খুইয়ে। আমাকে ওর জায়গায় যেতে হবে , ওখানে স্টাফরা আমাকেই চায়।
আপনি বলবেন একটা আঙ্গুল কাটে যেতেই চাকুরী। চলে গেলো? হুঁ এটাই offshore এখানে safety Frist. কয়েকটি মাস আগে মুম্বাই হাই এরকম একটি কুকের হাত কেটে গিয়ে ছিলো। তাকে এমার্জেন্সি আনতে গিয়েছিলাম একটি ট্যাকবোর্ড। হঠাৎ সমুদ্র অশান্ত হয়ে যাওয়ায় । বোর্ডটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্লাটফর্মে ধাক্কা মারে। প্লাটফর্ম এ আগুন ধরে যায়। একসাথে তিনশজন মানুষ বিপদে পড়ে যায়। তিন মাস এখন পর্যন্ত , মাত্র 185 জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, বাকিরা নিখোঁজ। তাই এখানে এতোটা কড়াকড়ি।
হঠাৎ গাড়ি থামাতে দেখি অনেক উট রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আসলে অনেকক্ষণ ধরে মরুঝড় চলছিলো এখনে। তাসমীন এর হোটেলটার দিকে চোখ পড়তেই, আমার পাকিস্তানি ডাইভার বললো " লাঞ্চ করবেন তো চলেন। "
আমি বললাম "চলো আমি গেলেই চপার ছেড়ে দেবে, রিগে গিয়ে খাবো।"
আসলে খিদে পেয়েছে হয়তো একটু টাবুকে, একটু খেয়েছি ঠিকই কিন্তু তাসমীনকে দেখে আমার ভয় করে বড়ো রহস্যময়ী নারী ও। সোজাসাপ্টা কথায় বলি ভারত বর্ষে যেমন যোক্ষনী আছে, তেমন স্কোগস্রা আছে এই ঊপকুলে অনেকেই বলছে। যেমন ও সাজিদ আলী খুব মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে ভালো বাসে। দুই তিন মাস ধরে নিখোঁজ এই রাস্তাতে যেতে গিয়ে। এবার একটা কথা বলে দিই দুবা শহরটা খুব ছোট। একশটা হয়তো বাড়ি আছে কিন্তু কোন টা রেসিডেন্সিয়াল না। সব অফিস গেস্ট হাউস , আর দুইটো খাবার হোটেল, তাসমীনকেটা নতুন বয়স জোর মাস তিনেক।
ও স্কোগস্রা কি জানতে চাইবেন নিশ্চিত। সুইডেনের উপকথায় পাওয়া যায় স্কোগস্রা এক অদ্ভুত জীবের কথা, যাদের সামনে থেকে অপরূপ নারীর মত দেখতে । কোথাও এদের বলা হয় রাদান, কোথাও স্কগস্নুম্ফেন আবার কোন খানে এদের স্কগস্ফ্রুন বলে বলা হয়।
উপকথার কাহিনীতে স্কোগস্রা শুধুই মেয়ে হিসেবে পাওয়া যায় এদের মধ্যে কোন ছেলে পাওয়া যায় না। এদের উচ্চতা হলেও এদের মুখশ্রী হয় অপরূপ সুন্দর, পিছন থেকে একদমই অন্যরকম , বেশ ভয়ঙ্কর। এদের পিঠে থাকে ঠিক যেন কোন গাছের কান্ডে থাকা কোটরের মত, একটা মস্ত গর্ত। আর ল্যাজটা থাকে গরুর মতো। মানুষের আসে পাশে থাকলে পিঠের গর্ত আর ল্যাজটা এরা ঢেকে রাখে এদের লম্বা চুল দিয়ে।
আসলে এদের ব্যবহারে একটা বন্ধুত্বের আভাস থাকে। পুরুষ দের রূপে মুগ্ধ করে হয়েছে এরা। পুরুষ সঙ্গী না থাকার জন্য, -স্কোগস্রারা পুরুষ মানুষদের ব্যবহার করে যৌনতার জন্য। সেই যৌন ক্রিয়ার পর যদিও বা কোন মানুষ বেঁচে থাকে, তাহলেও সে আর সাধারণ থাকে না। তার শরীরটা মানুস্য জগতে ফিরে গেলেও তার আত্মা আটকে পড়ে থাকে স্কোগস্রা-র কাছেই।
তবে শুনেছি ভালো শিকার পাওয়ার হয়েছে অনেক সময় শিকারিরা গিয়ে হাজির হয় এই স্কোগস্রা-দের ডেরায়, ভালো শিকারের বিনিময়ে তারা স্কোগস্রা-দের শয্যাসঙ্গী । একবার স্কোগস্রা-র সাথে যৌন ভাবে মিলিত যে শিকারি, তাঁকে যেতে হয় স্কোগস্রা-র কাছে প্রতিবার শিকারের পাওয়ার জন্য । নয়তো স্কোগস্রা-র অভিশাপ পরে তারা । এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় একটাই স্কোগস্রা-র মৃত্যু।স্কোগস্রা-দের মারার একটাই উপায়, হল রুপোর গুলি বা অস্ত্র দিয়ে আঘাত।।
এ বাবা চরম বিপদে পড়ে গেছি আমি। চপার যাবে না। আবহাওয়া খারাপ। আর কিছু ক্ষনের মধ্যে। আবার ঝড় আসবে। গেস্ট হাউস বুকিং করে দিয়েছে রেডিও আপেরেটার কিন্তু মুস্কিল গেস্ট হাউস খাবার পাওয়া যাবে না। আমি লাগেজ টা রেখে একটু ফ্রেস হয়েই আব্দুলার রেস্টুরেন্ট গাড়ি নিয়ে যেতে বললাম। কারণ পেটে তখন ছুঁচো ডন দিচ্ছে। কিন্তু একি ওর দোকান বন্ধ। দুবার সবচেয়ে পুরনো এবং দুই তিন মাস আগে পর্যন্ত এটাই একমাত্র রেস্টুরেন্ট ছিলো।
শেষ মেষ তাসমীন এর রেস্টুরেন্ট যেতে হলো। ওখানে যে গেট খুলে দিল তাকে দেখে আমি অবাক। আব্দুলা কিন্তু ও আমাকে বা ডাইভার সাহেব কাউকে ই চিনতে পাড়লো না ওর ব্যবহার টা অনেক টা যন্ত্রের মতো। আমি কিছু টা ভয় পেয়ে গেলেও রেস্টুরেন্ট টা ঢুকে মন জুড়িয়ে গেলো, কি সুন্দর জুঁই ফুলের গন্ধ, এটা আমার খুব প্রিয় গন্ধ । যেনো কারো জন্মদিনে এর জন্য সাজনো। তাসমীন একটা হলুদ পোশাক পড়েছে, ওটাও আমার খুব প্রিয় রঙ।
রেস্টুরেন্ট আর কেউ নেই টেবিলে তাসমীন এলো খাবারের অর্ডার নিতে । একটা হলুদ টিউলিপ দিয়ে পুরো বাংলায় বললো " শুভ জন্মদিন".…
আমি ভয় পেয়ে গেলাম ও কি করে জানলো আজ আমার জন্মদিন ।
ও একটা বাঁকা হাসি হেসে বলল" সব কিছু তুমি আসবে বলেই।"
সমাপ্ত
0 Comments: