চিংড়ি মাছ
Hawa Mania
দশ রমজান পার হয়ে বাড়িতে আসবে মিতু, আজ কেবল পাঁচটা রোজা গেলো।
মাছ বাছতে বাছতে শাশুড়ী মায়ের কথা শুনছিলাম। হঠাৎ মায়ের কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়লো, আমি চিংড়ি মাছ এতো পছন্দ করি। মা ছোট মাছের মধ্যে একটা চিংড়ি মাছ পেলেও আমার জন্য আলাদা ভাবে রেখে দিতো।
রোজা রেখে আজ খুব এই মাছ দিয়ে আমার ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, এখন আমি শ্বশুর বাড়িতে থাকি নিজের ইচ্ছে আশা গুলো অপ্রকাশিতই রয়ে যায়। মুখ ফুটে শাশুড়ী মা কে বলতে পারলাম না যে, একটু মাছ রান্না করি মা আমার খেতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা আমি একটু খেতে চাইলে কি উনি মুখের উপর না করে দেবে, এমন একটা ভাবনায় আর বলা হলো না। প্যাকেট এ ভরে মাছ গুলো ফ্রিজে রেখে দিলাম।
শ্বশুর বাড়িতে এই প্রথম রমজান আমার, মায়ের একমাত্র মেয়ে হিসেবে বেশ সাহায্য সহযোগিতা করতাম মা'কে সকল কাজে। কিন্তু এখানে দায়িত্ব টা বড় জন্য সামলিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমায়।
পাঁচ মাস হলো বিয়ে হওয়ার, এরমধ্যে শাশুড়ী মায়ের সাথে থেকে এ বাড়ির সব নিয়মকানুন ও রান্না শিখে ফেলেছি।
যোহরের নামাজ আদার করে একটু কোরআন শরিফ পড়ে রোজকার নিয়মের মতো আজও রান্না ঘরে ঢুকেছি রান্না করার জন্য। প্রচন্ড রোদ ও গরম আজ, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার আমার।
শাশুড়ী মা তরকারি কাটছেন এসে দেখি, রোজ তাই করেন তিনি। তরকারি কাটা, ইফতার রেডি করা এবং সকলকে খেতে দেন তিনি।
কি কি রান্না হবে তিনি বলে দেন, রমজান মাস মায়ের বাবা-মা এ বাড়িতেই থাকেন। বয়স্ক মানুষ তাদের খাবারের তালিকাও ভিন্ন, তবে দুধ ও কলা পেলে তাদের আর কিছু লাগে না।
বড় মাছ ভেজে নিয়ে তারপর ভুনা করতে হবে আজ সেই সাথে সজিনা ডাঁটার তরকারি ও চাল কুমড়া ভাজি। একটা তরকারিও পছন্দ করি না আমি। ছোট বেলা থেকে এই এক মহা সমস্যা আমার, সবরকম খাদ্য গ্রহণ করতে পারি না।
মা বলতো তুই যা পছন্দ করিস আমি তোর জন্য তাই করে দিই, শ্বশুর বাড়িতে গেলে কিন্তু এমনটা পাবি না রে মা। আবারও মন খারাপ হয়ে গেলো আমার।
কিছুক্ষণ থেকে আমার ছোট ননদ এর ছয়মাস বয়সের বাচ্চা টা কেঁদেই যাচ্ছে। রান্না করা বন্ধ রেখে তাদের ঘরে ছুটলাম, কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদছে বাচ্চাটা ওর মা এটা সেটা দেখানোর পরও চুপ করাতে পারছে না।
আমি বাচ্চা টা কে কোলে নিয়ে একটু বাহিরে বের হলাম, যদিও অনেক রোদ বাহিরে কিন্তু বাহিরে বের হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চা চুপ হয়ে গেলো। শ্বশুর বাড়িতে ঝামেলা হবে বলে ছোট ননদ ছোট বাচ্চা কে নিয়ে বাবার বাড়িতে এসেছে, সঙ্গে ছোট একটা মেয়েকেও(শহীদা) এনেছে তাদের সাহায্যের জন্য।
সেখানে কিছুক্ষণ থেকে, রান্না ঘরে আসলাম। কাজের খুব চাপ হয়ে যায় আমার, কিন্তু মুখে বলতে পারি না। দুটো চুলা জ্বালিয়েও রান্না শেষ করতে করতে অনেক সময় লাগে। শহীদা প্রায় টুকটাক সাহায্য করে আমায়, মা রান্না ছাড়া বাইরের কাজ গুলো বেশি দেখে।
ছোলা বুট, পিঁয়াজু, ডিমের চপ, বেগুনি ও মিষ্টি পায়েস কিংবা সেমাই রোজ তৈরি করতে হয়। ইফতার তৈরি হয়ে গেলে রাতের খাবারের জন্য রান্না করা শুরু করি।
ভাত ছাড়া সব রান্না শেষ করে ইফতারের আগে আগে রান্না ঘর থেকে চলে আসি। ইফতার করার পর সমস্ত বাসন পরিস্কার করে, চাল ধুয়ে পাতিলে দিই ভাতের জন্য।
প্রথম প্রথম ভাতের মাড় ফেলতে ভীষণ কষ্ট হতো আমার, হাতের মধ্যে খুব গরম লাগতো এখনো লাগে তবে আস্তে আস্তে পাতিল ঘুরিয়ে মাড় ফেললে গরম ভাবটা কম লাগে।
রাতে সকলে একসাথে খেতে বসেছি, দশ জন মানুষ এক টেবিলে। সকলে আমার রান্না করা খাবার খাচ্ছে ও প্রশংসা করছে, দিন দিন আমার হাতের রান্না করা খাবারের স্বাদ বেড়ে যাচ্ছে এই বলে। কিন্তু আমি এসব খাবার ঠিকমতো খেতে পারি না বলে খুব সামান্য একটু ভাত খেয়ে উঠলাম।
আমি না খেলেও কেউ দেখার নেই, যে মানুষটা রোজা রেখে সারাদিন এই রোদ ও গরমে সকলের জন্য রান্না করে, সে কি খাচ্ছে সে দিকে কারও নজর নেই। ভীষণ কষ্ট হতে লাগলো নিজের ভিতরে।
আবারও বাসন পরিস্কার করে ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম আজ বেশ ক্লান্ত লাগছে শরীরটা।
সে (আমার স্বামী) ঘরে ঢুকলো হাতে এক বাটি ফল ধুয়ে কেটে নিয়ে এসেছে আমার জন্য। আমি কিছু খেতে পারছি না কয়দিন থেকে তাই সবগুলো ফল খাওয়ায় দিলো আমায়।
স্বামীর এমন ভালোবাসায় পূর্ণ আমি, ভাবতে লাগলাম শ্বশুর বাড়িতে আর কেউ আমায় না বুঝলেও এই মানুষটা ঠিকি বুঝে। কিন্তু বেশি কিছু বলতে পারে না, পরে না কেউ বউ এর শিষ্য বলে কটু কথা শোনায় হয়তো তাই।
বিয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে মা-বাবা আমাকে ডাকতো , এখন আমাকে সকলের আগে উঠে সবকিছু রেডি করে সবাইকে ডাকতে হয়। এটাই নিয়ম মেয়েদের। আজ সেহরিতে কিচ্ছু খেতে ইচ্ছে করছে না, তাছাড়া ঘুম থেকে উঠে আমি খেতে পারি না। সামান্য একটু ভাত খেয়ে ছোটবেলা থেকে রোজা করছি।
সবাই খেতে বসেছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি বসতে যাবো এমন সময় শাশুড়ী মা বললেন। বউমা একটু রান্না ঘরে যাও, সেখানে খাবারের আলমারিতে তরকারির একটা বাটি ঢাকা আছে নিয়ে আসো সেটা।
রান্না ঘর যাওয়ার সময় একটু রাগ হলো আমার, তরকারির বাটিটা আগে আনতে পারে নাই সেই আমাকেই যেতে হচ্ছে।
বাটি এনে টেবিলে রেখে খেতে বসলাম, শুধু ভাত নিয়েছি তখনই শাশুড়ী মা অনেকগুলো চিংড়ি মাছ আমার প্লেটে তুলে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম, চিংড়ি মাছ কখন রান্না হলো মা? আমি তো এই মাছ রান্না করি নাই।
বউমা তুমি ভাত খাওয়া শুরু করো আমি বলছি।
আমি অযথা রাগের জন্য মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে খেতে শুরু করলাম, দারুণ হয়েছে তরকারি টা মা।
এ কথা শুনে মা মুচকি হাসছেন, আমি একটু লজ্জা পেলাম সকলের সামনে। কেমন ছোট মানুষের মতো মজা করে চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাত খাচ্ছিলাম আমি।
রাতে ঘুমানোর আগে তোমার মায়ের সাথে কথা হয়, কথায় কথায় জানতে পারি চিংড়ি মাছ তোমার কতো পছন্দ। আজ চিংড়ি মাছ আনা হয়েছে বাড়িতে সেকথা তুমি তোমার মা'কে কথা বলার সময় বলো নাই। পরে যদি জিজ্ঞেস করে চিংড়ি মাছ দিয়ে কেমন ভাত খাইলি হয়তো সেই জন্য।
মিতুর মতো তুমিও তো আমার মেয়ে, রোজা রেখে অতগুলো মাছ পরিস্কার করলে। না ঘুমিয়ে উঠে একটু মাছ ভুনা করলাম তোমার জন্য। আর তুমি অনেককিছু খেতে পারো না জানি আজ থেকে তোমার যা মনচায় নিজে তৈরি করে খাবে, আমাকে জিজ্ঞেস করার অপেক্ষা করবে না। এ বাড়িটা কিন্তু তোমারও বউমা, একদিন আমিও বউ ছিলাম আজ শাশুড়ী হয়েছি।
শাশুড়ী মায়ের কথা গুলো শুনে নিজে আরও ভালো হওয়ার প্রতিজ্ঞা করলাম মনে মনে। খুশিতে কান্না আসছিলো আমার কিন্তু সকলের সামনে নিজেকে সামলে নিলাম।
খাওয়া শেষে বাসন পরিস্কার করতে গেলে শাশুড়ী মা বললেন, বউমা তোমায় আজ থেকে বাসন পরিস্কার করতে হবে না। বাসন পরিস্কার, ঘর পরিস্কার ও মোছার জন্য কাল থেকে একজন মহিলা আসবেন।
আমাদের একটু বুঝতে ভুল হয়েছিলো বউমা, তুমি এতো পরিশ্রম করো সেটা আমরা ঠিকভাবে বুঝতে চেষ্টা করি নাই।
তুমি আমার মেয়ে নও পুত্রবধু তাই বলে কি আমি তোমার ভাল-মন্দ বুঝবো না, সবকিছু দূরে থাক আমরা মানুষ। তাই সকল মানুষের উচিত নিজের মতো করে অন্যদের কষ্ট ও দায়িত্ব অনুভব করা।
ইচ্ছে করছে শাশুড়ী মায়ের কপালে একটা চুমু দিই পারলাম না দিতে, তবে এমন মায়ের মতো শাশুড়ীর কপালে কোনো না কোনোদিন ঠিকই ভালোবাসার চিহ্ন একে দিবো আমি।
সমাপ্ত
আমাদের আর ও কবিতা রইলো তোমাদের জন্য :-👇👇
- অতীত প্রেম
- প্রাক্তন
- I Hate My Wife
- চলোনা আবার ও একটা প্রেম করি
- হটাৎ একদিন
- বন্দী জীবন
- আমাকে বোঝার চেয়ে ভুল বোঝা অনেক সহজ
- ছাড়তে জানতে হয়
- রাজরানী
- ব্যাস্ত শহরে
- মাঝে মাঝে
- অভিযোগ
- এমন একটা মানুষ দরকার
- পরিত্যক্ত
- এমন একটা বন্ধু চাই
- সময় বদলালে
- ব্লক লিস্ট
- স্মৃতি হত্যা
- কমফোর্ট জোন
- সম্পর্কের গভীরতা
- অপেক্ষা
- মন খারাপের দিনে
- মনের মানুষ
- বিচ্ছেদ মোবারক
- বৃষ্টি ভেজা বিকালে
- মরীচিকা
- অভিমানিনী
আমাদের আর ও গল্প পড়ুন :-👇👇
- ধোঁয়াশা শহরে
- মনের ঘরে সেই তুমি
- ধূপকাঠি
- কেয়ারলেস
- কলঙ্ক
- নতুন অতিথি
- ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ
- দেবীরা বার বার ফিরে আসে না
- অনুভূতি
- ছলনা
- বাবা
- A Black Girl
- প্রথম প্রেম
- বন্ধুত্বের অজুহাত
Tag:-
- bangla poem,
- Eid story collection
- bangla love story
- valobasar golpo
- facebook story collection
- story writting
- bengali love story
- love junction
- hawa munia
- Chingri Mach
- facebook poem collection
- romantic post
Bengali story :- This story is written by "Hawa Munia". Poem name, "Chingri Mach". We are collected best love and romantic poem in Bengali. We can also published your poem or story in Bengali. If you want to send your Bengali poem . Like sad poem, romantic poem, love poem and many others poem in Bengali. Then you can contact me. My email id , "lovejunction506@gmail.com". So please sent your poem or story and don't forget to mention your name. I published your creation on my website. Please share this poem in your friends or lover to gift a beautiful moment. Thank you so much.
- bangla poem,
- Eid story collection
- bangla love story
- valobasar golpo
- facebook story collection
- story writting
- bengali love story
- love junction
- hawa munia
- Chingri Mach
- facebook poem collection
- romantic post
0 Comments: