চার্লস ডিকেন্সের সফলতার কাহিনী | Charlse Dickence Success Story | Bangla motivational success story |

 চার্লস ডিকেন্স 

Adversity causes some men to break , others to break record . 

       বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ কথা সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স সম্বন্ধে এই প্রবাদটি ভীষণভাবে সত্যি । প্রতিকূলতা বা বাধার সামনে কেউ কেউ ভেঙে পড়ে আবার কেউ বা ভেঙে দেয় যাবতীয় রেকর্ড । 

      সত্যিই চার্লস ডিকেন্স নিদারুণ দুঃখকষ্টের মধ্যে জীবন শুরু করেছিলেন আর শেষ করেছিলেন সব রেকর্ড ভাঙা ইংল্যান্ডের জনপ্রিয়তম ঔপন্যাসিকের সিংহাসনে বসে । 

      এখানে কষ্ট করে আর কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাবার পথ খুঁজতে খুঁজতেই একদিন তিনি উঠে এসেছিলেন সার্থকতার শীর্ষে । 

       ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের পাের্টস মাউথে ডিকেন্সের জন্ম । বাবা জন ডিকেন্স নৌ বিভাগে সামান্য কেরাণীর চাকরি করতেন । দরিদ্রের সংসার অনেকগুলি ছেলেমেয়ে । তাই অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী ।জন বাধ্য হয়ে ঋণ করতেন , ঋণ করতে করতে এমন একটা সময় এলে যখন ঋণশােধ করবার কোনাে ক্ষমতাই রইল না জনের । দেনার দায়ে জেলে যেতে হল তাকে ।

        ডিকেন্সের বয়স তখন মাত্র বারাে বছর । পরিবারের একমাত্র রােজগেরে সদস্য জেলে যাওয়ায় ওই বারাে বছর বয়সের বালকটিকেই এগিয়ে আসতে হল সংসারের হাল ধরতে । স্কুল টুল ছেড়ে দিয়ে ডিকেন্স এক কারখানায় শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজে ঢুকে গেলেন । তার মাইনে ছিল প্রতিদিন সিলিং । এই টাকায় কোনােরকমে গ্রাসাচ্ছাদূনটুকু হয়তাে সম্ভব কিন্তু ঋণশােধ তাে সম্ভব নয় । তাই স্কুলে ফেরা আর হলাে না ডিকেন্সের । 

       তবে কারখানার হাড়ভাঙা পরিশ্রমের চাকরির হাত থেকে রেহাই পেলেন । বছর তিনেক বাদে এক উকিলের অফিসে অফিস বয় - এর কাজ পেলেন । বছর পনেরাে মাত্র বয়স তখন ডিকেন্সের । এই বয়সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে উঠেছে তার । জীবনের অন্ধকার দিক , শিশু শ্রমিকদের নির্যাতিত জীবন , কিভাবে মুনাফালােভী শয়তানেরা ছােটো ছােটো শিশুদের ধরে এনে ছুঁড়ে দেয় অন্ধকার জীবনে , তাদের দিয়ে চুরি , ডাকাতি , ছিনতাই , খুন ইত্যাদি যাবতীয় অপকর্ম করায়– এসবই জানা হয়ে গেছে তার । পরবর্তী জীবনে এই সমস্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি নিঙড়েই ডিকেন্স রচনা করেছিলেন তাঁর অবিস্মরণীয় অলিভার টুইস্ট , নিকোলাস নিকোলবি ইত্যাদি উপন্যাস । 

        যাই হােক , চার্লস ডিকেন্স উকিলের অফিসে বয়ের কাজ করতে করতে ক্রমে উন্নীত হলেন কেরাণীর পদে । উপার্জন কিছুটা বাড়ল ।

        নিজের চেষ্টায় অবসর সময়ে বইপত্র পড়ে পড়ে নিজেকে ক্রমাগত তৈরি করে চললেন চার্লস ডিকেন্স । ক্রমাগত এই আত্মনির্মাণ , দিনের পর দিন এই সাধনা তার সিদ্ধির পথ প্রশস্ত করে দিল । অল্পদিনের মধ্যেই চার্লস আদালতের রিপাের্টারের পদে উন্নীত হলেন ।

        কিন্তু পিতৃঋণ তখনও তার মাথার ওপরে ঝুলে আছে বিরাট একটা পাহাড়ের মতাে ।

        ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করে দিয়েছেন । জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতাই তার লেখার মশলা । চার্লস দেখলেন লেখালেখিতে বেশ দু পয়সা আসে । চাকরির বাইরে এভাবে যদি লেখালেখিটাই ভালােভাবে চালানাে যায় তাহলে হয়তাে একটু একটু করে একদিন পিতৃঋণের বিশাল পাহাড়টাকেও ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলা যাবে ।

        দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে , কষে কলম ধরলেন চার্লস ডিকেন্স । বিরাট কোনাে মহৎ উদ্দেশ্যে নয় , স্রেফ পিতৃঋণ পরিশােধের স্বপ্নে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের ছােটো বড়াে নানা অভিজ্ঞতাকে মূলধন করে একের পর এক লিখে চললেন উপন্যাস । দিনভর অফিসে কাজ করে এসে রাতভাের লেখা । লিখতে লিখতে একদিন দেখলেন সমস্ত ঋণ শােধ হয়ে গেছে তার বাবার । আর নিজে হয়ে পড়েছেন পৃথিবী বিখ্যাত ঔপন্যাসিক , চার্লস ডিকেন্স যাঁর প্রতিটি লেখাই বেষ্ট সেলার । 

       Adversity causes some men to break , others to break records 

                                                                 .-- William A Ward

সমাপ্ত 

0 Comments: