পল এহর্লিকের সফলতার কাহিনী। Best Powerful Motivational Success Story In Bengali । Bangla Success Story

 পল এহর্লিক 

         সহজ বাংলায় যাকে বলে একগুঁয়ে , জার্মান ডাক্তার পল এহর্লিক ছিলেন তাই । এই গো বা জেদ কেউ যদি কোনাে ভালাে কাজে লাগায় তাহলে অসাধ্য বলে কিছুই থাকে না । অন্তত পল এহর্লিককে দেখলে সে কথাটা সকলেই স্বীকার করবে । 

      আমি যে সময়ের কথা বলছি সে সময় সিফিলিসের কোনাে ওষুধ ছিল । । বিষাক্ত ঘা - এর যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কতাে রােগী তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেত । এমন কোনাে ওষুধ তখনাে আবিষ্কৃত ছিল না যাতে তাদের বাঁচানাে যায় কিংবা ঘায়ের যন্ত্রণা এতােটুকু কমানাে যায় । 

       পল এহর্লিক ছিলেন ডাক্তার । তার হাসপাতালে প্রতিদিন অনেক সিফিলিস আক্রান্ত রােগী আসত । তিনি তাদের ভর্তি করে নিতেন । কিন্তু ওই পর্যন্তই । হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অসহায় মৃত্যুর কোলে ঢেলে পড়ত তারা । 

       প্রতিদিন রােগীদের এই অসহায় ছটফটানি দেখতে দেখতে পলের মনে দৃঢ় কঠিন এক সংকল্প জাগল । যে করেই হােক , এ রােগের ওষুধ বের করতেই হবে । সারাদিন হাসপাতালে রােগী দেখতেন । তারপর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই ঢুকে যেতেন গবেষণাগারে । রাতের পর রাত কেটে যেত নানারকম ওষুধপত্র নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষায় । একাগ্র মনে কাজ করতে করতে কখন যে রাত কেটে গিয়ে ভাের হয়ে যেত খেয়ালই থাকত না তার । দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্রান্ত ক্লান্ত দেহে পরীক্ষাগার থেকে বেরিয়ে আসতেন । ঘুম জড়ানাে লাল লাল চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে হতাশভাবে বলতেন- নাঃ , আজও হলাে না । আরও একটা দিন ব্যর্থ হয়ে গেল । 

      একদিন , দুদিন নয়— দিনের পর দিন , মাসের পর মাস চলতে লাগল । পরীক্ষা নিরীক্ষা । একটি দিনের জন্যেও বাদ পড়ল না । একটি বারের জন্যেও মনে হল না , দূর , আমার দ্বারা হবে না , এ অন্য কেউ করবে । 

       একটি মুহূর্তের জন্যও আত্মবিশ্বাস হারালেন না । বরং প্রতিদিনের ব্যর্থতা আরাে দৃঢ় করল তার প্রতিজ্ঞা । জেদ আরাে চেপে ধরল শক্ত করে মস্তিষ্কের ঝুঁটি । 

       হয়তাে কোনােদিন সারা রাত অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর শরীর মন  অবশ হয়ে গেছে । পা আর চলছে না । ঘুমে ঢলে পড়েছে চোখ । মন বলছে , আর না- এবার থামা উচিত । 

      এমনি সময় হাসপাতালে এসেছেন । রােগীদের কাতর আর্তনাদ আর অসহায় মৃত্যু নতুন করে প্রতিজ্ঞা জমিয়ে তুলেছে তার অন্তরে । আবার ছুটে গেছেন গবেষণাগারে । নতুন করে শুরু করে দিয়েছেন কাজ ।

       মােট 418 বার পরীক্ষা করা হয়ে গেল । তবু হাল ছাড়লেন না । পলের গবেষণার কথা তখন অনেকের কাছেই পৌঁছে গিয়েছে । এঁদের মধ্যে একজন হলেন ডাক্তার হাজ । জাপানে বাড়ি । তার মনে হল পলকে তার সাহায্য করা উচিত । দেশ ছেড়ে , ঘরবাড়ি কাজকর্ম ফেলে এগিয়ে এলেন তিনি । এবার দুজনে মিলে যৌথভাবে চালাতে লাগলেন পরীক্ষা । 

       এতাে শুধু ওষুধের পরীক্ষা নয় , এ যেন তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা ।দৃঢ়তার পরীক্ষা । যত দিন যায় ততােই যেন আশা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকে । নিজের সঙ্গেই শুরু হল লড়াই । না , কিছুতেই হার মানলে চলবে না ।

       শুরু যখন করেছেন , তখন শেষও তাদেরকেই করতে হবে । এক এক করে ' 605 বার পরীক্ষা চালিয়ে গেলেন পল ও হাজ যৌথভাবে । প্রতিটি বারই বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে শুরু আর শেষে ঘাম মুছে পরস্পরের হাতে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা আগামী বারটির জন্যে । অবশেষে ৬০৬ তম পরীক্ষার ফল এলাে ইতিবাচক । আনন্দে চীৎকার করে উঠলেন সমস্বরে হয়েছে হয়েছে , পেয়েছি উই হ্যাভ ডান , উই হ্যাভ ডান ইট । সিফিলস রােগের জীবাণুকে খতম করতে সক্ষম এমন ওষুধের সন্ধান মিলেছে । বিজ্ঞানীরা ওষুধ তৈরি করে নাম রাখলেন সালভার্সান ।

        কিন্তু তাতেও পুরােপুরি সন্তুষ্ট হতে পারলেন কৈ ? এ ওষুধে মােটামুটি কাজ চলে যায় বটে কিন্তু ফল ঠিক আশানুরূপ নয় । অগত্যা আবার সেই গবেষণাগার । আবার সেই এক্সপেরিমেন্ট , সেই রাত্রি । জাগরণ , সেই আশা নিরাশার দোলায় দোল । 

        এভাবেই চলতে চলতে অবশেষে ৯১০ বারের মাথায় ফল এলাে আশ্চর্যজনক । দুজনেই চমকে উঠলেন পল এহর্লিক ও ডাক্তার হাজ । আনন্দে দিশাহারা হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলেন তারা । 

      দীর্ঘদিনের লড়ায়ের সঙ্গী দুই বন্ধু পরস্পরকে দুহাতে ধরে আনন্দে ঝকানি দিতে দিতে আনন্দে চীৎকার করতে লাগলেন — ইউরেকা ! ইউরেকা !

      হ্যাঁ ! ৯১০ বার পরীক্ষা চালানাের পর এসেছিল সাফল্য । এর মধ্যে কোনাে এক হতাশার মুহূর্তে তারা যদি এক্সপেরিমেন্ট চালানাে বন্ধ করে দিতেন , যদি হাল ছেড়ে দিতেন—

        কি হত বলাে তাে ? সিফিলিসের রােগীরা , আজও হয়তাে করত মর্মন্তুদ আর্তনাদ । ইতিহাসের কোথাও পল এহর্লিক বা হাজের নাম লেখা থাকত না স্বর্ণাক্ষরে ।

       সবচেয়ে বড় কথা— জীবনের এক সর্বোত্তম আনন্দের , মহােত্তম অভিজ্ঞতার স্বাদ কোনােদিনই তারা পেতেন না । যে আনন্দের দাম যতাে বেশি সে আন্দদের স্বাদও তত মধুর আর দীর্ঘ ।

        The sweetness of rest comes from the bitterness of labour .

আমাদের আর ও মহিয়সীদের সফলতার কাহিনী :-

0 Comments: