Bangla success story :- This success story written by jayanti Chakraborty. This story revolves around Sourav Ganguly like Sourav Ganguly biography. Sourav Ganguly life story in bengali. We are collected this type success story that revive your lost mind. You get more success story on Bengali in our website. And I think all success story will take place in your mind. So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story. Thank you so much.
সৌরভ গাঙ্গুলী
নামটি পড়েই নিশ্চই তােমরা ‘ দাদা ’ ‘ দাদা ’ বলে লাফিয়ে উঠেছ । ঠিকই তো , সারা পৃথিবীতে ব্যাটসম্যান অনেক আছেন , ক্যাপ্টেনও অনেক । তাদের রান আর সেঞ্চুরির সংখ্যাও চমকে যাবার মতাে , কিন্তু ‘ দাদা একজনই ।
সৌরভ সারা ভারতকে এক গভীর , পবিত্র আবেগের একসূত্রে বাঁধতে পেরেছিলেন । সে আবেগের নাম দেশাত্মবােধ ।
সৌরভ দেখিয়ে দিয়েছেন আমরাও পারি । শুধু পিঠ বাঁচাতে আর মার খেতে নয় , আমরাও তাে পারি অস্ট্রেলিয়া , দক্ষিণ আফ্রিকা , পাকিস্তানের মতাে দলগুলােকে পিটিয়ে ছাতু করে দিতে । আমরা কিস্যু নয়— আমাদের কিছুই হবে না এই মনমরা হাল ছাড়া ভাবটা যুব সমাজের বুক থেকে ভুস্ করে উধাও হয়ে যেত ব্যাট হাতে মহারাজ যখনই দাঁড়াতেন এসে বাইশ গজের রাজ্যপাটের মাঝখানে । তার সঙ্গে খেলত সারা ভারত । জয় , পরাজয়ে , আনন্দে , বিষাদে এক হয়ে যেত । ভারতীয় ক্রিকেটকে তিনি এক অতি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ আসনে বসিয়ে দিতে পেরেছেন । বিশ্ববাসীর কাছে পেয়েছেন অকুণ্ঠ প্রশংসা ভালােবাসা আর সম্মান । তিনিই ভারতের সর্বকালের সবচেয়ে সফল শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক । কিন্তু কত যে যন্ত্রণা , কত সূক্ষ্ম অপমান , কত নিমর্ম উপেক্ষা আর অবহেলার দুঃখ যে তাকে নীরবে সহ্য করতে হয়েছে , নিজেকে বার বার প্রমাণ করতে হয়েছে নীতিভ্রষ্ট , অযােগ্য , একপেশে বিচারকদের সভায়— সে ইতিহাস জানলে তার প্রতি আরাে বেশি শ্রদ্ধায় , আরাে বেশি ভালােবাসায় ভরে যাবে তােমাদের অন্তর ।
বেহালার বীরেন রায় রােডের এক আপাদমস্তক ক্রীড়ানুরাগী এবং ধনী পরিবারে সৌরভের জন্ম । ডাক নাম মহারাজ । ছেলেবেলায় ভালাে ফুটবল খেলতেন । দাদা স্নেহাশীষ ও ভালাে খেলােয়াড় । বাড়ির মধ্যেই অনুশীলনের জন্যে বাবা চণ্ডী গাঙ্গুলী সব রকম ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ।
হঠাৎ করেই কোচ দেবু মিত্রের চোখে পড়ে গেলেন । ছেলেটির মধ্যে বিপুল সম্ভাবনার অংকুর দেখতে পেয়ে নিজেই উপযাচক হয়ে এগিয়ে এলেন দেবু মিত্র । শুরু হয়ে গেল প্রশিক্ষণ-- ব্যাটে বলে । বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে খেলাতেও ফুটতে লাগল জৌলুস । বাঁ হাতে খেলেন , দ্রুত খেলেন । হাতে দিব্যি রান আছে । কিছু ব্যাটসম্যান আছেন যারা রান তােলার চেয়ে ক্রীজে টিকে থাকাটাই বেশি পছন্দ করেন । সৌরভ তাদের দলে নন । তিনি খেলেন পিটিয়ে । চুটিয়ে । ঘন ঘন ছক্কা আর চারের উল্লাসে ফেটে পড়ে দর্শকের গ্যালারি । একইসঙ্গে বলও করেন দুর্ধর্ষ । স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের ক্রিকেট অভিভাবক মহলের চোখ পড়ল তার দিকে । ক্রিকেট বাের্ডের প্রেসিডেন্ট তখন জগমােহন ডালমিয়া । ভারি ভালাে লেগে গেল তার ছেলেটিকে । প্রধানত তারই সুপারিশে এবং অবশ্যই আঞ্চলিক ম্যাচগুলিতে পারফরম্যানসের রেকর্ডের জোরে জাতীয় ক্রিকেট দলে সুযােগ পেয়ে গেলেন সৌরভ । তখন তার বয়স মাত্র আঠারাে বছর । সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে বি কম পড়ছেন । ১৯৯২ সাল সেটা ।অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একটিমাত্র ম্যাচে খেলার সুযােগ পেলেন তিনি । ভাগ্য প্রতিকূল । মাত্র ৩ রানেই আউট হয়ে গেলেন ।
বাদ পড়াটা স্বাভাবিক । পড়লেনও । কিন্তু অনেক মিথ্যা অপবাদও জুড়ে গেল তার নামের সঙ্গে । তিনি অহংকারী । দলের সঙ্গে মিশতে চান না , অলস , মাঠের মধ্যে জল বয়ে নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছেন । ইত্যাদি ইত্যাদি ।
সহযােগী ক্রিকেটাররা ব্যঙ্গ করে বললেন- বড়ােলােকের ছেলে । তাে , স্বয়ং মহারাজ ... কাজেই ...
আসলে যারা এতটুকু উন্নতির আশায় কর্তাদের তৈলমর্দন করেন দিনরাত , সৌরভ সেই প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী নন । তিনি হলেন প্রকৃত অর্থেই আর্যসন্তান ; বীর ও ব্যক্তিত্ববান পুরুষ । খেলােয়াড় হিসেবে নিজের খেলাটাকে ছাড়া আর কিছুকেই গুরুত্ব দিতে রাজী নন ।
চার বছরের জন্য জাতীয় দলে খেলার সুযােগ থেকে বঞ্চিত করা হল তাকে । সৌরভ ভেঙে পড়লেন না । জীবনের প্রথম পদক্ষেপেই এইরকম আঘাত পেয়ে যে রকম উদ্যমহীন হয়ে পড়ার কথা তিনি তা মােটেই হলেন না । বরং প্রতিদিন নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করে নিজের দোষত্রুটিগুলাে একে একে দূর করে ফেললেন ।
জনশূন্য ফাকা ইডেনের মাঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাকটিশ করতেন । তারপর বাড়িতে এসেই সেই খেলার রেকর্ডিং দেখতে বসে যেতেন । খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে দেখে নিজের ভুল ত্রুটিগুলি সযত্নে খুঁজে খুঁজে বার করতেন আর প্রতিজ্ঞা করতেন পরদিনের প্র্যাকটিসে একই ভুল আর করবেন না ।
এইভাবে সাধনায় আর সংগ্রামে কেটে গেল নির্বাসনের চারটি বছর । ১৯৯৬ সাল । আবার জাতীয় দলে ফিরে এলেন সৌরভ । নির্বাচিত হলেন ইংল্যান্ড সফরের জন্য । জীবনে এই দ্বিতীয় সুযােগ । কোনােমতেই একে হারালে চলবে না । নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে । না হলে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে চিরতরে ।
কঠিন প্রতিজ্ঞা বুকে নিয়ে দলের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন বিমানে ওঠার সিঁড়ির দিকে । হঠাৎ কানে এসে লাগল তীক্ষ্ণ ছুচের মতাে মন্তব্য ‘ দূর ! দূর ! ডালমিয়ার কোটার ক্রিকেটার । ও আবার কি করবে । ইংল্যান্ডে গিয়ে মার্কেটিং টার্কেটিং করে ফিরে আসবে ।'
অপমানে দুকান গরম হয়ে গেল যেন আগুনের মতাে জ্বলতে লাগল সারা মুখ , সারা সত্তা । কিন্তু না , হার মানলেন না তিনি । এ আগুনে নিজে না ছাই হয়ে বরং এই আগুনের আঁচেই নিজের প্রতিজ্ঞাকে আরাে বেশি করে তাতিয়ে নিলেন সৌরভ ।
ইংল্যান্ডের লর্ডসে , জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক মাঠে টেস্ট খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি করে ফেললেন । পরের টেস্ট টেন্টব্রিজে । আবার সেঞ্চুরি । অভিষেকেই এই অভূতপূর্ব সাফল্য , জাতীয় ক্রিকেটে তার আসন পাকা করে দিল । এবার তিনি নিশ্চিন্ত মনে খেলে যেতে পারবেন ,এরকম কথা অনেকেই ভাবলেন সেদিন । কিন্তু দুর্নীতি আর প্রাদেশিকতার কালরােগ তখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে জাতীয় ক্রিকেট বাের্ডের অন্দরমহলে । সবসময় তারা ছিদ্র খুঁজে যেতে লাগলেন কি করে এই দুর্বার বাঙালির ছেলেটাকে কোণঠাসা করা যায় ।
কিন্তু সৌরভ যে ক্রমাগতই ছড়িয়ে পড়ছেন কৃতিত্বের দিকদিগন্ত জুড়ে । টরেন্টোয় পরপর চারটে ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন । ১৯৯৯ - এর বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৮৩ রান করলেন । এতাে ভালাে পারফরম্যান্স তবু নিন্দা আর সমালােচনা তার পিছন ছাড়েনি কোনােদিন । যতােবড়াে ক্রিকেটারই হােন না কেন প্রতিটি ম্যাচেই তিনি সেঞ্চুরি করতে পারেন না । কারণ খেলােয়াড় মাত্রেই মানুষ— যন্ত্র নয় । অথচ বড়ােমাপের খেলােয়াড়ের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক বেশি । যখনই সেই প্রত্যাশার তুলনায় কম রান করছেন তখনই মুখর হয়ে উঠছে নিন্দুকরা ।
সৌরভের মাথার ওপরে তার ক্রিকেট জীবনের ১৩ টা বছর সমানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল একটা উদ্যত খাড়া । কখনাে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সাত নম্বরে , কখনাে বলা হয়েছে শুধু ব্যাটসম্যান নয় , এবার ভালাে বােলার হিসেবেও নিজের যােগ্যতা প্রমাণ করতে হবে । কখনাে বলা হল ওপেন করতে পারলেই দলে সুযােগ পাবে । সব পরীক্ষাতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হলেন তিনি ।
অবশেষে সত্যের কাছে হার মানতেই হল দুষ্টচক্রকে । ২০০০ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী হলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক । দল তখন ধুকছে । ম্যাচ গড়াপেটার দুষ্টখেলায় এক নম্বর দল । অন্তর্দ্বন্দ্বে , দলাদলিতে , পারফরম্যান্সে সবদিকেই ভারতীয় দলের তখন চরম অবক্ষয় । এই অবস্থায় সব দায়দায়িত্ব হাসিমুখে মাথায় তুলে নিলেন সৌরভ ।
অধিনায়কের সবগুলি গুণই তার মধ্যে বর্তমান । সৌরভের নেতৃত্বে , পক্ষপাতিত্ব হীন সহমর্মী মনােভাব দলের মধ্যে এক অভূতপূর্ব টিম স্পিরিট গড়ে তুলল । তিনি একের পর এক নতুন প্রতিভা খুঁজে এনে দলকে সমৃদ্ধ করলেন । যুবরাজ , হরভজন , ধােনী , জাহির খান বর্তমান জাতীয় দলের মাঠ কাঁপানাে খেলােয়াড় যাঁরা— সবই সৌরভের আবিষ্কার । কয়েক বছরের মধ্যে দলের ভেতরকার সব ভূত তাড়িয়ে দলকে চাঙ্গা করে তুললেন তিনি । আসতে লাগল একের পর এক জয় । ২০০২ - এ ইংল্যান্ডে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল । ইংল্যান্ডকে একেবারে গুড়িয়ে নিলেন সৌরভ । আনন্দে উদ্বেল অধিনায়ক লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গা থেকে খুলে ফেললেন জার্সি । ওড়াতে লাগলেন হু হু হাওয়ায় ।
বিশ্বক্রিকেটের ইতিহাসে এই অভিনব দৃশ্য অমর হয়ে রইল । অমর হয়ে রইল ভারতীয়দের মনের মণিকোঠায় । ঠিক আগের বছরই ২০০১ - এ পৃথিবীর সেরা দল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জিতল । অষ্ট্রেলিয়ায় হল ড্র । একটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন সৌরভ ।
কিন্তু অধিনায়কের বিরাট দায়িত্ব , সেইসঙ্গে দর্শকের প্রত্যাশার বিপুল চাপে সৌরভের ব্যক্তিগত খেলার মান সর্বদা ঠিক থাকছিল না । ২০০৫ - এ জিম্বাওয়ে সফরে এসেছে ভারত । সেটা জুন মাস । কোচ গ্রেগ চ্যাপেল বললেন , অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে ।
কিন্তু কেন ? সৌরভ কিছুতেই বুঝতে পারলেন না তাঁর খামতিটা কোথায় ? চ্যাপেলের কথার উত্তরে তিনি তার হাতে তুলে দিলেন নিটোল একটি সেঞ্চুরি । মান - অভিমান বা বাদানুবাদ নয়— সৌরভ তার সব উত্তর দিয়েছেন ব্যাটের ঘায়ে । কিন্তু তবুও তাকে বাদ পড়তে হল আবার । কনুই - এর চোটের জন্য চ্যালেঞ্জার সিরিজ খেলতে পারলেন না । আরও নানা অজুহাত দেখিয়ে সৌরভের অধিনায়কত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হল । দল থেকেও বাদ পড়লেন তিনি । অথচ তার ঝুলিতে তখন ৬০০০ - এর বেশি রান । ১৫ টি সেঞ্চুরি । একমাত্র সুনীল গাভাস্কার ছাড়া আর কোনাে ভারতীয় ক্রিকেটারের কেরিয়ার গড় কখনােই ১০ ছাড়ায়নি । অথচ সৌরভের গড় ৪০ - এর বেশি ।
তবুও এই বঞ্চনা তাকে সহ্য করতে হল । সহ্য করতে হল এত বড়াে অন্যায় অবিচার । না , তবু সৌরভ ভেঙে পড়লেন না । হাল ছাড়লেন না। অবিশ্বাস্য মনের জোর নিয়ে আবার ফিরে এলেন নিরলস অনুশীলনে । জানতেন জবাব মুখে দিলে তা গুরুত্ব হারায় । জবাব দিতে হবে ব্যাটে । খেলা ছাড়লে চলবে না । তাই বাংলা দলের সঙ্গে একের পর এক ম্যাচ খেলতে গিয়েছেন । কোথায় লক্ষ লক্ষ দর্শকের করতালি মুখরিত স্টেডিয়াম আর কোথাও এই নির্জন , নিষ্প্রাণ ঘরােয়া ক্রিকেট । তবু প্রতিটি অখ্যাত অজ্ঞাত খেলােয়াড়ের সঙ্গে বন্ধুর মতাে মিশেছেন । দুর্বলতম বােলারকেও খেলেছেন একান্ত মনােযােগের সঙ্গে । কাউকে উপেক্ষা বা অবহেলা বা তাচ্ছিল্য করেন নি । কারও বিরুদ্ধে অভিমান বা ক্ষোভ উগরে দেন নি । অভিযােগ আনেন নি কারও নামে । শান্ত , অবিচলিত ভাবে সমস্ত অন্যায় সহ্য করেছেন মুখ বুজে ।
কী দুঃসময় না গেছে তার তখন । নিতান্ত ঘনিষ্ঠরাও তখন ধরে নিয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলি শেষ হয়ে গেছেন । ফুরিয়ে গেছে তার সমস্ত শক্তি ।
ছােট্ট মেয়ে সানা প্রশ্ন করেছে ,
-বাবা , তুমি আর খেলাে না কেন ?
–আমি যে আর খেলতে পারি না মা । নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিয়েছেন সৌরভ ।
কিন্তু পারলেন । আবার দুর্দান্তভাবে ফর্মে ফিরে এলেন সৌরভ গাঙ্গুলী নামের বিস্ময় । দীর্ঘ ১০ মাস পর আবার জাতীয় দলে জায়গা করে নিলেন । প্রথম খেললেন দক্ষিণ আফ্রিকায় । ৫১ রানে নট আউট । ২০০৭ - এ আবার কাপিয়ে দিলেন সারা পৃথিবী । পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গালােরের মাঠে ২৩৯ রান করলেন । কমাস পরেই নভেম্বরে খেলতে নামলেন ইডেনের মাঠে । বাঙালির সংবাদমাধ্যমগুলিই বিরূপ সমালােচনায় , সবচেয়ে বেশি বিরােধিতা করেছে তার সঙ্গে । এদের একটা উচিত জবাব দিতেই হবে ।
ইডেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেই নিটোল তাজা একটি সেঞ্চুরি ছুঁড়ে দিলেন । চুপ করিয়ে দিলেন তাদের , যারা এতদিন ধরেই নিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলি ইতিহাস হয়ে গেছেন । সৌরভের এই দুর্দান্ত কামব্যাকে সবচেয়ে কষ্ট পেলেন তারই দলের কোচ গ্রেগ চ্যাপেল । এই অস্ট্রেলিয় ভদ্রলােককে সৌরভই এনেছিলেন দলের প্রশিক্ষক করে । কিন্তু চিরবিজয়ী অস্ট্রেলিয়ার মুকুট ধুলােয় লুটিয়ে দেয় যে দুর্দম , অহংকারী ভারতীয় ছেলেটা , তাকে ছলে বলে কৌশলে ধ্বংস করতে না পারলে যে অস্ট্রেলিয় ভদ্রলােকটির শান্তি নেই । তাই , গােপনে চলতে লাগল গভীর ষড়যন্ত্র । ২০০৮ - এ অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্টে যথেষ্ট ভালাে করা সত্ত্বেও একদিনের সিরিজে টিম থেকে বাদ পড়লেন সৌরভ । কিন্তু কেন ? তার রেকর্ড তাে কারাে চেয়ে খারাপ নয় । একদিনের ম্যাচে ভারতের অন্যতম সেরা জুটি হলেন শচীন টেন্ডুলকর ও সৌরভ । দুজনের প্রথম উইকেটে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ ২৬ টি । একদিনের ম্যাচে মােট রান ১১,০০০ | একদিনের ম্যাচে নিজস্ব সেঞ্চুরি— ২১ টি ।
সমস্ত কিছু ভুলে গেল তারা । নির্বাচক দলের কানে কি মন্ত্র শােনানো হল কে জানে ! এরপর ইরানি ট্রফি থেকেও বাদ পড়লেন তিনি । নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি তখন দিলীপ বেঙ্গসরকার । যে সৌরভের নেতৃত্বে ভারত সবচেয়ে শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে , তাদেরই মাটিতে হারিয়েছে ইংল্যান্ড , ওয়েস্ট ইন্ডিজ , পাকিস্তানকে সেই সৌরভকে উপযুক্ত কোনাে কারণ ছাড়াই আবার বিতাড়িত করা হল দল থেকে ।
বিবেক , বুদ্ধিহীন মিডিয়া আবার মুখর হল নিন্দায় । সৌরভ বুঝলেন ‘ এখানে প্রতিবাদ অর্থহীন । অর্থহীন যােগ্যতা প্রদর্শন । কিছুদিন পর শ্রীকান্ত বাের্ডের নির্বাচক হয়ে এসে সৌরভকে আবার ফিরিয়ে আনলেন দলে । কিন্তু না । ততােদিনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন সৌরভ । অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এবার প্রথমদিন মাঠে নেমেই জানিয়ে দিলেন , বিশ্বক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন । আর খেলবেন না তিনি । ভেবেছিলেন ফেরার সময় চিরশত্রু অস্ট্রেলিয়াকে , গ্রেগ চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়াকে একটি সুন্দর সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে যাবেন , কিন্তু একটুর জন্য হল না । ৮৫ রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হল । কিন্তু দল জিতল । অস্ট্রেলিয়ার হল ভরাডুবি । দীর্ঘ কুড়ি বছর পর টেস্টে ২ ম্যাচের ব্যবধানে হারল তারা । লর্ডসের মাঠে যে সূর্যোদয় হয়েছিল ১৩ বছর আগে , নাগপুরের মাঠে তা হল অস্তগামী । কিন্তু সূর্যের অস্তিত্ব কে অস্বীকার করবে ? সেদিন যে ছেলেটিকে সবাই অবহেলা করেছিল আজ তিনিই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এর প্রেসিডেন্ট ।
সৌরভ গাঙ্গুলী শুধু একজন চূড়ান্ত সফল বাঁহাতি ক্রিকেটার নন , তিনি অটুট মনােবলের প্রতীক । কিছুতেই ভেঙে না পড়ার , হার না মানার অপর নামই হল সৌরভ গাঙ্গুলী । নীচতা , সংকীর্ণতা আর আবেগ দুর্বলতার উর্ধ্বে ১০০ ভাগ পেশাদারিত্বের নাম সৌরভ গাঙ্গুলী । মানুষ যে পাথর তার দিকে ছুড়ে দিয়েছিল তাই দিয়েই তিনি তৈরি করেছিলেন তার ইমারত ।
Adversity causes some men to break , others to break records .
– Villiam A Ward
আমাদের আর ও মহিয়সীদের সফলতার কাহিনী :-