নতুন অতিথি(২য় খণ্ড)
সাগর সরকার
বেশ কয়েকমাস আগে, আমরা কলেজ থেকে সবাই মিলে বোলপুর শান্তিনিকেতন ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে একটি মজার ঘটনা ঘটে আমাদের সাথে। সকাল ১০:১২ am । আমরা সবাই হাওড়া স্টেশন থেকে বোলপুর শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে পড়লাম সাথে ছিল আমাদের কলেজের অধ্যাপিকা অন্তরা ব্যানার্জী (H.O.D)। ম্যাম কে সাথে পেয়ে আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। ট্রেনের মধ্যে সবাই খুবই আনন্দ করতে করতে পৌঁছে গেলাম বোলপুর শান্তিনিকেতনে। সময়টা যে কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। স্টেশনে নেমে টোটো রিজার্ভ করে পৌঁছে গেলাম গেস্ট হাউসে।
গেস্ট হাউসটি খুবই সুন্দর ছিল, চারিদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ মাঝে মাঝে পাখির ডাকের শব্দ মনটা পুরো ভালো করে দিল। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করার পর সবাই মিলে ঘুরতে বার হয়েছিলাম । সন্ধ্যাবেলা ফিরে এসে আমার বন্ধু বান্ধবী সবাই মিলে নাচ, গান, আড্ডা কত কিছুই না হলো। আর আমাদের এখন বাস্তবিক জীবনে ফোন তো আছেই । সবাই এক জায়গায় থেকেও যখন একে অন্যকে ভিডিও কল করা হয় তখন কেমন মজা হয় বলুন তো। রাতে ঘুমানোর আগে সবাই মিলে আলোচনা করে ঘুমালাম। খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবো, উঠে সবাই মিলে হাঁটতে বার হবো। ঠিক তেমনটাই হল আমরা সবাই মিলে পরের দিন খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বার হলাম,কয়েকজন বান্ধবী বাদে। তারপর আমরা মর্নিং ওয়ার্ক থেকে ফিরে সবাই মিলে উত্তরায়ণ মিউজিয়াম ও সোনাঝুরির হাটে গেলাম। সবাই অনেক কিছু কেনাকাটা করলো । আমিও কিছু জিনিস কিনে নিলাম বাড়ির জন্য। সেই দিনটাও খুব মজা করে কেটে গেল। পরের দিন আমাদের ফেরার পালা। সবার মনটা যেন খারাপ হতে শুরু করলো। কিন্তু তার মধ্যে একটা ঘটনা ঘটলো যেদিন আমরা ফিরব সেই দিন আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম কংকালীতলা পুজো দিয়েই ফিরবো। কিন্তু হঠাৎ করে মত পরিবর্তন হলো হয়তো আমাদের মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া হবে না। সবার মন খারাপ হয়ে গেল।রাতে ঘুমাতে যাব হঠাৎ করে আমাদের H.O.D ম্যাম ফোন করে বলল সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গুছিয়ে নিস ,আমরা সকালে কংকালীতলা পুজো দিতে যাবো। কথাটি শুনে মনাটা খুব ভালো হয়ে গেল।
ম্যামের কথা মতো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গুছিয়ে নিলাম। সবাই বেরিয়ে পড়লাম। টোটো করে পৌঁছে গেলাম কংকালীতলা মায়ের মন্দিরে। মন্দিরের বাইরে থেকে পূজো দেওয়ার ডালা কিনে নিলাম । জায়গাটা খুবই সুন্দর ছিল। আর কংকালীতলা মায়ের মন্দিরে পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে কোপাই নদী। আমরা সবাই পূজো দিয়ে বার হলাম, তারপর শুরু হলো ছবি তোলার প্রস্তুতি। তার মধ্যে ঘটে গেল এক মজার ব্যাপার। আমি প্রথমে তাকে দেখতেই পায়নি। তিনি আমাদের পিছু নিয়েছে। আমাকে দেখে লেজ নাড়তে থাকলো, আমি বললাম কি রে কেমন আছিস। সে আবার লেজ নাড়তে থাকলো। আমি বললাম চলে আয় আমাদের সাথে । ও সত্যি আমাদের পিছু নিয়েছে।
ম্যাম বললো, "তোরা কিছু খাবি ?" তখন সবাই মিলে ঠিক করলো চা , বিস্কুট খাবো। তিনি কিন্তু আমাদের পিছু ছাড়েন নি, সাথেই আছে। চা, বিস্কুট দিয়ে গেল । আমি আমার ভাগের বিস্কুটের অর্ধেকটা তাকে দিয়ে দিলাম। কিন্তু তিনি ওই টুকুতে খুশি নন বুঝলাম। হঠাৎ করে আমাদের ম্যাম আমাকে ডাকলেন , "বললো বিস্কুট খাওয়াবি?" আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি যে ,ম্যাম কাকে খাওয়ানোর কথা বললেন। কিন্তু পরে বুঝলাম ম্যাম ওনাকে খাওয়ানোর কথা বললেন। আমি বললাম, "অবশ্যই খাওয়াবো, কেন খাওয়াবো না।" চায়ের দোকান থেকে আরো দুটো বিস্কুট নিয়ে তাকে দিতে যাবো দেখি , আরো একজন এসে হাজির হয়েছে। তারপর তাদেরকে বিস্কুট দুটো ভাগ করে দিলাম।
কিছু সময় পর দেখলাম, যিনি পরে এসেছিলেন তিনি চলে গেছেন। কিন্তু প্রথম জন রয়ে গেছেন। আমি বললাম কি রে যাবি আমার সাথে। ও খুব খুশি হয়ে লেজ নাড়তে থাকলো। আমি ওকে বললাম তোকে হয়তো আমি নিয়ে যেতে পারবো না, কিন্তু তোর কিছু স্মৃতি আমি নিয়ে যেতে পারি। আমি ওকে ডাকলাম চলে আয় আমার পাশে । ও লেজ নাড়তে নাড়তে চলে এলো আমার পাশে, এসেই ডপ করে বসে পড়লো। আমি বললাম কি রে এবার আমার ফোনের দিকে তাকা, ও সত্যি আমার ফোনের দিকে তাকালো। আমি তো পুরো অবাক হয়ে গেলাম, আর সাথে সাথে দুজনেই ক্যামেরা বন্দি হয়ে গেলাম।
আমার তো এবার খুব মন খারাপ হতে শুরু করলো। আর কিছুটা সময় আমরা একসাথে আছি, তারপর আমি আমার রাস্তায়, আর ও নিজের রাস্তায়। ম্যাম বললো, "এবার আমাদের বার হতে হবে, না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।" আমরা সবাই উঠে হাঁটতে শুরু করলাম, তখন দেখি ও আমাদের পিছনে আসছে। তখন আমি আর আমার বন্ধু ওকে বললাম আর আসিস না, ফিরে যা। কিন্তু তবুও সে লেজ নাড়তে নাড়তে পিছনে আসতে থাকলো। সে আমাদের টোটো পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলো। আমি বললাম ভালো থাকিস রে, জানি না তোর সাথে আর কোন দিন দেখা হবে কি না। তবে মনে মনে ঠিক করলাম এখানে এলে তোর সাথে অবশ্যই দেখা করে যাবো।
কিছু কিছু সময় নিজেকে যেন অন্য জগতে হারিয়ে ফেলি, কেন জানি না মনে হয় ভগবান রূপি এই প্রাণী গুলো যেন পরজন্মে অকুল সুখের অধিকারী হয়। মনুষ্য জন্ম নিয়েও আমরা কতটা বোকা , কিন্তু এই অবুঝ প্রাণী গুলো আমাদেরকে এক নজরে দেখেই বুঝতে পারে কে ভালো আর কে খারাপ। বাস্তব জীবনে অনেক ঘটনা আমাদের সাথে ঘটে থাকে কিন্তু আমরা সেই গুলকে অতটা মনে রাখার কারণ বলে মনে করি না, তবে চেষ্টা করলে সেই ঘটনা গুলোই হয়তো আমাদেরকে এই সুন্দর পৃথিবীটাকে অন্য রূপে দেখার সুযোগ করে দেবে…। ..ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল প্রাণী। আর খুব ভালো থেকো তোমরা সবাই।
সমাপ্ত
আমাদের আর ও গল্প পড়ুন :-👇👇
আমাদের আর ও কবিতা রইলো তোমাদের জন্য :-👇👇
- পাগলী তোর জন্য
- অতীত প্রেম
- প্রাক্তন
- I Hate My Wife
- চলোনা আবার ও একটা প্রেম করি
- হটাৎ একদিন
- বন্দী জীবন
- আমাকে বোঝার চেয়ে ভুল বোঝা অনেক সহজ
- ছাড়তে জানতে হয়
- প্রেমিকের শেষ চিঠি
- রাজরানী
- ব্যাস্ত শহরে
- মাঝে মাঝে
- অভিযোগ
- এমন একটা মানুষ দরকার
- পরিত্যক্ত
- ব্লক লিস্ট
- স্মৃতি হত্যা
- কমফোর্ট জোন
- অপেক্ষা
- মন খারাপের দিনে
- অভিমানিনী
Tags:-
- Sagar Sarkar,
- Notun Otithi,
- Notun Otithi Part 2,
- Story in bengali,
- Dog lover
- Dog lover story,
- Bangla golpo,
- Animal love story,
- Love Junction,
- bangla golpo,
- Sagar Sarkar,
- Notun Otithi,
- Notun Otithi Part 2,
- Story in bengali,
- Dog lover
- Dog lover story,
- Bangla golpo,
- Animal love story,
- Love Junction,
- bangla golpo,
0 Comments: