প্রিয় লেখকের প্রিয় লেখা । বাংলা জগতে "বাংলামোটিভ ডট কম ( Love Junction)" এক অন্যতম নাম। গল্প ও কবিতা পড়া বা প্রকাশের এক অন্যতম ঠিকানা। এই ওয়েবসাইট তোমায় সুযোগ দেবে নতুন কিছু লেখার, নতুন কিছু সৃষ্টি করার। তোমার সৃষ্টিশীল জগতের মোটিভেশন হয়ে হাত বাড়িয়ে তোমার পাশে থাকবে। মনে রাখবে কোনো লেখক বা লেখিকা পরিচয়হীন নয়। তাদের লেখায় তাদের নিজেদের পরিচয়। তাই আর দেরি কেনো। তোমার লেখা গল্প বা কবিতা আমাদের Website এ প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করো আমাদের সাথে, আমাদের Email Id, "lovejunction506@gmail.com". এখানে তোমার লেখা গল্প কবিতা বা মোটিভেশনাল স্টোরি, তোমার real নাম দিয়ে পাঠিয়ে দাও। তবে সেটা অবশ্যই তোমার নিজের লেখা হতে হবে। আমরা তোমার Email এর অপেক্ষায় আছি । ততক্ষনে পল্লব মন্ডলের, "A Black Girl" গল্পটি রইলো তোমার জন্য ।
A Black Girl
Pallab Mondal
মেয়েটির নাম ছিলো শ্রেয়সী। কুচ কুচে কালো তার গায়ের রং । ভালোবাসা জিনিসটা কি এখনো তার অজানায় রয়ে গেছে । তবে প্রেমে পড়ার মাঝে যে এক অসম্ভব অজানা অনুভূতি রয়েছে, সেটা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছে সে। কিন্তু সেই অনুভূতিটি শেয়ার করার মতো আপন মানুষ তার নেই। তার ফেইসবুক প্রোফাইলের টাইমলাইনে ভরিয়ে দেয় লাভ স্টোরিতে । তার নিজের লাভ স্টোরিটা কল্পনায় থেকে যায়। সে জানে দুনিয়াটা অন্ধ। মানুষ গুলো আর ও অন্ধ । তাদের দৃষ্টি শক্তি এতো টাই কম। শুধু বাইরের জগৎটাই তারা দেখতে পায়। আর সেটাতেই তারা সুখ খুঁজতে থাকে। ভিতরের জগৎটা তাদের অজানায় থেকে যায়।
তাই ফেসবুকের প্রোফাইলে তার নিজের কোনো ফটো রাখেনি। তবে তার সুন্দর নাম টা রেখেছে। শ্রেয়সী। শ্রেয়সী মজুমদার। ছেলেরা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। "হাই, হ্যালো" বলে । কয়েক জনের সাথে কথা বলে সে। ভালো লাগে তার । ছেলে গুলো ও নাকি তাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। শুধু নাম দেখে, আর ওই প্রোফাইলে দেওয়া কিউট এক বেবির ফটো দেখে। ম্যাসেজের বন্যা বয়ে দেয়। কতই না কেয়ার করে। শ্রেয়সী হাসতে থাকে। দুনিয়াটা সত্যি অন্ধ। আজ যদি প্রোফাইলে নিজের ফটো রাখতো। সবাই হয়তো এড়িয়েই যেতো ।
যারা তাকে ম্যাসেজ করতো তাদের মধ্যে শ্রেয়সীর ও এক জনকে অসম্ভব ভাবে ভালো লাগতো। ছেলেটার নাম ছিলো সজল। সারাক্ষন ম্যাসেজ করতো। খোঁজ নিতো, বক বক করতো শুধু । খারাপ লাগার দিন গুলোই হাসিয়ে রাখতো। যার কারনে সজলকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলো শ্রেয়সী। তার মুখে হাসি ফোটানোর কারণ হয়তো সজল ছিলো। এতটা কেয়ার আগে কখনো পাই নি সে। এই প্রথম তার বুকে কিসের একটা অজানা ঝড় উঠলো। ঝড় উঠলো এক অজানা অনুভূতির ফিলিংসে। ভালোবাসা গভীর হতে থাকলো দুজনের।
সজল মেয়েটার প্রশংসায় মত্ত হয়ে যেতো । সে জানে ওটাই মেয়েদের দুর্বলতা। শ্রেয়সীর ও খুব ভালো লাগতো। এই প্রথম কারোর মুখে নিজের প্রশংসা শুনছে। নিজের প্রশংসা কার না ভালো লাগে। তবে এটা সত্যি, তার মায়াবী কন্ঠে ছেলেটি সত্যি পাগল হয়ে গেছিলো । সারাক্ষন ফটো চাইতো দেখার জন্য। শ্রেয়সী মিষ্টি সুরে জবাব দিতো,
- "কেন ? ফটো ছাড়া কি ভালোবাসতে নেই? "
প্রশ্নগুলোর উত্তর যেনো ছেলেটির গোছানোই থাকতো। সাথে সাথেই জবাব দিতো,
- "যার কথা গুলো এতো সুন্দর, সে না জানি কত সুন্দর। খুব মন চাইছে, জাস্ট একটা ফটো দিলেই হবে। শুধু একটি বার দেখবো আর চাইবো না কোনো দিন।"
- "আমি খুব খারাপ দেখতে। আমায় দেখলে তোমার পছন্দ হবে না।
- "ভালোবাসা রূপ থেকে নয় মন থেকেই আসে। আমি তোমাকেই ভালোবাসি তোমার রূপকে নয় ।"
শ্রেয়সীর মন গলে গেলো। মেয়েদের মন গলতে সময় লাগে না। প্রশংসায় এরা সহজেই গলে যায় । এটাই মি মেয়েদের সব থেকে বড়ো দুর্বলতা। আর সব দুর্বলতা গুলোই এক সময় মন ভাঙার কারন হয়ে দাঁড়ায়।
শ্ৰেয়সী ভাবতে লাগলো ছেলেটা হয়তো তাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে। প্রিয়জনকে দেখতে কে না চায়। সবারই ইচ্ছা হয় স্বপ্নের মানুষটাকে একবার বাস্তবে দেখার। শুনেছি সে নাকি ব্ল্যাক লাভার। ফেসবুকে সে কালো রং নিয়ে কতই না পোস্ট দেয়। কালো নিন্দাকারীদের নিয়ে কত না প্রতিবাদ জানায়। সে আর যাই হোক কালোকে ঘৃণা করবে না । মুহূর্তেই রাজী হয়ে গেলো সে।
ছেলেটিকে জানিয়ে দিলো, "ঠিক আছে কাল ফটো উঠে দেবো।"
ছেলেটির ও যেন ধৈর্যই ধরছে না। কেমন দেখতে হবে সে সারাক্ষন ভাবতে লাগলো। হয়তো খুব সুন্দরী হবে। ভয়েসটা যার এতো মায়াবী, না জানি তার চোখের চাহনিটা কতো মায়াবী। ঠোঁটের কোনায় ফুটে ওঠা হাসি গুলো হয়তো আমায় পাগল করে দেবে। সেদিন সারারাত ঘুমাতে পারেনি সজল। সত্যি বলতে, ঘুমই আসেনি তার। সময় যেনো কাটছিলোই না। কখন সকাল হবে আর তাকে দেখতে পাবে।
ওই দিকে শ্রেয়সী ও ঘুমায়নি সারারাত। সে ভাবতে লাগলো। ছেলেটি তাকে সত্যি ভালোবাসে তো। যদি তাকে দেখে ভালো না বাসে। তখন ও কে ছাড়া থাকবো কি করে। ও তো বলেছে এটাই ওর প্রথম প্রেম। প্রথম ভালো লাগা। আমাকে ছাড়া ও তো থাকতেই পারে না । আমার অভিমানে তার ও তো কষ্ট হয়। বেচারী সত্যি মন থেকে ভালোবাসে। তা না হলে এতটা কষ্ট কেউ পায়না। তাছাড়া ওর কালো রং তো ভীষণ প্রিয়।
পরের দিন সকাল থেকেই সাজতে লাগলো সে । এতো সাজেনি কোনোদিন। সাজার মধ্যে দিয়ে ও যে এতো আনন্দ থাকে। ভাবতে পারেনি সে। শাড়ি তার বরাবরই ভালো লাগে। তাই লাল একটা শাড়ী। ঠোঁটে লিপস্টিক। চোখে কাজল আর চুলটা খোঁপায় বেঁধে নিলো। সাজলে যে নিজেকে এতো সুন্দর লাগে ভাবতে পারে নি সে । আগে কখনো সাজেনি তো। সাজবে ও বা কার জন্য। আজ তো লাইফে কাউকে পেয়েছে। হারাতে চায়না সে।
সাজার পর অনেক গুলো ফটো উঠলো। তার মধ্যে পছন্দের কিছু ফটো সজলকে দিলো। অধীর আগ্রহে বসে ছিল সজল। ফটো গুলো দেখলো। কালো কুচকুচে তার গায়ের রং। স্বপ্নের পুরো বিপরীতে। ছেলেটি ভাবতে পারছে না এতো দিন এই মেয়েটার সাথে কথা বলেছে সে। ভাবতে লাগলো কি করবে। ওই দিকে শ্রেয়সী ও ম্যাসেজ করতে লাগলো,
- "কি পছন্দ হয়নি আমায়।"
কিন্তু কোনো reply পেলো না। শ্রেয়সী আবার ম্যাসেজ করতে লাগলো,
- "কিছু তো বলো, আমি কালো তাতে কি হয়েছে। ভালোবেসে দেখো। আমার ও সুন্দর একটা মন আছে। যেটা শুধু তোমার কথাই ভাবে।"
সজল তাও কোনো reply দিলো না। হয়তো সে কথা বাড়াতে চাই না। মেয়েটি রীতিমতো কেঁদে ফেললো। ফোন করতে লাগলো বার বার। তাও কোনো রেস্পন্স নেই। একসময় কলিং নাম্বারটা ও কারোর ব্লক লিস্টের খাতায় জমা পড়ে গেলো। আর ম্যাসেন্জারটা, "You can not reply this conversasion."
মোবাইলের wallpaper এ রাখা ছেলেটার ফটোটা দেখতে লাগলো। ভাবতে লাগলো দুনিয়াটাই রঙের খেলা। ফেইসবুক হোয়াটসআপ জুড়ে ব্ল্যাক লাভার টা show off মাত্র। দিন শেষে রঙের খোঁজে সবাই মেতে ওঠে। সবাই নিজের রঙের ছটায় অন্যকে আকৃষ্ট করে। শুধু তার রং টাই বেমানান। কালো বলে কি ভালোবাসতে নেই?
সমাপ্ত
আমাদের আর ও গল্প পড়ুন :-👇👇
(২) মনের ঘরে সেই তুমি
(৩) ধূপকাঠি
(৪) কেয়ারলেস
(৫) কলঙ্ক
(৬) নতুন অতিথি
(৭) ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ
(৮) দেবীরা বার বার ফিরে আসে না
(৯) অনুভূতি
(১০) ছলনা
0 Comments: