নারী
রুমা রানী ঘোষ
নারী জাতিকে আমরা যতই আবেগি বলি, দুর্বল বলি না কেন, তাদের কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা কিন্তু সত্যিই অসাধারণ;
নারীরা হয়তো তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়ে চিৎকার করে, ছোট ছোট বিষয়ে উহ, আহ করে কেঁদে দেয়,
পিঁপড়ের কামড়ের মতো সামান্য ব্যথার ইনজেকশনের সূচ ফোটানোটর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত ভয়ে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলে, কিন্তু এই নারী জাতিই আবার প্রয়োজনে ডেলিভারির মতো কয়েকশগুণ কষ্টও সহ্য করে নেয় অবলীলায়;
নারী জাতি বড্ড অভিমানী প্রকৃতির... এরা ভালোবাসার মানুষের গায়ে যেমন কোনো রকম কষ্টের আচ লাগতে দিতে পারে না, ঠিক তেমনি ভালোবাসার মানুষগুলোর সামান্যতম অবহেলা, অসম্মান, অনাদরও নিজেরা মেনে নিতে পারে না, তাই তো ছোট খাটো বিষয়ে-- অভিমান করে, ঝগড়া করে, কখনো কখনো ছোট একটি আঘাতে অঝোরে কেঁদেও দেয়, কিন্তু! এই নারীরাই আবার চিরচেনা মানুষ, পঁচিশ বছরের জীবন, মা-বাবা সহ প্রিয় মানুষজনকে ছেড়ে থাকার কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করে নেয় দিব্যি;
কখনো কি ভেবে দেখেছেন? নারী জাতিকে জন্মের পর থেকেই কতটা ত্যাগস্বীকার করতে হয়!
প্রথমে তাদের ত্যাগ করতে হয় নিজেদের ইচ্ছে গুলোকে, তার পর তাদের ত্যাগ করতে হয় মনের অনুভূতি গুলোকে, তার পর ত্যাগ করতে হয় পিতার ঘর, বিয়ের পর ত্যাগ করতে হয় সকাল দশটা অব্ধি সাধের ঘুম, ইচ্ছেমতো চলাফেরা, মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, হুটহাট পছন্দের জিনিসটি খেতে দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া, নিজের স্বপ্ন, সন্তান লাভের পর ত্যাগ করতে হয় নিজের ক্যারিয়ার, সখ-আহ্লাদ, পছন্দের খাবারটি এমনকি রাতের ঘুমও;
নারী জাতি প্রিয়জনের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে দেয়,
সারাদিন কষ্ট করে রান্নাবান্না করে স্বামী- সন্তানের ক্ষুধা দূর করার মধ্যেই তারা শান্তি খুঁজে পায়, অসহ্য গরমে যখন একচুল নড়তে ইচ্ছে হয় না, তখনও তারা রান্না ঘরে গোসল করার মতো ঘামে ভিজে আমাদের জন্য সবার পছন্দের খাবারটি আলাদা আলাদা ভাবে রান্না করে দেয়, তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও তারা যখন খাবারের পর আমাদের তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে দেখে, তখন তারা সারাদিনের সমস্ত কষ্টের কথা ভুলে যায়;
এ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়ার জন্য আমার, আপনার, আমাদের মায়েদের দিকে একটু খেয়াল করলেই নিশ্চিত হতে পারবেন;
অসীম ধৈর্য, ত্যাগ, কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা! আপনজনদের খুশী রাখার জন্য নিজের সবকিছুকে বিসর্জন দেয়ার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা একমাত্র নারী জাতিকেই দিয়েছেন...তাই নারী জাতিকে বুঝতে শিখুন, তাদের রাগ-অভিমানগুলোকে একটু ভালোবাসা দিয়ে ভাঙ্গাতে শিখুন, আপনার বেটার আফ হিসেবে তাদের গুরুত্ব ও মর্যাদা দিতে শিখুন;
জেনে রাখবেন! নারী জাতি কিন্তু ভীষণ রকমের লোভী... এরা ভালোবাসা, সম্মাম, শ্রদ্ধা, গুরুত্ব, বিশ্বাস, আস্থা এই সম্পদ গুলোর প্রতি সবসময় মুখিয়ে থাকে আর এই ছয়টি সম্পদ পেলে তারা সে মানুষটির প্রতিও
ভীষণ ভাবে মা'য়া'র জালে দূর্বল হয়ে জড়িয়ে যায়, এই জাল কেটে বেড়িয়ে আসার সাধ্যি কোন নারী জাতির নেই, এই জাল কেটে বেড়িয়ে আসার সাধ্যি একমাত্র মৃ'ত্যু;
তবে হ্যাঁ! আরেকটি কথা তো না বললেই নয়... নারী জাতি যেমন এই ছয়টি সম্পদের মা'য়া'র জাল কেটে বেরুতে পারে না, ঠিক তেমনি তারা আবার-- অবহেলা, অনাদর, অসম্মান, গুরুত্বের অভাব, ভালোবাসার অভাব সহ্য করতে পারে না, তাই তাদের সাথে কখনো খারাপ ব্যাবহার করবেন না, আর আপনি যদি কোনো কারণে তাকে সম্মান দিতে নাও পারেন, তবে অন্তত অসম্মান করবেন না;
নারী জাতির মন খুব নরম...সেই নরম মনে কখনো আঘাত করবেন না, কখনো কষ্ট দিবেন না, কেননা নারী-রা অবহেলা, অনাদর, অসম্মান, গুরুত্বের অভাব, ভালোবাসার অভাব এই বিষয়গুলো মেনে নিতে পারে না, নারীরা যেমন নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসতে জানে, ঠিক তেমনি আঘাতের পর আঘাত জমতে থাকলে নিজেকে গুটিয়েও নিতে পারে, তাই নারীদের একটু বুঝতে চেষ্টা করুন;
নারীদের এক গুণ ভালোবাসা দিলে...তারা আপনাকে দ্বিগুণ ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবে, তাই! তাদের শুধু আপন করে একটু ভালোবাসা, সম্মান, গুরুত্ব দিয়ে দেখুন, প্রয়োজনে সে পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াই করবে শুধুমাত্র আপনার জন্য;
নারী জাতি সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ সৃষ্টি...একটি নারীই পারে তার অগুছালো প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসার মায়ায় যত্ন করে গুছিয়ে রাখতে;
আর তাই তো নারীদের "মায়াবতী" বলা হয়...কারণ! তারা ব্যবহার করা কপালের টিপ'টা আঠা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেটা যত্ন করে রেখে দেয়, একজোড়া কানের দুলের একটা হারিয়ে গেলেও অন্যটা ফেলে না দিয়ে খুব যত্ন করে রেখে দেয়, ঘরের টুকিটাকি এমন হাজারটা ফেলনা জিনিসটাও তারা যত্ন করে তুলে রাখে, এর আসল কারণ হলো "মায়া" মায়ার টানে তারা ফেলনা জিনিসটাই যে জায়গায় ফেলে দিতে পারে না, আর আমি আপনি তো সে জায়গায় জল জ্যান্ত মানুষ, তার জীবন জুড়ে থাকা একটি অধ্যায়;
অসংখ্য কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করেও অনেক সময় নারীরা মায়ারটানে একটা সম্পর্ক, একটা সংসার টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে আর এর জন্যই নারীরা মায়াবতী আর মায়াবতী শব্দের কোন পুংলিঙ্গ নেই।
"নারীদের মতো মায়া পুরুষের কখনোই হয় না আর তাই তো মায়াবতী শব্দের কোন পুংলিঙ্গ নেই"।
সমাপ্ত
আমাদের আর ও গল্প পড়ুন :-👇👇
- ধোঁয়াশা শহরে
- মনের ঘরে সেই তুমি
- ধূপকাঠি
- কেয়ারলেস
- কলঙ্ক
- নতুন অতিথি
- রূপান্তর
- ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ
- দেবীরা বার বার ফিরে আসে না
- অনুভূতি
- ছলনা
- বাবা
- A Black Girl
- প্রথম প্রেম
- বন্ধুত্বের অজুহাত
- চিংড়ী মাছ
- ভালো নেই আমি ও
- রূপান্তর
- আগামী