শ্রুতি মেনন | Bangla Motivational Success Story | inspirational stories of success

তোমার লেখা গল্প বা কবিতা আমাদের Website এ প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারো আমাদের সাথে, আমাদের Email Id, "lovejunction506@gmail.com".আমরা তোমার Email এর অপেক্ষায় আছি । ততক্ষনে এই কবিতাটি তোমার জন্য ।  

শ্রুতি মেনন     

    মেয়েটির নাম শ্রুতি । শ্রুতি মেনন । ব্যাঙ্গালােরে একটি সাজানাে গােছানাে ছিমছাম ফ্ল্যাটে নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে থাকত শ্রুতি । মাত্র ১৫/১৬ বয়স তার । কাছেই একটা নামী স্কুলে পড়ে শ্রুতি । পড়াশােনাতেও সে বেশ ভালাে । বাবা মা আর স্কুলের শিক্ষিকাদের চোখে একরাশ স্বপ্ন শ্রুতিকে ঘিরে । স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষায় নিশ্চয় খুব ভালাে ফল করবে সে স্বপ্ন দেখে শ্রুতি ।

       কিন্তু সহসা কোথা থেকে যেন ছুটে আসা এক উদ্দাম ঝােড়াে হাওয়া জীবনটাকে তার তছনছ করে দিল মুহূর্তে । 

       পাড়ার ছেলে রাজেশ । স্কুলে আসা যাওয়ার পথের ধারে প্রায় প্রতিদিনই দাঁড়িয়ে থাকত সে । প্রথম প্রথম শ্রুতি দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যেতাে । কিন্তু ক্রমে ক্রমে ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস হয়ে দাঁড়াল । 

       রাজেশ মস্তান টাইপের ছেলে । সে শ্রুতিকে প্রথম প্রথম নানারকম তােষামুদে কথাবার্তা বলে বাগে আনবার চেষ্টা করত । কিন্তু শ্রুতি একেবারেই পাত্তা দিচ্ছে না দেখে রাজেশের জেদ ক্রমশ বেড়ে যেতে লাগল । সে প্রতিদিন শ্রুতিকে শাসাতে লাগল এই বলে যে যদি তার কথা শ্রুতি না শােনে তবে তাকে সে চরম শাস্তি দেবে । 

      শ্রুতি শক্ত চরিত্রের মেয়ে । মেয়েমানুষ হলেও সে বুঝতে পেরেছিল এ ধরনের সমাজবিরােধী ছেলেদের সংস্রব কতােখানি বিপজ্জনক । তাই সে সাবধানে রাজেশকে এড়িয়ে চলত । এমনকি স্কুল যাবার একটা বিকল্প পথও সে বার করে নিল ।

       কিন্তু রাজেশ এতাে সহজে ছাড়বার পাত্র নয় । পরদিন বিকল্প এই পথের পাশেই যথাসময়ে তাকে দেখা গেল । এবার সে সরাসরি এসে দাঁড়াল স্কুলের পােশাক পরা বালিকাটির সামনে ।

      —আমি জানতে চাই , তুমি আমাকে বিয়ে করবে কিনা ! আচমকা এরকম ঘটনায় হকচকিয়ে গেল শ্রুতি । কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে কঠোর ও ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিল সে ,

      —প্রাণ থাকতেও নয় । 

      —তার কারণ ?

       —কারণ তােমাকে আমি ঘৃণা করি ।

       –বেশ , এর প্রতিফল তােমাকে পেতে হবে । 

        কথাটা শুনেও তেমন গুরুত্ব দিল না শ্রুতি । মাস্তানি মার্কা হাল্কা শাসানি ভেবে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করল ।

       পরদিন স্কুলের পােশাক পরে দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলেছে শ্রুতি । হঠাৎ পথের ধারে ঝােপের পিছন থেকে সাঁ করে ছুটে এলাে একটা অ্যাসিড বাল্ব তার মুখ লক্ষ করে । মুহূর্তে কী ঘটে গেল ! অসহ্য যন্ত্রণায় তীব্র আর্তনাদ করতে করতে দু হাতে মুখ ঢেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল শ্রুতি এবং জ্ঞান হারাল তৎক্ষণাৎ |

       কয়েকদিন পর হাসপাতালে জ্ঞান ফেরবার পর শ্রুতি জানতে পারল অ্যাসিডে পুড়ে চিরদিনের মতাে নষ্ট হয়ে গিয়েছে তার চোখ আর কান । চিরদিনের মতাে অন্ধ আর বধির হয়ে গিয়েছে সে । সমস্ত মুখ , বুক আর মাথায় অসহ্য দাহ । চামড়া পুড়ে পুড়ে একটু একটু করে কুঁচকে যাচ্ছে আর সমস্ত উর্ধাঙ্গ ধারণ করছে এক বীভৎস রূপ । সে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্যের সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে । প্রতিটি মুহূর্তে মনে হচ্ছে এ নরক যন্ত্রণা সহ্য করে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালাে । 

       কিন্তু না , শেষপর্যন্ত হাল ছাড়ল না শ্রুতি । সে ভাবল এভাবে যদি সে জীবন থেকে পালিয়ে যায় তা হলে রাকেশের মতাে গুণ্ডা বদমাইশরা আরাে বেশি প্রশ্রয় পেয়ে যাবে । তাকে জিততেই হবে । তার জিত মানেই রাকেশদের হার । তাই এই যুদ্ধটা অর্থাৎ বেঁচে ওঠার যুদ্ধটা জিততেই হবে শ্রুতিকে যেমন করেই হােক ।

        কিন্তু এরকম রুগীকে সুস্থ করে তুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে গেলে প্রচুর প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন । শ্রুতির বাবা একজন দর্জি । তবু একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজের সমস্ত সঞ্চয় উজাড় করে ঢেলে দিলেন । নিতান্ত ছেলেমানুষ শ্রুতির তীব্র মনের জোর আর চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখে সেদিন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানও । 

       সবার সহযােগিতা পেয়ে মনের জোর বেড়ে গেল শ্রুতির । দ্রুত সেরে উঠতে লাগল সে । যমের সঙ্গে প্রথম রাউন্ডের লড়াইয়ে বীরের মতাে বিজয়ীর হাসি হাসতে হাসতে হাসপাতাল থেকে একদিন ঘরে ফিরে এল শ্রুতি । 

      কিন্তু বাড়ি ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতাে অবস্থা হল তার ঘৃণায় - আতঙ্কে - লজ্জায় । নিজের অতিপ্রিয় কিশােরী শরীরটার দিকে আর তাকাতে পারল না সে একবারও । তবে কি সারাজীবন এই বিভৎস রূপ নিয়ে গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হবে তাকে ? না , হার মানলে চলবে না ।

      কিছুতেই হার মানবে না সে । যতাে কষ্টই হােক- যতাে দিনই লাগুক ! শ্রুতির বাবা মা প্লাস্টিক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বললেন । ছ বছরে মােট ৩৯ বার অপারেশন করা হল তার শরীরে । ধীরে ধীরে ফিরে এলাে হারানাে রূপ । যদিও সম্পূর্ণ নয় তবু বছরের নিরলস চেষ্টায় অনেকটাই স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে এলাে শ্রুতি । 

        শরীরের জন্য পড়াশােনায় বাধা পড়েছিল বলে টেনথ স্টান্ডার্ডের পরীক্ষাটাও দেওয়া হয়ে ওঠেনি তার । এ কারণে সবসময় হীনমন্যতায় ভুগত শ্রুতি । বয়সটাও অনেকটাই বেড়ে গেছে । এখন তাে আর স্কুলে অল্পবয়সী মেয়েদের সঙ্গে পড়তে যাওয়া সম্ভব নয় । 

        তবে কি মূখ হয়েই থাকবে সে আজীবন ? না , শ্রুতি কিছুতেই হার মানবে না । বাবা মা - এর সাহায্যে বইপত্র যােগাড় করে ঘরে বসেই পড়াশােনা করে পরীক্ষা দিল শ্রুতি এবং যথেষ্ট ভালাে নম্বর পেয়েই পাশ করল সে । এবার বাবাকে সাহায্য করার জন্য ঘরে বসে টেলিমার্কেটিংয়ের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে লাগল শ্ৰতি । নিজের স্বােপার্জিত অর্থে সংসারকে সাহায্য করছে সে , একটু একটু পরিশোধ করতে পারছে চিকিৎসার জন্য হয়ে যাওয়া বিপুল ঋণ । এই চিন্তা থেকেই হারানাে আত্মবিশ্বাস একটু একটু করে ফিরে আসতে লাগল শ্রুতির মনে । সে বুঝতে পারল সেও পাচজনের মতােই সহজ সুস্থ , স্বাভাবিক একজন দায়িত্বশীল মানুষ । সেও পারে সংসারের দায়িত্ব নিতে , বাঁচতে , বাঁচাতে । 

       এখন শ্রুতি বড়াে একটি কোম্পানিতে চাকরি করে । আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ শ্রুতি সাধারণ হয়েও আজ অসাধারণ । অশুভ শক্তির সঙ্গে অসম যুদ্ধে সসম্মানে জয়ী হয়ে সে আজ সকলের আদর্শ , সমস্ত দুঃখী , দুর্গত ও উৎপীড়িত মানুষের কাছে এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা । 

         Real leaders are ordinary people with extraordinary determinations .

আমাদের আর ও মহিয়সীদের সফলতার কাহিনী :-

Success Story :- This success story written by  Jayanti chakrabarty.This story revolves around Sruti Menon like Sruti Menon biography. We are collected this type success story that revive your lost mind. You get more success story on Bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind. So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story. Thank you so much

0 Comments: