উইলিয়াম শেক্সপীয়রের সফলতার কাহিনী | William Shakespeare success story |Success Story In Bengali

উইলিয়াম শেক্সপীয়রের সফলতার কাহিনী | William Shakespeare success story |Success Story In Bengali
Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around William Shakespeare.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                          

  উইলিয়াম শেক্সপীয়র 

     মহাকবি শেক্সপীয়রের নাম কে না জানে ! আজ তার লেখা নাটকগুলি পৃথিবীর সব দেশে অভিনীত হয় । স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাে বটেই সাধারণ পাঠকও তাঁর নাটকগুলি মুগ্ধ বিস্ময়ে পড়ে । মানুষের বিচিত্র চরিত্র আর মানুষের মনের অতল রহস্যের যে ছবি তিনি তুলে ধরেছেন তার নাটকে , আজও বিশ্বসাহিত্যে তার তুলনা নেই । তার লেখা সংলাপগুলাে প্রবাদ প্রবচন হয়ে আজও শিক্ষিত মানুষদের মুখে মুখে ফেরে । 

     এতাে বড়াে যে মানুষটি , এই চারশাে বছর ধরে মানুষ যাঁকে এতাে সম্মান দিয়েছে , দিয়েছে এতাে ভালােবাসা , সে মানুষটার নিজের জীবন কিন্তু মােটেই খুব সুখের ছিল না । প্রদীপ যেমন নিজে পুড়ে আলাে ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে , শেক্সপীয়রও তেমনি নিজের জীবনের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টের অভিজ্ঞতা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছেন তার সৃষ্টির ঘর । তাই বােধহয় তা এমন অনবদ্য , এতাে অতুলনীয় ।

      ইংল্যান্ডের স্টাটফোর্ড গ্রামের জন নামে এক ধনী ব্যবসায়ীর ছেলে উইলিয়ামের ছােটোবেলা থেকেই পড়াশােনায় মন নেই । বহু চেষ্টার পর শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে উইলিয়ামের বাবা তাকে ব্যবসায় নামিয়ে দিলেন । পড়াশােনায় ইতি টেনে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সেই উইলিয়ম নেমে পড়লেন ব্যবসায় । কিন্তু তাতেই বা মন বসে কই ! মন যেন সবসময় উড়ু উড়ু । কি যেন সব ভাবেন ! কাজে কেবলই ভুল হয় । পয়সাকড়ির হিসাব দিতে পারেন না ঠিকমতাে । উইলিয়ামের সর্বদাই মনে হতাে- “ কেন এসব ফালতু কাজ করে সময় নষ্ট করছি ? আমার যে কথা ছিল অনেক বড়াে কাজ করার । ' 

       কিছুই ভালাে লাগে না । এমনি সময় হঠাৎই বিয়ে করে বসলেন । পাত্রী শুধু যে তার চেয়ে আট বছরের বড়াে— তাই নয় বেশ কয়েকটি ছেলেমেয়েরও তিনি মা । এইরকম বকা ছেলেকে কোন অভিভাবকই বা বাবা বাছা বলে আদর করবেন ? বাড়ি থেকে উইলিয়ামকে তাড়িয়ে দেওয়া হল । 

       নব বিবাহিতা স্ত্রী এবং কতকগুলি নাবালক বাচ্চা কাচ্চা সমেত পথে এসে দাঁড়ালেন শেক্সপীয়র । পরিচিত আত্মীয়বন্ধুরা ভাবল অপদার্থ অপরিণামদর্শী ছোঁড়াটাকে এবার বােধহয় ভিক্ষে করতে হবে নয়তাে চুরি ডাকাতি । কিন্তু উইলিয়াম হার মানলেন না । হাল ছাড়ালেন না । 

       কিছুদিন উইলিয়াম পথে পথে ঘুরলেন । পেটের দায়ে যখন যে কাজ পান তাই করেন । কিন্তু কোনাে কাজেই তিনি বেশিদিন টিকে থাকতে পারেন না । 

       এর ওপরে এল আর এক বিপদ । তখন উইলিয়াম কাজ করছিলেন । এক মস্ত জমিদারের বাগান দেখাশােনার । হঠাৎ একদিন কিভাবে যেন ওই বাগানের একটি হরিণ কোথায় হারিয়ে গেল । নিশ্চয় এ পাহারাদারেরই কাজ অথবা তার অন্যমনস্কতার সুযােগে কেউ সেটিকে চুরি করেছে । যাই হােক , সব দোষ কিন্তু গিয়ে পড়ল উইলিয়ামের ওপর । জমিদার পুলিশে খবর দিলেন । বিচারে বেত্রাঘাত ও হাজতবাসের শাস্তি হলো তার ।

        উইলিয়াম রাতের অন্ধকারে জেল থেকে পালালেন । তারপর আর একটি মুহূর্তও দেরী না করে সপরিবারে পালিয়ে এলেন লন্ডন শহরে । 

       লন্ডন শহর ধনীদের জায়গা । উইলিয়াম লেখাপড়া কিছুই শেখেননি । হাতের কাজকর্ম বলতেও কিছু জানেন না । এতােবড় শহরে কি করে এতােগুলি মানুষের অন্নসংস্থান হবে ? 

      হঠাৎ একটা সুযােগ এসে গেল । তখনকার দিনে গ্লোব ছিল লন্ডনের নাম করা থিয়েটার হল । সেখানে শহরের সব নামীদামী বুদ্ধিজীবী মানুষেরা আসতেন নাটক দেখতে । একদিন নাট্যশালার পাশ দিয়ে যেতে যেতে উইলিয়াম দেখলেন এক ভদ্রলােক কাউকে যেন খুঁজছেন । উইলি কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলন স্যার , আপনি কি কিছু খুঁজছেন ?

     -হ্যা , আমি একটি ছেলে খুঁজছি যে আমার ঘােড়ার গাড়ির এই ঘােড়াগুলিকে কিছুক্ষণ দেখাশােনা করবে । বেশিক্ষণ নয় , মাত্র ঘণ্টা তিনেক যতক্ষণ আমি নাটক দেখতে ব্যস্ত থাকব । 

      উইলিয়াম এগিয়ে এসে কাজটি নিলেন । ঘণ্টা তিনেক বাদে পারিশ্রমিকও পেলেন ভালােই । এরপর প্রতিদিনই আসতে লাগলেন সেখানে এবং ক্রমে থিয়েটারের অশ্বরক্ষকের কাজটি তার বাঁধা হয়ে গেল ।

      খুবই তুচ্ছ কাজ । কিন্তু কে জানত _এই অশ্বশালা থেকেই একদিন উঠে আসবে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার ? 

       উইলিয়ামের কাজে ও ভদ্র আচরণে থিয়েটারের মালিক তাঁর প্রতি খুব সদয় ছিলেন । একদিন কি কারণে য়েন থিয়েটারের জনৈক অভিনেতা উপস্থিত হতে পারলেন না । ওই চরিত্রে উইলিয়ামকে খুব সুন্দর মানাবে । এই ভেবে তক্ষুনি ডাক পড়ল তার । সেদিনের অভিনয় সুন্দরভাবে উৎরে দিলেন তিনি । এরপর থেকে প্রায়ই ডাক পড়তে লাগল তার । ধীরে ধীরে উইলিয়াম হয়ে গেলেন পেশাদার রঙ্গমঞ্চের নিয়মিত অভিনেতা । সুপ্ত অভিনয় প্রতিভা সামান্য সুযােগ পেয়েই ফুটে উঠতে লাগত । 

       কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই শেক্সপীয়রের নজরে পড়ল যে অভিনেতাদের চেয়ে নাট্যকার টাকা পান অনেক বেশি । তার এখন টাকার দরকার । প্রচুর টাকা । তাই অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লেখাতেও মন দিলেন তিনি । 

       সারা সন্ধ্যে অভিনয় করে বাড়ি ফিরে এসে নাটক লিখতে বসে গেলেন উইলি । নাটকের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি ততােদিনে ভালােরকম জানা হয়ে গেছে তার । সঙ্গে ছিল প্রতিভা আর ছিল কিছুতেই হার না মানা নাছােড়বান্দা মনােভাব ।

        তাই এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে । ঝড়ের গতিতে একের পর এক লিখে চললেন হ্যামলেট , ম্যাকবেথ , ওথেলাে , মিডসামার নাইটস ড্রিম , কমেডি অব এরর্স , এ্যান্টনী ক্লিওপেট্রা , রােমিও জুলিয়েট ইত্যাদি সব কালজয়ী নাটক । 

        ততদিনে অর্থাভাবও দূর হয়েছে । তাই ঐতিহাসিক নাটকগুলি লেখার প্রয়ােজনে নিজের খরচেই বইপত্র কিনতে লাগলেন । পড়তেও লাগলেন ঝড়ের গতিতে । গা থেকে আকাট মূখের কোটটা তার খুলে পড়তে দেরী হলাে না । 

      স্বশিক্ষিত উইলিয়াম শেক্সপীয়র ক্রমে ক্রমে হয়ে উঠলেন মহাপণ্ডিত ।

      অন্নের অভাবে একদিন যাকে রাতের পর রাত জেগে নাটক লিখতে হত তিনিই হলেন প্রচুর প্রচুর অর্থের মালিক । নিজের জন্মভূমি ষ্ট্যাটফোর্ডে গিয়ে বিশাল জমিদারি কিনে রাজার হালে বসবাস করতে লাগলেন । যারা একদিন এ গ্রাম থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তারাই দেখল সারা বিশ্বের অসংখ্য শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত মানুষ তাকে দেখবার জন্য ছুটে আসছে । জগৎজোড়া কতাে সম্মান তার । কতাে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালােবাসা তার জন্যে সাজানাে । 

        মৃত্যুর পর তাঁরই জমিদারির অন্তর্গত ওয়েস্ট মিনস্টার এ্যাবেতে তাকে সমাহিত করা হল । আজও তাঁর গুণমুগ্ধ লক্ষ লক্ষ মানুষ তার সমাধিতে পুস্পার্ঘ নিবেদন করতে আসে । আসে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে । যদি হাল ছেড়ে দিতেন , হার মানতেন তবে এই শেক্সপীয়রকে কি পেত , আমাদের এই পৃথিবী ?

       Only dead fish swim with the stream .


                      সমাপ্ত 

কলম্বাসের সফলতার কাহিনী | Columbus Success Story | Bengali Success Story

কলম্বাসের সফলতার কাহিনী | Columbus Success Story | Bengali Success Story
Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around Columbus.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                                

   কলম্বাস 

কলম্বাস যে আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন একথা তােমরা সবাই জানাে । কিন্তু এই আবিষ্কারের পিছনে যে কী ভীষণ সংগ্রাম আর কী মরণপণ ঝুঁকির ইতিহাস লুকিয়ে আছে , সেই গল্পই আজ তােমাদের শােনাব । 

       ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন ইতালির এক হতদরিদ্র পরিবারের ছেলে । কিন্তু গরিবের ঘােড়া রােগ হবার মতাে গরিবের ছেলে কলম্বাসও স্বপ্ন দেখতেন একদিন মস্ত বড়াে নাবিক হবেন । শহরে সমুদ্র ফেরৎ কোনাে নাবিক এলেই কলম্বাস ইনিয়ে - বিনিয়ে তার সঙ্গে ভাব জমাত , তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বসে শুনতে উত্তাল তুফান , ডুবুডুবু জাহাজ , জীবন - মৃত্যু একটি বিন্দুতে এসে দাঁড়ান ইত্যাদি নানা রােমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার গল্প । এসব কাহিনি শুনতে শুনতে তিনি বিভাের হয়ে যেতেন আর ভাবতেন কবে কেমন করে তিনিও একদিন ভেসে পড়বেন অকূলে উন্মাদ সমুদ্রের ওপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে পৌছে যাবেন অজানা অচেনা কোনাে এক স্বপ্নের দেশে । 

      এসব আজ থেকে প্রায় পাঁচশাে বছর আগেকার কথা । তখন ইউরােপ থেকে ভারতে আসতে হলে পূর্বদিকে পারস্য উপসাগরের ওপর দিয়ে জাহাজে চড়ে আসতে হত । এছাড়া অন্য কোনাে পথ ছিল । সময়ও লেগে যেত মাসের পর মাস , পথে বিপদও ছিল প্রচুর । 

     ইতিমধ্যে গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছেন যে পৃথিবী গােল । কলম্বাস ভাবলেন , পৃথিবীটা যদি গােলই হয় তবে পূর্বদিক দিয়ে গেলে যেখানে পৌছনাে যাবে পশ্চিম দিক ধরে গেলেও সেইখানেই পৌছানাে যাবে । তিনি যাকেই পান তাকেই তার এই বিশ্বাসের কথা বলেন আর বলেন , একটু সুযােগ যদি কেউ করে দেয় তবে তিনি হাতেনাতে প্রমাণ করে দেখাবেন । কিন্তু কলম্বাসের কথা শুনে সকলেই হেসে উড়িয়ে দিত । কেউ সমর্থন করলেও কি করে এটা বাস্তবে করে দেখানাে সম্ভব হবে সে ব্যাপারে কোনাে হদিশ দিতে পারত না । 

      এদিকে কলম্বাসের মাথায় জেদ চেপে গেছে । শেষকালে এমন হল , নাওয়া নেই , খাওয়া নেই , সমস্ত দিনরাত তিনি মশগুল হয়ে রইলেন সমুদ্রপথে ভারতযাত্রার স্বপ্নে । দেশের যেখানে যত ধনী লােক আছে । তাদের ঠিকানা যােগাড় করে , তিনি তাদের কাছে চিঠি পাঠাতে লাগলেন নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে । এমনকি ইতালির বাইরে ইউরােপের অন্যান্য দেশের ধনী ব্যক্তিদের কাছেও দিনের পর দিন চিঠি লিখে চললেন কলম্বাস । রাজা মহারাজারাও বাদ গেলেন না ।

      কিন্তু কে কলম্বাস ? একটা গরিব মুখ - সুখ লােক তার না আছে । কোনাে অভিজ্ঞতা না আছে লােকবল কিংবা অর্থবল । কেউ চেনে না , কেউ জানে না , এমন লােককে বিশ্বাস করে কে দেবে টাকা পয়সা , জাহাজ আর লােকলস্কর ? কোনাে চিঠিরই উত্তর এল না । কলম্বাসও হাল ছাড়লেন না । 

     আমরা যে সময়ের কথা বলছি , সে সময়টা ছিল ইউরােপের ব্যবসা বিস্তারের যুগ । শিল্পবিপ্লবের ফলে ইউরােপের কলকারখানায় রাশি রাশি উৎপাদন হয় । সে সব জিনিস বিক্রির জন্য চাই নতুন নতুন দেশে নতুন নতুন বাজার । তাই স্পেন , পর্তুগাল , ইতালি রােম , ইংল্যান্ড , ফ্রান্স সকলেই বড়াে বড়াে জাহাজ নিয়ে নেমে পড়েছিল সমুদ্রে । স্পেন আর পর্তুগাল আবার সবচেয়ে বাণিজ্যে এগিয়ে কারণ তাদের দেশের লােকেরা ছিল নৌকা চালানাের ওস্তাদ । এইরকম একটা সময়ে কলম্বাসের প্রস্তাবটা মােটেই হেলাফেলা করার মতাে নয় বরং যথেষ্ট লােভনীয় । তবু যেহেতু সে বেচারা গরিব , অনভিজ্ঞ আর অজ্ঞাত - অখ্যাত তাই তার কথাটায় কেউ পাত্তাই দিল না ।

      কলম্বাসও হাল ছাড়লেন না । এক বছর গেল , দুবছর গেল ক্রমে একদিন ঘুরতে ঘুরতে কলম্বাস এসে পড়লেন পর্তুগালে । যাকে পান তাকেই বলে বেড়ান তার পরিকল্পনার কথা । রাজবাড়িতে তাে ঢুকতে পান না তাই রাজার কাছে আসা - যাওয়া আছে এমন লােক খুঁজে খুঁজে তাদের কাছে বলেন সব । যদি কোনে সুরাহা হয় । 

       ক্রমে রাজার কানে কথাটা পৌছল । তিনি ভালাে মানুষ । তিনি ভাবলেন বেশ তাে , লােকটা যদি সত্যি কোনাে শর্টকাট পথ বার করতেই পারে তাহলে সমুদ্র বাণিজ্য অনেক বেশি সহজ আর লাভজনক হয়ে উঠবে । দেশে আসবে প্রচুর সম্পদ । প্রজারা সুখী হবে । তিনি মন্ত্রীদের বললেন লােকটার সঙ্গে দেখা করে ব্যাপারটার খোঁজ নাও । 

     মন্ত্রীরা কলম্বাসকে ডেকে পাঠাল । তারপর তার কাছ থেকে সব কথা শুনে নিয়ে বলল তােমার যাতায়াতের খরচ বাবদ সমস্ত টাকার হিসেব আর যাত্রাপথের একখানা নকশা দাও । রাজাকে দিয়ে মঞ্জুর করাতে হবে । মহা উৎসাহে কলম্বাস সরল মনে তুলে দিলেন সবকিছু তাদের হাতে । এবার শয়তান ধূর্ত মন্ত্রীরা রাজার বরাদ্দ করা টাকা আর কলম্বাসের নকশা নিয়ে গােপনে নিজেরাই কয়েকজন পর্তুগীজ নাবিককে পাঠিয়ে দিলেন পশ্চিমমুখী সমুদ্রপথে । কলম্বাস যখন জানতে পারলেন কি ভয়ানক নির্মমভাবে ঠকানাে হয়েছে তাকে , তখন ক্ষোভে - দুঃখে হতাশায় আর পর্তুগীজদের প্রতি ঘৃণায় সমস্ত অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল তার । কিন্তু হাল ছাড়লেন না । 

      আবার পথে এসে দাঁড়ালেন । শূন্য হাতে ঘুরতে ঘুরতে এবার এসে পড়লেন স্পেনে । স্পেনের রানি ইসাবেলার ভারী মায়া হল ছেলেটাকে দেখে আর তার স্বপ্নের কথা শুনে । কিন্তু স্পেন ছােট্ট দেশ , চট করে অজ্ঞাতকুলশীলের মুখের কথায় নেচে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢেলে দেওয়া তাে যায় না । তাই তিনি কলম্বাসকে অপেক্ষা করতে বললেন । কলম্বাসও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলেন । 

     এক বছর দু - বছর করে সাত সাতটা বছর কেটে গেল তার স্পেনের রাজসভায় আবেদন নিবেদন জানাতে জানাতে । ক্রমাগত ফিরিয়ে দিতে দিতে অবশেষে একসময় মন গলল রানির । তিনি আশ্বাস দিলেন সমুদ্রযাত্রার জন্য প্রয়ােজনীয় সব ব্যয় বহন করবে স্পেন । 

       ধৈর্যের জয় হল । 

       নির্দিষ্ট দিনে ১৪৯২ খ্রি . প্রচুর লােকজন নিয়ে স্পেনের সমুদ্রতীর থেকে যাত্রা শুরু করলেন কলম্বাস । নিনা , পিন্টা আর সান্টামারিয়া এই তিনটি বিশাল বাণিজ্যতরী নিয়ে সােজা পশ্চিমমুখে যাত্রা শুরু করলেন । কলম্বাস ভারতবর্যের উদ্দেশ্যে । এতদিনে স্বপ্ন সত্য হল তার । অথৈ সমুদ্রের বুকে ভেসে চলার দুর্লভ সুযােগ পেয়েছেন তিনি । কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি ? রানির এতগুলি টাকা , এতগুলি মানুষের প্রাণ সব এখন তার হাতে । ভারতবর্ষে পৌছতে পারলে তবেই না সার্থক । যতদিন যায় তত টেনশন বাড়তে থাকে কলম্বাসের । 

      দেখতে দেখতে দু - দুটো মাস কেটে গেল । ডাঙ্গার চিহ্নমাত্র নেই । সঙ্গের লােকজন ক্রমশ বিরক্ত হয়ে পড়েছে । খাবারদাবারের ভাণ্ডারও শেষ হয়ে আসছে দ্রুত । নাবিকরা প্রথমে আড়ালে , তারপর প্রকাশ্যেই তার সমালােচনা করতে লাগল । তাকে বার বার চাপ দিতে লাগল দেশে ফিরে যাবার জন্য । তারা বলতে লাগল ঢের হয়েছে । কলম্বাসের মতাে আনাড়ী লােকের সঙ্গে সমুদ্রে আসাটাই তাদের ভুল হয়েছে । এবার মানে মানে দেশে ফিরতে পারলে বাঁচা যায় । না হলে জাহাজ - সুদ্ধ সকলকেই অকূল সমুদ্রের মাঝখানে অনাহারে মরে পচতে হবে । এই বিপদের মধ্যে এল আর এক নতুন বিপদ । দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার ধকলে বা অন্য কোনাে কারণে কলম্বাসের সঙ্গীদের মধ্যে কয়েকজন মারা গেলেন ।

       চিন্তার রেখা পড়ল এবার কলম্বাসেরও কপালে । জাহাজের ডেকের ওপর দাঁড়িয়ে দিকচিহ্নহীন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার কেবলই মনে হতে লাগল তবে কি সবটাই ভুল হল তার ? দিকভ্রষ্ট হয়েছে । তার যাত্রা ? আনাড়ী মানুষের এতখানি ঝুঁকি নেওয়াটা ঠিক হয়নি ?

      কিন্তু এতগুলি বছরের স্বপ্ন , এত চেষ্টা , এত অর্থব্যয় সবই কি বৃথা হবে ! একজন বিশ্বাসী নাবিক এসে চুপি চুপি কলম্বাসের কানে কানে বলল নাবিকরা যড়যন্ত্র করছে আপনাকে খুন করার । যদি প্রাণে বাঁচতে চান এখুনি জাহাজের মুখ ঘােরান । 

     শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন কলম্বাস । মৃত্যুভয় নয় , মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা আর ক্ষুদ্রতা তাকে বােবা করে দিয়েছে । কিন্তু না ; হাল ছাড়তে তিনি নারাজ । মেরে ফেলে ফেলুক তবু শেষপর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি । নিচে নেমে এসে নাবিকদের আরাে একবার ভালাে করে বােঝাবার চেষ্টা করলেন । কিন্তু না , কেউ কোনাে কথাই শুনতে রাজী নয় । প্রতিহিংসা , আতঙ্ক আর নিষ্ঠুরতায় জ্বলজ্বল করছে তাদের চোখ । কলম্বাস আবার ফিরে এলেন ডেকে । স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন । অন্ধকার সমুদ্রের দিকে । 

      এর মধ্যে ৭০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে । হয়তাে আজকের রাতটাই জীবনের শেষ রাত । প্রিয় পৃথিবী আর অতি প্রিয় এই সমুদ্রকে কলম্বাস শেষবারের মতাে প্রাণভরে দেখে নিতে চান । সমস্ত রাত ওইখানে একভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন কলম্বাস । একটি বারের জন্য চোখের পাতা বন্ধ করলেন না । ক্রমে ভাের হয়ে এলাে । পূবের আকাশে দেখা দিয়েছে হাল্কা গােলাপী রঙা ঈশ্বর । শেষবারের মতাে প্রণাম জানিয়ে ডেক থেকে নেমে আসছিলেন কলম্বাস । কিন্তু একটি দৃশ্যে তার চোখ আটকে গেল হঠাৎ । একি ! একটা ভাঙা সবুজ ডাল ! ঢেউয়ের মাথায় মাথায় নাচতে নাচতে ভেসে চলেছে নিরুদ্দেশের পথে ।

      তবে কি কাছেই এসে গেছে তীরভূমি ! তবে কি _

     কলম্বাস নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না । এবার দূরবীন চোখে দিয়ে দিগন্তরেখার দিকে তাকালেন । ওই তাে ! ওই তাে অস্পষ্ট তটরেখা । ওই তাে জীবনের আশ্বাস , জয়ের বিজয় পতাকা ।

       তার চিৎকারে দলে দলে নাবিক ও খালাসীরা জাহাজের ডেকে চলে এলাে । কেউ আনন্দে জড়িয়ে ধরল । কেউ পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা ভিক্ষা করতে লাগল । কলম্বাস কাউকে কোনাে শাস্তি দিলেন না বা তিরস্কারও করলেন না । 

      বহু কষ্টে অর্জন করা জয়ের আনন্দে তিনি তখন আকাশের মতাে মহান ও উদার । মনে মনে তখনই তিনি দ্বীপটির নাম রেখেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ । তার ধারণা ছিল তিনি ভারতের পশ্চিমের কোন দ্বীপে এসেছেন । আসলে সেটি ছিল আমেরিকার বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি একটি স্থান । 

      পরবর্তী কালে আরাে কয়েকবার সমুদ্র অভিযান করে কলম্বাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগটাই আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন । 

     তাই আমেরিকা মহাদেশের সঙ্গে গরীব আনাড়ী নাবিক কলম্বাসের নাম অমর হয়ে থাকবে চিরদিন আর থাকবে নির্ভীক , ধৈর্যবান , কিছুতে হার না মানা , হাল না ছাড়া মানুষদের ইতিহাসে উজ্জ্বল , অম্লান একটি নাম হয়ে । 

         To be able to lead others , you must be willing to go for ward alone .-- Harry S. Truman


                   সমাপ্ত 

Ishwar Chandra Vidyasagar success story | ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সফলতার কাহিনী

Ishwar Chandra Vidyasagar success story | ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সফলতার  কাহিনী
Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around Ishwar Chandra Vidyasagar.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                          

  বিদ্যাসাগর

                      সাগরে যে অগ্নি থাকে 

                                     কল্পনা সে নয় 

                   তােমায় দেখে বিশ্ববাসীর 

                                     হয়েছে প্রত্যয় 

       মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামের এক মাটির ঘরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন জন্মালেন তখন তাঁর বাবা ঠাকুরদাস বাড়িতে ছিলেন । সন্ধ্যাবেলা তিনি যখন বাড়িতে ফিরলেন তখন তার ঠাকুরদাদা জয়রাম তর্করত্ন ছেলেকে ডেকে বললেন , ‘ ওরে আজ একটা এঁড়ে বাছুর হয়েছে । কথাটি তিনি মজা করেই বলেছিলেন- পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে বােঝাতে । কিন্তু আশ্চর্যরকমভাবে অন্যদিক দিয়ে কথাটা সত্য হয়ে গেল । এঁড়ে বাছুররা ভীষণ একগুঁয়ে হয় । যা জেদ করে ঠিক তাই করে । আমাদের বিদ্যাসাগর , যাঁকে নিয়ে বাঙালির আজ এতাে গর্ব , তিনিও ঠিক এমনি এঁড়ে বাছুরের মতাে একগুয়ে ছিলেন । যা করবেন ভাবতেন তার থেকে তাকে একচুলও নাড়ানাে যেত না । শান্ত সুবােধ বালক বলতে যা বােঝায় তিনি ছিলেন ঠিক তার উল্টো । 

      বাবা যেই বলতেন— ঈশ্বর , নাও স্নান করে নাও । ঈশ্বর অমনি গো ধরে বসতেন না , আজ আমি কিছুতেই স্নান করব না । তার বাবা বলতেন— বাবা ঈশ্বর , জামাকাপড় পরে পাঠশালায় যাও । অমনি ঈশ্বর গোঁ ধরে বসতেন— না , পাঠশালায় যাব না আজ । যাব না তাে যাবই । অনুরােধ , উপরােধ , প্রহার , ভয় কোনাে কিছুতেই তাকে টলাতে পারতাে না । নিজের সংকল্পে পাহাড়ের মতাে অনড় হয়ে থাকতেন তিনি । বাধ্য হয়ে তার বাবা এক উপায় বার করলেন । 

     তিনি স্কুলের বেলা হলে ছেলেকে ডেকে বলতেন— ঈশ্বর , আজ যেন স্নান করাে না । আর স্কুলে গিয়েও কাজ নেই । 

    ম্যাজিকের মতাে কাজ করতে দাওয়াই । ঈশ্বর চটপট স্নান খাওয়া সেরে লক্ষ্মী ছেলে হয়ে বইপত্র নিয়ে স্কুলে চলে যেতেন । 

    এইরকম ভীষণ জেদী ছিলেন বলেই দরিদ্র এক পাড়াগেঁয়ে বালক বিদ্যাসাগর হতে পেরেছিলেন । তেলের অভাবে বাসায় আলাে জ্বলত না । রাস্তার গ্যাসের আলাের নীচে দাঁড়িয়ে পড়তেন তিনি । মেসে থাকতেন । থাকা খাওয়ার বিনিময়ে রান্না করা , বাসনমাজা , বাজার করা এসব করেও তিনি প্রত্যেকটি পরীক্ষায় প্রথম হতেন । পরবর্তী জীবনে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন , ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রিন্সিপাল এবং সারা দেশের সব স্কুলের ইন্সপেক্টরও হয়েছিলেন তিনি । এই দুর্দমনীয় গোঁ আর স্রোতের বিপরীতে টর্পেডাের মতাে দৌড়ে চলার প্রবণতা সারাজীবন কাজ করে গেছে বিদ্যাসাগরের মধ্যে । কখনাে কোনাে অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করেন নি । যে কাজ শুরু করেছেন , সহস্র বাধা সত্ত্বেও তা সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত না করা পর্যন্ত এক চুল সরে দাঁড়ান নি সে কাজ থেকে । 

       জলের মতাে অর্থব্যয় হয়েছে , প্রাণ পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে । ঘরে বাইরে সবাই শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে , অতি বিশ্বস্ত স্বজনও গােপনে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে । তবু নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন বিদ্যাসাগর । ক্ষুব্ধ হয়েছেন , হতাশ হয়েছেন , হাল ছাড়েন নি তবু । সমস্ত ক্লান্তি আর হতাশা নিজের মনের জোরেই ঝেড়ে ফেলে আবার ঝাপিয়ে পড়েছেন সংগ্রামে । 

     তার জীবনের অজস্র ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনার কথা বলি । 

     বাংলাদেশের বাল্যবিধবাদের অবর্ণনীয় কষ্ট দেখে দয়ার সাগর প্রতিজ্ঞা করলেন যেমন করেই হােক এদের দুঃখ দূর করতে হবে । কিন্তু আচারসর্বস্ব গোঁড়া হিন্দুদের ঘরে , বিশেষ করে কুলীন ব্রাহ্মণদের পরিবারে বিধবাদের কষ্ট দূর করার মতাে কোনাে পথই নেই । কৌলীন্য ধর্মরক্ষার জন্য ছােটোছােটো বালিকাদের বিয়ে দেওয়া হতাে বৃদ্ধ বরের সঙ্গে । তারা মারা গেলে শিশুকন্যাটি বিধবা হত আর তারপর আজীবন । তাকে পালন করতে হত সুকঠোর ব্রহ্মচর্য । একবেলা নিরামিষ ভাত খেতে পেত সে । একাদশীর দিন নির্জলা উপােষ । যদি কোনাে বালিকা । বিধবা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে একফোটা জল পান করে ফেলত তবে তার পিতৃকূলকে সমাজচ্যুত হতে হত । তার ওপর পতি পুত্রহীনা বালিকা বিধবাকে দিয়ে সংসারের সব কাজ করানাে হত দাসীর মতাে । তার জীবনে সাধ আহাদ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকত না । এতাে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেক বালিকা বিধবা আত্মহত্যা করতাে , অনেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে হারিয়ে যেত সমাজের অন্ধকার গহ্বরে । অনেকে করত দাসীবৃত্তি । অসংখ্য হিন্দুবিধবা কাশীতে গিয়ে বিশ্বনাথ মন্দিরের পথে ভিক্ষা করে প্রাণধারণ করতেন । 

      বিদ্যাসাগর ঠিক করলেন বিধবাদের আবার বিবাহ দিতে হবে । তার এই প্রস্তাবের কথা শুনে রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা ছি ছি করে উঠলেন । তারা সমস্বরে চিৎকার করে বলতে লাগলেন , এ অন্যায় । অশাস্ত্রীয় । এরকম করলে মহাপাপ হবে । হিন্দুধর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে । 

      শিক্ষিত অশিক্ষিত , ধনী , নির্ধন সবার মুখে একই কথা শুনে হতাশ হলেন বিদ্যাসাগর- কিন্তু হাল ছাড়লেন না । রাশি রাশি সংস্কৃত শাস্ত্রগ্রন্থ ঘেঁটে দিনরাত তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন বিধবাদের সপক্ষে কোথাও কোনাে উক্তি আছে কিনা । পেয়েও গেলেন । সমস্ত যুক্তিতর্কের শানিত অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তিনি একটি পুস্তিকা প্রকাশ করলেন |

      ' বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদবিষয়ক প্রস্তাব ' নামে বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে তর্ক বির্তকের ঝড় উঠল । দলে দলে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা কলম ধরলেন বিদ্যাসাগরের বিপক্ষে । কিন্তু বিদ্যাসাগরও দমবার পাত্র নন । বিরােধীদের সমস্ত যুক্তিজাল উপযুক্ত শাস্ত্রীয় বচনের সাহায্যেই ছিন্ন করলেন এই মহাপণ্ডিত । যুক্তির সঙ্গে সঙ্গে আনলেন গভীর আবেদন মানুষের বিবেক বুদ্ধি ও মানবিকতার কাছে । প্রতিপক্ষের কাছে । প্রশ্ন রাখলেন— বিধবার বিয়ে দিলে.অধর্ম হয় আর ব্যাভিচার , গর্ভপাত , ভ্রুণহত্যা , নারীহত্যা এগুলি বুঝি খুব বড়াে ধর্মের কাজ ? 

      যুক্তিতে হেরে গিয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল ধর্মধ্বজী হিন্দুরা । মারমুখী হয়ে উঠল তারা । যুক্তির জোরে না পেরে গায়ের জোরে নিবৃত্ত করতে চাইল বিদ্যাসাগরকে । পথে বের হলেই যখন তখন পণ্ডিতের দল ঘেরাও করে তাকে । কটু কথা বলে । অশ্লীল মন্তব্য করে । হঠাৎ হঠাৎ আড়াল থেকে ছুটে আসে ইট , পাটকেল ও বড়াে বড়াে পাথরের টুকরাে তার মাথা লক্ষ্য করে । কখনাে সামান্যের জন্য বেঁচে যান , কখনাে বা রক্তাক্ত শরীরে বাসায় ফিরে আসতে হয় । 

      বিদ্যাসাগর দেখলেন এভাবে হবে না , মানুষকে বােঝাতে হবে । তাই তিনি প্রায় প্রতিদিন সময় করে শহরের বিখ্যাত ধনী ও মানী গৃহস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাড়ির কর্তাদের বােঝাতে লাগলেন । তাই শুনে শাস্ত্রজ্ঞান হীন আচারসর্বস্ত হিন্দু অভিজাত সন্তানরা তাকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে লাগল । আড়ালে বলতে লাগল সাহেবের পা চাটা বামুন । সাহেব প্রভুকে খুশি করার জন্যে স্বজাতির জাত মারতে চায় । 

     এমনকি ‘ সংবাদ প্রভাকর ’ নামের তৎকালীন বিখ্যাত খবরের কাগজের সম্পাদক কবি ঈশ্বর গুপ্ত ব্যঙ্গ করে ছড়া লিখলেন- ‘ করিয়াছে দলাদলি লাগিয়াছে গােল / বিধবার বিয়ে হবে বাজিয়াছে ঢােল । শহরের সমস্ত ধনী ও ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শােভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেবকে নেতা করে বিদ্যাসাগরের তীব্র বিরােধিতা শুরু করলেন । তারা এমনকি বিদ্যাসাগরকে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করলেন । বীরসিংহ গ্রামের বাড়িতে বসে ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারলেন ছেলের প্রাণহানির আশঙ্কার কথা । তিনি তার বিশ্বস্ত লাঠিয়াল শ্ৰীমন্তকে পাঠিয়ে দিলেন কোলকাতায় ঈশ্বরের সর্বক্ষণের সঙ্গী করে ।

       প্রভু বিরক্তি প্রকাশ করা সত্ত্বেও শ্ৰীমন্ত সর্বদা বিদ্যাসাগরকে ছায়ার মতাে অনুসরণ করত । সম্ভবত শুধুমাত্র এই কারণেই বিদ্যাসাগরকে আততায়ীর হাতে প্রাণ দিতে হয়নি । বাঙালি জাতি দারুণ এক লজ্জার হাত থেকে বেঁচেছে । সে যাই হােক , বিদ্যাসাগর কিন্তু প্রাণভয়ে পিছিয়ে আসার পাত্র নন । তিনি রাধাকান্ত দেবকে অনুরােধ করলেন বিধবা বিবাহ বিষয়ে তর্কযুদ্ধ হােক । 

      রাধাকান্ত দেব আয়ােজন করলেন বিরাট তর্কযুদ্ধের । নবদ্বীপ থেকে আনানাে হল শাস্ত্রবিদ পরম পণ্ডিত ব্রজনাথ বিদ্যারত্নকে । অন্যদিকে বিদ্যাসাগর । সামনে হাজার হাজার মানুষের জনতা । 

    বিদ্যাসাগরের তুখােড় যুক্তিজালের কাছে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল বিদ্যারত্নের সমস্ত শাস্ত্রীয় প্রতিরােধ । কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না । রাধাকান্ত দেব দুপক্ষকেই শাল দিয়ে সম্মানিত করে সিদ্ধান্ত বিষয়ে নীরব রইলেন । 

     বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন রাজার দিক থেকে সমর্থন আসুক । তাহলেই জনসাধারণ তা মেনে নেবে । কিন্তু না , তা কিছুতেই যে হবার নয় তা হাড়ে হাড়ে তিনি বুঝতে পারলেন । কিন্তু হাল ছাড়লেন না । এবার বিদ্যাসাগর ঠিক করলেন বিধবা বিবাহ প্রচলনের জন্যে আইন পাশ করতে হবে । রাজা রামমােহন যেমন আইন পাশ করিয়ে তবে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে পেরেছিলেন , তেমনি বিধবা বিবাহকেও ইংরেজের আইনের সাহায্যে প্রচলন করতে হবে । হিন্দু কলেজের ছাত্র ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠী এবং ব্রাহ্মরাও চাইল বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ করার জন্যে সরকারের কাছে আবেদন করা হােক ।

       রচনা করা হল আবেদনপাত্র । এবার চাই বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ । স্বয়ং বিদ্যাসাগর সহ মােট নয়শাে বত্রিশ জনের সই সংগৃহীত হলাে । 

     এবার প্রকাশ্য ভাবে রাধাকান্ত দেব বিরােধিতা শুরু করলেন । তার পক্ষের লােকও নেমে পড়ল বিধবা বিবাহের বিপক্ষে সই সংগ্রহ অভিযানে । সংগৃহীত হলাে তেত্রিশ হাজার সই । অন্যদিকে আবার পথেঘাটে যখন তখন ধনীদের পাঠানাে গুণ্ডারা আক্রমণ করতে লাগল বিদ্যাসাগরকে । 

     শােনা যায় একদিন নাকি জগমােহন সরকার নামে এক বিশিষ্ট ধনীর সামনে গিয়ে তিনি বলেছিলেন আমাকে মারতে আপনি গুগুণ্ডা পাঠিয়েছেন । কেন কষ্ট করে ? এইতাে আমি নিজেই এসেছি । নিন মারুন দেখি । 

      এদিকে রাজ সরকারের কাছে পাঠানাে হয়েছে পক্ষে বিপক্ষে সংগ্রহ করা সই সহ দুটি আবেদনপত্র । সরকার দেখলেন বিধবা বিবাহের পক্ষে সই হাজারেরও কম অন্যদিকে বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন তেত্রিশ হাজারেরও বেশি লােক । বিদ্যাসাগর ভাবলেন এরপর আর রাজশক্তি নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে কোনাে হস্তক্ষেপ করবে না । বিধবাদের দুর্ভাগ্য দূর হবে না । কিন্তু শেষপর্যন্ত জয় হলাে তারই । মানবিকতার বিচারে ইংরেজ রাজশক্তি বিধবার পুনর্বিবাহ আইনসিদ্ধ বলে ঘােষণা করলেন । এমনকি দ্বিতীয়বার বিয়ে করা মহিলার সন্তান ও তার পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার পাবে ' বলে ঘােষিত হলাে । 

      আইন তাে হলাে কিন্তু মানছে কে ? 

     জাতিচ্যুত হবার ভয়ে কোনাে বাবাই তার বিধবা কন্যার বিয়ে দিতে এগিয়ে এলেন না । 

     এবার বিদ্যাসাগর দেখলেন আইন পাশ করা সত্ত্বেও বাস্তবে যদি বিধবাবিবাহ আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন না হয় তবে সে আইন শুধুমাত্র কাগুজে বাঘ হয়েই থাকবে । চাই বাস্তবের বিধবা বিবাহ । তিনি ঘােষণা করলেন যে যুবক বিধবাকে বিবাহ করবে তাঁর বিয়ের যাবতীয় খরচ তিনি দেবেন । 

      উদার হৃদয় , সরল বিদ্যাসাগরের এই ঘােষণার ফলে কতাে যে ঠগ জোচ্চোর তাকে ঠকিয়ে অর্থ নিয়ে গেছে তার আর লেখা জোখা নেই । যাত্রাদল থেকে মেয়ে ভাড়া করে এনে তাকে বিধবা সাজিয়ে নকল বিয়েবাড়ির আয়ােজন করে মুঠো মুঠো টাকা নিয়েছে লােকে বিদ্যাসাগরকে ঠকিয়ে । যখন জানতে পেরেছেন তখন ঘৃণায় আর ক্রোধে বাক্যহীন হয়ে গেছেন তবু হাল ছাড়েননি বিদ্যাসাগর । 

     এমনও অনেক ক্ষেত্রে ঘটেছে , কুলীন ভদ্রলােক , বাড়িতে বেশ কয়েকজন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরকে দেখিয়ে একজন বিধবাকে বিয়ে করেছে , তারপর তার কাছ থেকে প্রচুর টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে বিধবা বালিকাটিকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে । অনেকে আবার তার টাকার লােভে কোনাে অসহায় বিধবাকে বিয়ে করে কার্যত তাকে বাড়ির ঝি কিংবা উপপত্নী হিসাবে ব্যবহার করেছে । 

      এইসব প্রবঞ্চিতা বিধবারা আবার বিদ্যাসাগরকেই গালিগালাজ করেছেন , অভিসম্পাৎ দিয়েছেন । ঈশ্বরের কাছে তাঁর সর্বনাশ ভিক্ষা করেছেন । যাদের সুখের জন্য বিদ্যাসাগর ধন , মান , প্রাণ সমস্ত বাজী । রেখে লড়াই করে গেছেন দিনের পর দিন , তাদেরই মুখে অভিসম্পাত শুনতে শুনতে বিদ্যাসাগরের অন্তরে নিশ্চয়ই চূড়ান্ত নৈরাশ্য আর । বিতৃষ্ণা জেগেছিল । কিন্তু লড়ায়ের মাঠ ছেড়ে একটি দিনের জন্যও তিনি সরে দাঁড়ান নি , হাল ছাড়েন নি ।

       এইসময় বিদ্যাসাগরকে যে কী অবিশ্বাস্য পরিশ্রম করতে হয়েছিল তা বললেও বিশ্বাস করবে না তােমরা । সারাদিন সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন । কলেজ ছুটির পর শহরের অভিজাতদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে তাদের বােঝান । গভীর রাত্রে ঘরে ফিরে পুস্তক রচনা ও শাস্ত্র গ্রন্থ অধ্যয়ন । শাস্ত্রীয় সমর্থন খুঁজতে খুঁজতে কোনাে কোনােদিন রাত প্রায় শেষ হয়ে যেতাে । নিজে ৫০০ টাকা মাইনে পেতেন কিন্তু কিছুই প্রায় সঞ্চয় করতে পারতেন না । বিধবা বিয়ের খরচ মেটাতে গিয়ে বরং সে সময় বেশ কিছু ঋণ হয়ে গিয়েছিল তার । 

      ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠীর যুবকরা বিদ্যাসাগরকে আশ্বাস দিয়েছিল একবার আইন পাশ হয়ে গেলেই দলে দলে বিধবা বিবাহের ব্যবস্থা করবে তারা । কিন্তু কার্যত দেখা গেল একটিও বিধবার বিয়ে দিতে পারল না তারা । 

      জজ কোর্টের পণ্ডিত , শ্রীশচন্দ্র ন্যায়রত্ন নামের এক তেজস্বী ও আদর্শবান যুবক এই সময় এগিয়ে এল বিধবা বিবাহের প্রতিজ্ঞা নিয়ে । পাত্রীও স্থির হল । শান্তিপুরের এক কুলীন কন্যা নাম কালীমতী , বয়স এগারাে । বিয়ের সব ঠিকঠাক । নিমন্ত্রণপত্র পর্যন্ত ছাপানাে হয়ে গেছে । এমনি সময় হঠাৎ গা ঢাকা দিল শ্রীশচন্দ্র । তার মা নাকি ছেলে বিধবা বিয়ে করলেই আত্মহত্যা করবেন এই বলে শাসিয়েছেন । মায়ের ভয়েই শিক্ষিত যুবক পুত্র নিজের আদর্শ ও কর্তব্য থেকে পিছিয়ে এসে কাপুরুষের মতাে আত্মগােপন করল । সবাই তাকে ছি ছি করতে লাগল । বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে বিদ্রপ ও ব্যঙ্গের বাণ বর্ষিত হতে লাগল । মুষলধারে । কালীমতীর মা লক্ষ্মীমণি ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিদ্যাসাগরের নামে মানহানির মামলা দায়ের করল আদালতে । 

        প্রচণ্ড মানসিক আঘাতে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন বিদ্যাসাগর । ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের দল কীর্তনীয়া ভাড়া করে পাঠালাে । তারা দিনরাত বিদ্যাসাগরের সুকিয়া স্ট্রিটের বাসায় , তার শােবার ঘরে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নেচে নেচে গাইতে লাগলেন- ‘ শুয়ে থাকো বিদ্যেসাগর চিররােগী হয়ে । বিদ্যাসাগরের গুণমুগ্ধ শান্তীপুরের তাতীরা সেইসময় শাড়ির পাড়ে সােনালি সুতাে দিয়ে লিখেছিল ‘ বেঁচে থাকো বিদ্যেসাগর চিরজীবী হয়ে’– এ গান তারই প্যারােডি । 

      বিদ্যাসাগর বিছানায় শুয়ে শুয়ে নীরবে শুনতেন ওই প্যারডি । বন্ধু রাজকৃষ্ণ জানালা বন্ধ করে দিতে চাইলে তিনি বাধা দিয়ে বলতেন ওরা ভাড়া করা লােক । কাজ না করলে টাকা পাবে না । হয়তাে তিনি ওই প্যারােডির মধ্যে থেকেই খুঁজে নিতেন তার ভবিষ্যৎ সংগ্রামের শক্তি । 

      এদিকে শ্রীশচন্দ্রের ভীরুতায় উৎসাহিত হয়ে রাধাকান্ত দেবের দলবল আবার নতুন এক আবেদনপত্র পাঠালাে সরকারের কাছে । আবেদনে লেখা হল যে আইন করবার পরও যখন একটি ও বিধবার বিয়ে দেওয়া গেল না তখন এ আইন রদ করে দেওয়া হােক না হলে সরকারই হাস্যাস্পদ হবেন । 

       এ খবরও যথাসময়ে বিদ্যাসাগরের কানে পৌছুল । তিনি বুঝলেন সর্বাংশে পরাজয় ঘটতে চলেছে । তবু ভেঙে না পড়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলেন । মানুষের শুভবুদ্ধির উদয়ের জন্য এই অপেক্ষা কিন্তু শেষপর্যন্ত হতাশ করল না তাঁকে । 

      শ্ৰীশচন্দ্র নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে বিদ্যাসাগরের পায়ে লুটিয়ে পড়ল । সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে । মাকেও বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে । কালীমতীর মা লক্ষ্মীমণি ও আদালত থেকে মানহানির মামলা । তুলে নিয়েছেন ।

      কাজেই শুভবিবাহের পথে আর কোনাে বাধা রইল না । রােগশয্যায় উঠে বসলেন বিদ্যাসাগর । তার দেহে মনে আবার ফিরে এলাে সিংহের শক্তি । সুকিয়া স্ট্রিটে বিদ্যাসাগরের বাড়িতেই সামিয়ানা খাটিয়ে ২০০০ লােক নিমন্ত্রণ করে মহা ধুমধাম সহকারে অনুষ্ঠিত হল কলকাতার প্রথম বিধবা বিবাহ । একজন শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত অবিবাহিত , কুলীন হিন্দু ব্রাহ্মণ যুবক স্বেচ্ছায় ও সাড়ম্বরে এক বিধবা বালিকাকে বিয়ে করে সংসারে বরণ করে নিল । বহু সম্ভ্রান্ত নারীপুরুষ বিবাহে উপস্থিত হয়ে বর কনেকে আশীর্বাদ করল । আইনত সিদ্ধ বিধবা বিবাহ এবার সমাজেও সিদ্ধ হল । 

      এতদিনে জয় হল বিদ্যাসাগরের । জয় হল তার অজেয় পুরুষকারের । এরপর থেকে আর কোনাে বাধা রইল না । একে একে কোলকাতার অনেক কুলীন অভিভাবকই তাঁদের বিধবা কন্যাদের বিয়ে দিতে এগিয়ে এলেন । 

       অবশ্য শ্রীশচন্দ্রের বিয়ে পণ্ড করে দেবার জন্যে রাজা রাধাকান্ত দেবের দলবল চেষ্টার কোনাে ত্রুটি করেনি । বােমা , পটকা ও লাঠিয়াল নিয়ে বরের শােভাযাত্রার ওপর হামলা চালাবার জন্য সবরকম চেষ্টাই করেছিল তারা । কিন্তু আগে থেকেই প্রচুর পুলিশ মােতায়েন রাখায় তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হল ।

      জগতে শুভশক্তির জয় হবেই হবে । জয়যুক্ত হবেই কল্যাণমুখী মানুষের আপ্রাণ সংগ্রাম । হয়তাে বিলম্ব হবে , কিন্তু জয় হবেই । 

       ‘ যদি ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলাে রে ' -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সমাপ্ত 

 

হেলেন কেলার | Helen keller success story | হেলেন কেলার এর জীবন কাহিনী | Bangla success story

 হেলেন কেলার | Helen keller success story | হেলেন কেলার এর জীবন কাহিনী | Bangla success story
Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around Helen Keller.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                                        

                           হেলেন কেলার 

  ' So much has been given to me ; I have no time to ponder over that which has been denied . 

       ' এতাে পেয়েছি জীবনে যে কি কি পাইনি তা নিয়ে মিছিমিছি মাথা ঘামাবার মতাে সময়ই নেই আমার ।

       -কে বলেছেন বলাে তাে এই কথাগুলি ? বলেছেন এমন একজন মহিলা যিনি তাঁর চোখ আর কান দুটো ইন্দ্রিয়কেই সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছিলেন মাত্র ১৮ মাস বয়সে । কিন্তু মনের জোর হারান নি ।

      এই পৃথিবীতে এরপরও ৮৭ টি বছর তিনি শুধু যে তুমুলভাবে বেঁচেই রইলেন তা নয় কোটি কোটি মানুষের কানে দিয়ে গেলেন বাঁচার এক মহামন্ত্র । 

      ‘ হার মেনাে না , হাল ছেড়াে না জয় তােমার হবেই । 

     হেলেন কেলারের জন্ম আমেরিকার আলবামা শহরে । বছর দেড়েকের ছােট্ট খুকি । কথাও ফোটেনি মুখে । এমন সময় দুরন্ত জ্বরে পড়লেন । অনেকদিন পর , জ্বর যখন ছাড়ল তখন দেখা গেল মেয়েটি আর চোখেও কিছু দেখতে পায় না , কানেও কিছু শুনতে পায় না । কানে কারাে কথা শুনতে পেতেন না বলেই নিজেও কথা বলতে শিখলেন না । সবাই জানল- এ মেয়ে শুধু অন্ধ এবং কালা নয়- বােবাও । জীবনে আর কোনােদিনই ও কথা কইবে না ।

       এমন মেয়ে নিয়ে বাবা মা - এর হতাশা আর দুশ্চিন্তা যে কতখানি তা নিশ্চয়ই তােমরা অনুমান করতে পারছ ।

         কিন্তু তারা হাল ছাড়লেন না । প্রতিবন্ধী বলে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে মেয়েটিকে বাড়ির এককোণে আবর্জনার মতাে ফেলে রাখলেন না । তারা চারিদিকে খোঁজ করতে লাগলেন এমন একজন সহৃদয়া , দয়াবতী শিক্ষিকার যিনি ধৈর্য ধরে , একটু একটু করে হেলেনকে জীবনযাত্রার সাধারণ কাজগুলি করতে শেখাবেন , যাতে ভবিষ্যতে তাকে পরমুখাপেক্ষি হয়ে না থাকতে হয় । হেলেন এবং তার বাবা মায়ের ভাগ্য ভালাে- ঠিক এমনই একজন শিক্ষিকা মিস এ্যানে মেসফিল্ড সুলিভান সানন্দে এগিয়ে এলেন হেলেনের দায়িত্ব নিতে । হেলেনের জীবনে তিনি ছিলেন দেবদূতী স্বরূপ । যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন হেলেনের ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন তিনি । 

     হেলেনের জন্য মিস সুলিভান বিয়ে করলেন না সারাজীবন । তারই ভালােবাসার যাদুস্পর্শে অন্ধ , বােবা , কালা মেয়েটি কিভাবে একটু একটু করে পৌছলেন সফলতার শীর্ষ বিন্দুতে , সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যা পারে । তাই সে করে দেখাল— সে এক রূপকথার কাহিনি । 

    কি করে এই অসাধ্য সাধন করলেন মিস সুলিভান ? 

    প্রথমে নানা আকৃতির বিভিন্ন জিনিস হেলেনের হাতে তুলে দিয়ে সুলিভান একটু একটু করে তাকে অক্ষর ও শব্দ শেখালেন । অক্ষরগুলাে অবশ্যই ছিল ব্রেইলের । ব্রেইল হল অন্ধদের জন্য বিশেষ ভাবে বানানাে কাগজের ওপর উঠে থাকা নানা চিহ্ন যা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে বােঝা যায় । ব্রেইলির সাহায্যে অল্পদিনের মধ্যেই অন্ধ হেলেন লিখতে আর পড়তে শিখে গেলেন । লেখা ও পড়ার কৌশল শেখবার পর খুবই তাড়াতাড়ি হেলেন শিখে গেলেন ফরাসী , জার্মান , গ্রীক ও ল্যাটিন এই চারটি ভাষা । ১৮ বছর বয়সেই বি এ পাশ করে গেলেন তারপর লিখতে শুরু করলেন নিজের জীবন কাহিনি । এক আশ্চর্য উত্তরণের রূপকথা The story of my life । বইটি পৃথিবীর ৫০ টি ভাষায় অনুবাদ হল । লেখিকা হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পেলেন সারা বিশ্বে ।

        সেই বােবা কালা অন্ধ মেয়েটি , একদিন যে ছিল পরিবার আর সমাজের বােঝা আজ সে - ই এগিয়ে এলাে সমাজের সেবায় । সুস্থ সবল । ধনী আর সুখী মানুষেরা যাদের কান্না শুনেও কর্ণপাত করে না , তাদের দুঃখের কথা আজ মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারলেন এই প্রতিবন্ধী মেয়েটি । সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াতে লাগল সে আর সেই বক্তৃতা যারা শুনতে এল তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে লাগলেন অর্থ । অন্ধদের জন্য গড়ে তােলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সেই অর্থ অকাতরে দান করে দিলেন তিনি । 

        হেলেনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক গল্প , সিনেমা , উপন্যাস । এর মধ্যে দুটি সিনেমা অস্কার পেয়েছে । এছাড়াও মিস হেলেন কেলার পেয়েছেন নানা দেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার । 

     আমেরিকার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান হল মেডেল অব ফ্রিডম । স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এই সম্মান তুলে দিলেন হেলেনের হাতে । সারা বিশ্বের মানুষ আজ হেলেন কেলারের নামে জয়ধ্বনি দেয় । তার জীবনের ইতিহাস থেকে দুঃখী অসহায় হতাশ মানুষ খুঁজে নেয় জীবনের রসদ , খুঁজে নেয় কিছুতেই হাল না ছাড়ার , হার না মানার মন্ত্র ।

     The most pathetic person in the world is someone , who has sight , but has no vision.- Helen Keller

সমাপ্ত 

ক্ষুধা | বিমলচন্দ্র ঘােষ | Khuda | Bimol Chandra Ghosh | Bangla Kobita

ক্ষুধা | বিমলচন্দ্র ঘােষ | Khuda | Bimol Chandra Ghosh | Bangla Kobita
তোমার লেখা গল্প বা কবিতা আমাদের Website এ প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারো আমাদের সাথে, আমাদের Email Id, "lovejunction506@gmail.com.আমরা তোমার Email এর অপেক্ষায় আছি । ততক্ষনে এই কবিতাটি তোমার জন্য ।  

  ক্ষুধা

 বিমলচন্দ্র ঘােষ 

ক্ষুধাকে তােমরা বেআইনি করেছ 

ক্ষুধিতদের আখ্যা দিয়েছ বিপজ্জনক

উদ্বাস্তু নরনারীর অবাতি শােভাযাত্রা 

      তােমাদের নিশ্চিন্ত শাসনের ব্যাঘাত করে 

দুর্ভাগা লক্ষ্মীছাড়াদের চিৎকারে তােমরা বিব্রত বােধ কর 

হে পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত মহানায়কেরা 

আহা তােমাদের কী জ্বালা ।

আহা তােমাদের কী কষ্ট । 


ওরা ক্ষুধিত ওরা লাঞ্চিত ওদের মাথার ঠিক নেই 

তাই ওরা তােমাদের মতাে অকপট দেশভক্তদের ও বলে ।

 সাম্রাজ্যবাদীর তল্পিদার 

বলে ধনৈশ্বর্যবিলাসী জনশত্রু

 সমাজতন্ত্রের মুখােশ আঁটা চোগাচাপকানওয়ালা বেনিয়া । 

ওরা ক্ষুধিত ওরা উন্মাদ ওরা লক্ষ্মীছাড়া 

অধঃপতিতদের হৃদয়বিদারক প্রলাপে কান দিয়াে না ,

ওরা বােঝে না তােমাদের সাত্ত্বিক শাসনের মহিমা 

বােঝে না তােমাদের ভবিষ্যদ্বাণীর মাহাত্ম্য !


বিগত পঁচিশ বছর তােমরা ওদের আশ্বাস দিয়ে এসেছ

 কিষান - মজদুর - রাজ কায়েম হবে । 

অতি লােভের বেইমানিতে তােমরা সে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারনি 

অসত্যের অন্ধকারে মিশে গেছে তােমাদের সেই অগ্নিগর্ভ ঘােষণা 

প্রতিষ্ঠা করেছ তিন সিংহ । 

ধর্মাশােকস্তম্ভের পৌরাণিক গাম্ভীর্যে 

তােমাদের রাজকীয় আড়ম্বরের কুটনৈতিক কুচকাওয়াজে 

আসমুদ্র হিমাচল থরহরিকম্প ! 

ওরা মিথ্যা চাচায় দাবি জানায় আওয়াজ তােলে

ওরা ভুল করে ওরা ক্ষুধিত ওদের মাথার ঠিক নেই 

ওদের কথায় কান দিয়ে না ।


দয়া করে তােমরা কিনারক্তপাতে দেশ স্বাধীন করেছ 

 শতুমিত্রের পারস্পরিক দাক্ষিণ্যে 

ওরা বােঝে না তােমাদের রাজনীতি 

বােঝে না হিন্দুস্থান পাকিস্তানের নারকীয় মানচিত্র

ওরা বলে কায়েমিস্বার্থের সাম্প্রদায়িকতা তােমাদেরই সৃষ্টি

নিরুপদ্রব বাঁটোয়ারার যুপকাষ্ঠে ,

ওরা ক্ষুধিত ওদের জাতধর্ম নেই ওরা সর্বহারা 

ওদের ছােটো কথায় কান দিয়াে না । 


তােমরা সময় চেয়েছ 

শিশুরাষ্ট্রকে হাঁটতে শেখানাের সময়

তবু ওরা বলে রাম না জন্মাতেই রামায়ণ ? 

যে শিশুর জন্মই হল না তার আবার হাঁটতে শেখা ! 

ওরা ক্ষুধিত ওরা অজ্ঞ ওদের কথায় কান দিয়াে না । 


আহা তােমরা কত সুন্দর ! কত ভালাে ! কী বড়ােলােক ! 

কী চমৎকার তােমাদের বক্তৃতার ভাষা । 

        মার্জিত - সংযমের রােমাঞ্চকর আভিজাত্যে ! 

নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের হুমকিতে

অহিংসায় 

অনশনে । 

আধ্যাত্মিক অসহযােগে 

নিরুপদ্রব কারাবরণে 

কত কষ্টে

আহা কত কষ্টে তােরা লন্ড করেছ

 ইংরেজের এত সাধো বাণিজ্যতীর্থে প্রবেশাধিকার 

যে তীর্থে তােমরা ছিল চণ্ডালের মতাে অস্পৃশ্য

যে তীর্থের অণুপরমাণু ক্ষুধার বিস্ফোরণ দিয়ে গড়া ।

 ওরা ক্ষুধিত ওদের মাথার ঠিক নেই 

অধঃপতিতদের ছোটো কথায় কান দিয়ে না !


 ক্ষুধাকে তােমরা বেআইনি করেছ

 ক্ষুধিতদের আখ্যা দিয়ে বিপজ্জনক

 হে দেশভক্ত - মহানায়কেরা

তোমরা ভুল বুঝ না এই  কবিতাকে 

যদি ব্যাঙ্গ মনে হয় তবে সমস্ত ক্ষুদ্র জগৎকে 

         ঝোলাও ফাঁসি কাঠে 

টেনে উপড়ে ফেলো ক্ষুদিতদের বসনা 

গেঁথে ফেলো সমস্ত ক্ষুদিতদের কংকাল 

    রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কবরে ।


             সমাপ্ত 

Bengali Poem :- This poem is written by Bimal Chandra Ghosh. We are collected best love and romantic poem in bengali. We can also published your poem or story in bengali.If  you want to send your bengali poem . Like sad poem, romantic poem, love poem and many others poem in bengali. Then you can contact me. My email id , "lovejunction506@gmail.com". So please sent your poem or story and don't forget to mention your name. I published your creation on my website.Please share this poem in your friends or lover to gift a beautiful moment.Thank you so much.

Robert Bruce Story | রবার্ট ব্রুস এর জীবন কাহিনী | Robert Brush Success Story

Robert Bruce Story | রবার্ট ব্রুস এর জীবন কাহিনী | Robert Brush Success Story
Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around Robert Bruce.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.

 রবার্ট ব্রুস  

      স্কটল্যান্ডের সীমান্তে গভীর এক বনের মধ্যে তখন সবেমাত্র দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে । চারিদিকে ঘুটঘুট্টি অন্ধকার । কাছে পিঠে কোথাও হাহা করে ডেকে উঠলাে এক হিংস্র হায়না । শুকনাে ডালপালা মাড়িয়ে ছুটে এল কোনাে জানােয়ার । এক নাগাড়ে ডেকে চলেছে ঝি ঝি পােকা । তাছাড়া আর কোথাও কোনাে শব্দ নেই । দশ বারাে মাইলের মধ্যে নেই কোনাে মানুষের চিহ্ন । চারিদিকে শুধু ভীষণ অরণ্য আর নিকষ কালাে অন্ধকার । প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কায় যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে বনভূমি । 

       এই নির্জন ভয়ঙ্কর বনের মধ্যে এক পাহাড়ের ছােট্ট গুহায় , ঘুটঘুটে অন্ধকারে একলাটি চুপ করে শুয়ে আছেন এক মাঝবয়সী মানুষ । শরীরে যােদ্ধার পােশাক ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে । বর্মে হয়েছে হাজারটা ছিদ্র । হাতে - পায়ে - মুখে নানা জায়গায় অজস্র আঘাতের চিহ্ন । তাদের কোনাে কোনােটা থেকে রক্ত ঝরে শুকিয়ে আছে । কোনােটা থেকে তখনও নেমে আসছে টুইয়ে পড়া ক্ষীণ রক্তধারা । ক্রমাগত রক্তপাতে মানুষটি অবসন্ন হয়ে পড়েছেন । ক্লান্ত মাথাটি বাম বাহুর ওপর রেখে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছেন সঁাতসেঁতে মেঝের ওপর । অসম্ভব তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে । কিন্তু একদম জনমানব শূন্যস্থানে জলের আশা দূরাশা ছাড়া আর কিছুই নয় । তাই জলের সন্ধান না করে মানুষটি শুয়ে শুয়ে শান্তভাবে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করতে লাগলেন । 

     একে একে তার মনে পড়ে যেতে লাগলাে জীবনের ফেলে আসা ১৭ টি বছরের কথা । ইংল্যান্ডের রাজা এডােয়ার্ড II ষড়যন্ত্র করে রাজ্যচ্যুত করল তাকে । তারপর দিনের পর দিন , বছরের পর বছর বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সৈন্য সংগ্রহ করেছেন তিনি । তারপর অনেক আশা আর উদ্যম নিয়ে ছুটে গেছেন রাজ্যোদ্ধারে কিন্তু প্রতিবারই সকরুণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন । গ্রামবাসী , কৃষক প্রজারা দয়া করে তাকে খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে । তাই খেয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছেন কোনােমতে । স্ত্রী পুত্র পরিবার যে কোথায় আছে , বহুদিন তাদের কোনাে খবর পাননি । সবচেয়ে ছােটো মেয়েটির কথা ভেবে তার চোখে জল এসে যায় । তার জন্মের পর থেকেই তিনি তাদের আত্মীয়দের বাড়ি রেখে এসেছেন , না জানি কতােই না অনাদরে আর অবহেলায় তাদের দিন কাটছে , হয়তাে বা বেঁচেই নেই । হয়তাে বা অপমানের হাত থেকে বাঁচতে তারা পালিয়ে গেছে ভিন রাজ্যে । ঈশ্বর জানেন জীবনে আর কখনও দেখা হবে কিনা ! 

      অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে অসহ্য ক্ষুধা আর ক্লান্তিতে কখন যেন দুচোখ জুড়ে ঘুম এসে গিয়েছিল তাঁর । হঠাৎ একদিন বন্য পিপড়ের তীব্র দংশনে ঘুম ভেঙ্গে গেল ততক্ষণে হাজার হাজার পিপড়ে ঘেঁকে ধরেছে তাকে । নির্বিচারে দংশন করে চলেছে তাকে , কিন্তু শরীরে এতটুকু শক্তি নেই যে পিপড়েগুলােকে তাড়ান । তীব্র যন্ত্রণায় চোখে জল এসে গেল । এতদিন পর তার মনে হল , এভাবে বেঁচে থাকার কোনাে মানে হয় না । এভাবে বনে জঙ্গলে পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়ে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভালাে । এতদিনে যখন পারলেন না তখন স্কটল্যান্ডের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করা তার দ্বারা আর বােধহয় ইহজীবনে সম্ভব হবে না । অথচ শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করে , দেশবাসীর তীব্র বিদ্রুপ , লাঞ্ছনা আর অপমান নীরবে হজম করে ভীরু কাপুরুষের মতাে বেঁচে থাকতেও তিনি রাজী নন । অতএব আত্মহত্যা করাই বােধহয় সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ । 

       গভীরভাবে চিন্তা করছেন রবার্ট ব্রুস আর অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে আছেন গুহার দেওয়ালের দিকে । ভাঙ্গা ফাটল দিয়ে তখন গুহার মধ্যে এসে পড়েছে দিন শেষের মরা আলাে । সেই আবছা আলােয় রবার্ট ব্রুস দেখছিলেন একটি ছােট্ট মাকড়সা দেওয়ালের গায়ে জাল বােনার চেষ্টা করে চলেছে । গুহার পিচ্ছিল পাথরের দেওয়ালে জাল বুনতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল মাকড়সাটি । বেশ কিছুটা করে জাল বােনে তারপর হঠাৎই সবটা ছিড়ে ঝুলে যায় । মাকড়সাটি একটুও না থেমে আবার শুরু করে দেয় বােনা । আবার বােনে , আবার ছেড়ে । আবার নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে যায় বােনার কাজ , একটুও বিরতি নেই , একটুও ফাঁকি নেই তার কাজে । 

      রবার্ট ব্রুস একমনে দেখতে লাগলেন । অন্যমনস্ক হলে ক্ষুধা , তৃষ্ণা আর ক্ষতের জ্বালা অন্তত কিছুটা কমবে । তিনি ক্লান্ত দৃষ্টিকে যতদূর সম্ভব প্রসারিত করে দেখতে লাগলেন মাকড়সার কাণ্ডকারখানা । দেখতে দেখতে সারা বিকেলটা পার হয়ে গেল । এর মধ্যে অন্তত একশত বার ব্যর্থ হয়েছে মাকড়সাটি , কিন্তু হাল ছাড়েনি । তার অধ্যবসায় দেখে এত দুঃখেও হাসি পেল তাঁর । ভাবলেন আমার মতােই বেচারী মিথ্যে আশার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে , ওর জন্যে একটু বুঝি দুঃখও হল তাঁর । 

      অন্যমনস্ক হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন , ঘুম যখন ভাঙ্গল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে । অরণ্যের আকাশে উঠেছে বিরাট একফালি চাদ । গুহার দেওয়ালের সরু ফাটলখানা দিয়ে একমুঠো চাঁদের আলাে এসে পড়েছে । দেওয়ালে । সেই আবছা আলােয় রবার্ট ব্রুস দেখতে পেলেন গুহার দেওয়াল জোড়া বিশাল একখানি মাকড়সার জাল আর তার ঠিক মাঝখানটিতে চুপটি করে বসে আছে বিন্দুর মতাে ছােট্ট সেই মাকড়সাটি ।

      অনেকক্ষণ ধরে নিপুণভাবে বােনা মাকড়সার জালটির দিকে স্থির বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন রবার্ট ব্রুস । 

      তাই তাে ! অতটুকু একটা কীট , দেখাই যায় না প্রায় , তারও কত মনের জোর । সারাটা দিন ধরে কত শতবার ব্যর্থ হল তবু হাল ছাড়লাে । শেষপর্যন্ত জালটা বুনেই তবে ছাড়ল । এখন কেমন সুখী সে , কত তৃপ্ত ।

       নাঃ , মরতেই যদি হয় , তবে যুদ্ধক্ষেত্রেই মরব । এভাবে কাপুরুষের মতাে অন্ধকার গুহার কোণে লুকিয়ে মরব না । শরীরের অবশিষ্ট শক্তিটুকু দিয়ে কোনােমতে উঠে দাঁড়ালেন মহাবীর রবার্ট ব্রুস । জিততেই হবে , একটা ক্ষুদ্র মাকড়সার কাছে হেরে যাবেন না । ও যখন পারে তিনিও পারবেন , ব্যর্থতা আর হতাশাকে তুচ্ছ করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে— যতদিন না নিজ রাজ্য ফিরে পান ততদিন । প্রয়ােজন হলে আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি । পরদিনই ভাের হতেই গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন রবার্ট ব্রুস , মনে তার নতুন উদ্যম , শরীরে নতুন বল । ধীর কিন্তু দৃঢ়পায়ে এগিয়ে চললেন অরণ্যের পারে জনবসতির দিকে বাঁচতে হবে , সৈন্য সংগ্রহ করতে হবে , লড়াই করতে হবে । 

      সে বারের যুদ্ধেই জয়লাভ করেছিলেন মহাবীর রবার্ট ব্রুস । সেই ছােট্ট মাকড়সাটির দেওয়া পরম শিক্ষাটি কিন্তু তিনি সারাজীবনে একদিনের জন্যও ভােলেন নি । 

       You learn a much from those who have failed as from those who have succeeded . -Michael Johonson

   
                            সমাপ্ত 

আমাদের আর ও কবিতা রইলো তোমাদের জন্য :-👇👇

(১২) A Black Girl 

Chithi ( চিঠি ) | Bangla Poem | Monidra Ray bangla poem | Bangla Kobita

Chithi (  চিঠি ) | Bangla  Poem | Monidra Ray bangla poem | Bangla Kobita

তোমার লেখা গল্প বা কবিতা আমাদের Website এ প্রকাশিত করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারো আমাদের সাথে, আমাদের Email Id, "lovejunction506@gmail.com.আমরা তোমার Email এর অপেক্ষায় আছি । ততক্ষনে এই কবিতাটি তোমার জন্য ।  

             চিঠি

                মণীন্দ্র রায় 

   সুশান্ত , তােমার মনে পড়ে

    সরলার মাকে , যে এখানে 

   কাজ করত ? হঠাৎ সেদিন 

   শুনল যেই বন্যা পাকিস্তানে , 

   বুড়ি গিয়ে বসল বারান্দায় ,

   দেখি তার চোখে জল ঝরে । 


   জানতাম অবশ্য পাবনায় । 

   বাড়ি তার , উদ্বাস্তু রমণী ।

   কিন্তু নেই তিন কুলে কেউ , 

   সরলাও গেছে পরলােকে , 

   তার মনে জাগল কার শােকে

    দ্বিতীয় কন্যার এই ঢেউ ? 


   তােমাকে , সুশান্ত  , সত্যি বলি 

   এ ঘটনা কিছু গুরুতর 

   তা ভাবিনি , তবু কৌতূহলী 

   প্রশ্ন করি - কাঁদ কেন ? বানে

    পাবনাতেই শুধু বাড়িঘর

    ডােবেনি তাে ! তাছাড়া ওখানে


    কী আছে তােমার , কেন কাঁদ ? 

   শনে বুড়ি চোখ মুছে বলে – 

   কান্নায় তখনো বাধো বাধো 

   গলা তার , বললো  কাঁদি কেন 

   তা তােমারে বোঝাই কী করে ?

   ভগবান আমারে দিল যে


    কাঁদনের কপাল কী কব !

   সােয়ামি মরেছে কোন্ কালে ,

   এক মেয়ে সে ও গেলো শেষে 

   ভিটামাটি ছেড়ে একা আমি 

   বেঁচে আছি এ পােড়াকপালে , 

   তােমাদের দুয়ারে বিদেশে ।


    আমি হেসে সান্ত্বনার সুরে

    বলি , মিছে বিদেশ কেন যে 

   ভাব তুমি , এই তাে তােমার 

   আপনার দেশ । এখানেও 

   বন্যা কত দেশ গ্রাম মােছে ,

   কত ঘরে মৃত্যু হাহাকার । 


   বুড়ি বলে , আহা বাছা তারা 

   বেঁচে থাক । আমি অতশত 

   বুঝি না তাে । কিন্তু সেই বাড়ি 

   এতটুকু হতে যারে চিনি 

   আর সেই ঘর পুবদুয়ারি 

   সিঁদুরে আমের সেই চারা 


   সবই আজ পরের অধীনে ,

   তবু সবই ছিল — পর কেন 

   তারাও তাে আপন আমার 

   নগদ দানেই নিল কিনে 

   রহিমের বাবা , এতদিনে 

   বানে ডুবল সে ঘরদুয়ার । 


   বলি আমি — গেছে যেতে দাও 

   জলজ্যান্ত আমরা তাে আছি , 

   আমাদেরই দেখে শান্তি পাও । 

   বুড়ি বলেও সােনা , ও সােনা , 

   বেঁচে থাকো এ মাথায় চুল 

   যত আছে ! তবু তাে রসুল ।


    করিমের বেটা তারাে কথা

    কিছুতেই ভুলতে পারি না যে ! 

   এ দুর্দিনে সে কি বেঁচে আজে ,

    আছে মাঝিপাড়ার আমিনা , 

   আর সেই বুড়া বটগাছ

    তারাে কথা ভুলতে যে পারি না । 


   সরলার মা তাে নিরক্ষরা । 

   মনে তার দুঞ্জেয় জগৎ । 

   যে বিশ্বাসে পাখি বাসা গড়ে , 

   গাছে ফুল ফোটে , ধরে ফল , 

   মা তার শিশুকে বুকে তােলে ।

    যুক্তি তর্ক সেখানে অচল । 


   কাজেই নীরবে উঠে আসি । 

   দেখি , বুড়ি ঘােলা চোখে চেয়ে 

   ভাবে তার হারানাে জীবন , 

   কত স্বপ্ন ছবির মতন 

   ভেসে ওঠে সে দৃষ্টিতে , আর 

   তােলপাড় করে তার মন ! 


    বুঝি সে তাে খােজে না স্বদেশ

    টাকা - আনা - পাইয়ের হিসাবে,

    ঘর - বাড়ি - মানুষ - প্রকৃতি 

   বিন্দু বিন্দু মিলে যে উন্মেষ

    সে দীপ্ত আলােতে তার স্মৃতি

   আশ্বিনের প্রখর আকাশ !

    সুশাস্ত , দেশকে ভালােবাসাে 

    এ তােমার গর্ব _ আমারাে তা ! 

   কিন্তু এই শিরায় শিরায়

  ওতপ্রােত আশ্চর্য চেতনা

   আছে কি ? বল তাে কার মনে

   সােনা হয়ে জ্বলে ধূলিকণা ! !


        সমাপ্ত 

Bengali Poem :- This poem is written by Monindira Ray. We are collected best love and romantic poem in bengali. We can also published your poem or story in bengali.If  you want to send your bengali poem . Like sad poem, romantic poem, love poem and many others poem in bengali. Then you can contact me. My email id , "lovejunction506@gmail.com". So please sent your poem or story and don't forget to mention your name. I published your creation on my website.Please share this poem in your friends or lover to gift a beautiful moment.Thank you so much.

Careless (কেয়ারলেস) | Bengla love story | ভালোবাসার গল্প

 Careless (কেয়ারলেস) | Bengla love story | ভালোবাসার গল্প

                      কেয়ারলেস

                                        নোমান 

এই তুই এত কেয়ারলেস কেন???
 -তোর হিমু পছন্দ না?? 
~হ্যা পছন্দ।
হিমুর সাথে তোর কেয়ারলেস হওয়ার সম্পর্ক কি??
 -সম্পর্ক আছে।হিমু কেয়ারলেস তাই আমিও কেয়ারলেস
 ~না তুই কেয়ারলেস হবি না।আমার কেয়ারিং হিমু পছন্দ।তুই আমার কেয়ারিং হিমু হবি
 -এএএএ তোর জন্যে কি পুরো হিমুকে পাল্টে দিব আমি??
 ~পাল্টে দিতে কে বলছে।তুই খালি একটু কেয়ারিং হবি।জানিস খুব ইচ্ছে আমার একটা কেয়ারিং বয়ফ্রেন্ড হবে
 -তাহলে তো তোর ইচ্ছে পূরণ করতেই হয়। আচ্ছা যা আজ থেকে আমি কেয়ারিং হিমু হলাম
 ~লাভ ইউ
-হ্যা লাভ ইউ।কেয়ারিং হলেই লাভ ইউ নইলে হারামী 
~হ্যা।চল এখন আমাকে বাসায় পৌছে দে
 -চল।আচ্ছা একটা কথা বলি??
 ~হ্যা বল 
-বিয়ের পরও কি তুই আমার সাথে তুই- তোকারি করবি???
 ~হ্যা করব।কোন সমস্যা???
 -না।সমস্যা থাকলেও বলব না। যে রাক্ষসী মেয়ে। সমস্যা আছে বললে এখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবি
 ~হি হি হি যাই।লাভ ইউ বাবু
 -লাভ ইউ ঠু ময়না . বলেই জারিন গেট খুলে বাসার ভেতর চলে গেল।আর রাহাত তার মেসে চলে গেল........ 

    . রাহাত একাদশ শ্রেণীতে পড়ে আর জারিন অনার্স প্রথম বর্ষে।এইটাই ব্যবধান ওদের মধ্যে। যা নিয়ে জারিন প্রায়ই চিন্তা করে। সম্পর্কের শুরুতে জারিন বলেছিল রাহাতকে .
   -তুই অত চিন্তা করিস ক্যান??? 
  ~না চিন্তা করব না আয় দুইজন মিলে নাচি 
   -হ্যা আয় নাচি
   ~থাপড়িয়ে তোর দাঁত ফেলে দেব
   -আর আমি তোরে উম্মাহ দেব 
   ~তুই অসম্ভব খারাপ
    -তুই ভাল
  
    আসলে রাহাতের মনে কি আছে তা শুধু সে নিজেই জানে . সম্পর্কটা শুরু হয়েছে বেশিদিন না।তবে এই কয়দিনে জারিন রাহাতকে অনেক বেশিই ভালবেসে ফেলেছে।প্রতিটা মূহুর্ত শুধু রাহাতকে নিয়েই স্বপ্ন বুনে... .
     রাহাত সেই স্বপ্নকে আরো জোরালো করে। সে জারিনের সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখে এবং জারিনকে স্বপ্ন দেখায়।রাহাত তার মেয়ের নামও ঠিক করে রেখেছে। তিশা হবে তাদের মেয়ের নাম।তবে জারিনের কিছু বাচ্চামি স্বভাব আছে।এই কারনে সে প্রায়ই রাহাতের কাছে বকা খায় .
    -তুই আমার সিনিয়র না??
    . জারিন মাথা নীচু করে জবাব দেয় .
    ~হ্যা
     -তাহলে তোর ভেতর এই বাচ্চা স্বভাব কেন?? 
    ~আমি কি জানি
    -আরেকদিন যদি এমন বাচ্চামি স্বভাব দেখি তাহলে থাপড়িয়ে তোর দাঁত ফেলে দেব বড় ছোট মানব না 
   ~আচ্ছা
   -আয় কাছে আয় একটু আদর করে দেই
   ~না আসব না।তুই আমাকে বকা দিয়েছিস
   -বকা কি সাধে দিছি?? তুই এমন না করলেই হত 
    ~হুমম।আচ্ছা যাই আমি
    -কই যাস?? 
    ~বাসায়
     -বাসায়কেন??
    ~আমার কাজ আছে।আর বই কিনেছি অনেকদিন। পরীক্ষা দুইদিন পরে।ওইগুলো ছুঁয়েও দেখি নি। আমার তো বাচ্চামি স্বভাব।এখন বড় হয়ে দেখাব
      -আমার মিষ্টিটা কি রাগ করেছে??? 
     ~কই না তো .
     রাহাত বুঝতে পারল জারিন রাগ করেছে এবং খুব বেশি।তার রাগ ভাঙাতে রাহাত মুহূর্তেই হাটু গেড়ে বসে জারিনের হাত ধরে প্রপোজ করল।
    . এইটা জারিনের খুব পছন্দ।একদিন সেইটা রাহাতকে বলেছিল আর তারপর থেকে যখনই জারিন রাগ করে তখনই রাহাত এই কাজটা করে | জারিন হাসছে।আর রাহাত হাটুর ওপর সমস্ত শরীরের ভর দিয়ে সেই ভুবনজয়ী হাসিটা দেখছে . 
    ~সারাজীবন কি এইভাবেই বসে থাকবি না কি রে হারামী??? 
   -হ্যা।আরেকবার হাসি দে তো 
   ~কেন???
   -আমাদের বাসায় না খুব বেশি লোডশেডিং হয়।তুই হাসি দিলে মুক্তো ঝরে।আর তার দরুন পুরো পৃথিবী আলোকিত হয়ে যায়।আমার মোমবাতির বিল তুই বাঁচিয়ে দিবে
 ~হারামী . বলেই জারিন রাহাতের পিঠে দুম দাম করে মারতে থাকে . 
   -আরে আরে মারছিস কেন?? 
   ~তুই এই কথা বললি কেন???
    -কি এমন বলে ফেললাম যার জন্য বিরোধীদলীয় সদস্যের মত সরকারি দলের গায়ে হাত দিচ্ছিস  |
    ~ওরে আমার সরকারি দল রে।কিভাবে তুই সরকারি দল হলি বল
    -আমি তোকে বিয়ে করব।তার মানে তোকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমি থাকব।আর আমার শ্বশুর এই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবে। তাহলে শ্বশুরমশাই বিরোধীদল আর আমি সরকারি দল।আর তুই যেহেতু ওনার মেয়ে তাই তুই ও বিরোধীদল
     ~হি হি হি।চমৎকার যুক্তি।আচ্ছা এখন শুন
    -হুম বল
    ~আমার পরীক্ষা।আমি কয়েকদিন তোর কাছে থেকে দূরে থাকব।দেখা হবে না হয়ত। তুই ভাল থাকিস।নিজের খেয়াল রাখিস।
     -একটু ও দেখা করবি না???
    ~না বাবু।বুঝো না কেন আমার পরীক্ষা। উল্টাপাল্টা কিছু হলে খবর আছে।মাত্র তো কয়েকটা দিন।আমার কি কষ্ট হবে না বল 
    -হ্যা হবে ময়না।তুমিও ভাল থেকো ময়না। নিজের খেয়াল রেখো 
    ~ধুর এইভাবে বলিস না।মনেহয় একেবারেই চলে যাচ্ছি।তুমি করে বলবি না।যাওয়ার আগমুহূর্তে মনটা খারাপ করে দিস না 
     -স্যরি রে ময়না।আয় তোকে বাসায় পৌছে দেই 
     ~না লাগবেনা।আমি একাই যেতে পারব 
    -জেদ করিস না ময়না।আয়।হয়তবা আজকেই শেষ 
     ~না বাবু আজকে শেষ না।শেষ হবে কেন?? 
    -হ্যা আচ্ছা আয় এখন 

     . জারিনকে বাসায় পৌছে দিল রাহাত।বাসায় ঢুকার আগে জারিন অনেক কান্না করেছিল। যা রাহাত দেখে নি। . জারিন পড়াশোনায় মনযোগ দিল।তবে হ্যা এই দুইদিনে রাহাত একটা বার ও জারিনকে কল দেয় নি। জারিন ও জেদ করে বসল যে সে ও কল করবেনা . আজকে কেন জানি জারিনের হঠাৎ ফেসবুকে যাওয়ার খুব ইচ্ছে হল।তাই সে ফেসবুকে লগ ইন করল।রাহাতকে অনলাইনে দেখতে পেল 
   . ~কেমন আছ??? 
    -ভাল
    ~মনে আছে আমাদের সম্পর্কের দ্বিতীয় দিন তুমি কি বলেছিলে??? .
    "কেয়ার করব ঠিক ততটাই যতটা তুই করবি বেশি করলে স্বার্থপর হয়ে যাবি"
    . জানো??? . স্বার্থপর এখন তুমি হয়ে গেছ। ভালবেসে যদি একটু সুখই না পাই তাহলে সেই ভালবাসার দরকার নাই আমার।তোমাকে আমি খুব বেশি কেয়ার করি তো তাই আমাকে কেয়ার করার প্রয়োজন হয় না।আমি কালকে সারাটা দিন একটা ম্যাসেজের অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু পাইনি। পুড়া কপালে এসব থাকে না।থাকবেও না। আচ্ছা নাইবা থাকল।এত কষ্ট আমি সহ্য করতে পারব না।তোমাকে স্বাধীন করে দিলাম। তুমি অন্যত্র পরাধীন হও।আমি না হয় দূর থেকেই দেখব। . ভাল থেকো
    -হুম .
    ~হুম কি রে হারামী?? তোর কি কিছুই বলার নেই?? 
   . -জানিনা পরীক্ষাটা দিয়ে আয় তোর সাথে কথা আছে। আমারও কিছু কাজ আছে।ভাল থাকিস 
   . ~কি কথা?? 
    -এখন না পরীক্ষা শেষ হলে বলব .
     ~কেন শুধু শুধু টেনশন দিস?? . 
     -টেনশন করিস না।পরীক্ষা দিস ভালমতো 
    ~আমি মারা যাব 
     -একটা স্বার্থপরের জন্য মারা যাস না। .
     ~তাতে তোর কি?? .
     -আচ্ছা শুন বলছি . 
     ~হুমম .
     -এইসব ভালবাসা টাসা আমার দ্বারা হবে না।আমি আমার নিজেকে ছাড়া আর কাওকে ভাল বাসতে পারি না। . 
    ~তাহলে এতদিন কি সব মিথ্যে ছিল?? 
   . -না চেষ্টা করেছিলাম তবে আমি ব্যর্থ .
    ~কিন্তু আমি যে তোকে ভালবাসি .
      -আর আমি আমার নিজেকে ভালবাসি। নিজেকে ছাড়া আর কাওকে ভালবাসতে পারব কি না তাও জানিনা 
      ~আমি তোকে ছাড়া বাঁচব না এইটা বলব না তবে তোকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নেওয়াটা খুব কষ্টের হয়ে পড়বে রে। আমাকে এইভাবে ছেড়ে চলে যাস না। আমি নাহয় চেষ্টা করব 
      -হ্যা চেষ্টা করতে পারিস।তবে আমার মনেহয় না সফল হবি।ব্যর্থ চেষ্টা .
      ~না আমি করব।তুই একটা বার আমাকে সুযোগ দে .
       -আচ্ছা।যা এখন পড় গিয়ে 
     ~আচ্ছা।যাই বাবু লাভিউ . সেদিনের পর থেকে রাহাত আর কখনই জারিনকে "ভালবাসি" বলে নি।আর জারিন একটু পর পর রাহাতকে ম্যাসেজ দেয়।রাহাতের খুঁজ নেয়। তার অনেক কেয়ার করে।তবে একদিন তার মনে হয় এতে রাহাত বিরক্ত হচ্ছে না তো?? তাই রাহাতের কাছে একটা ম্যাসেজ পাঠাল সে 
  . ~ আমি সিদ্ধান্তহীন।কি করব বুঝতে পারছিনা। ভাবি তোমাকে কাছে টানার চেষ্টা করব। তারপর আবার ভাবি এতে যদি তুমি বিরক্ত হও। যদি আমাকে ছেড়ে চিরতরে দূরে সরে যাও। তাহলে আমার কি হবে।যত দিন যাচ্ছে আমি ততই তোমাকে ভালবেসে যাচ্ছি।জানিনা ঠিক কি না। ভাবতেছ মেয়েটা কত নাছোড়বান্দা।পিছু ছাড়াতে চাচ্ছি।তবুও ছাড়ছে না। পিছনে জোকের মত লেগে আছে।যে সময় এই কথাটা ভাবি তখন সরে আসি . নানান প্রতীজ্ঞা করি যে আর ম্যাসেজ দিব না আর ভালবাসব না আর বিরক্ত করবনা। . কিন্তু আবার যখন মনে হয় যে তুমি চেষ্টা করতে বলেছিলে তখন আবার ফিরে আসি। আবার তোমাকে জ্বালাতন করি ম্যাসেজ দেই। আবার ভালবাসতে শুরু করি। আবার বিরক্ত করতে শুরু করি। এইটাতেও সমস্যা।আমি যে কি করব তা বুঝতে পারছিনা।তুমি একটু বলে দাও না আমি এখন কি করব। তবে তোমাকে ভুলে যেতে বল না।সেইটা আমি পারব না।সত্যিই পারব না। ভালবাসি বাবু বাসব আজীবন .
      -কেন শুধু শুধু আমাকে অপরাধী করছ??? . 
    জারিন তার জবাব দেয় নি।সেইদিন থেকে জারিন নিজের কাছেই বলে গেছে আমি রাহাতকে ভালবাসি।আর কখনই রাহাতের সাথে দেখা বা ম্যাসেজ দেওয়া কিছুই করে নি।একমনে অপেক্ষা করে চলেছে।মা- বাবা বিয়ের জন্য অনেক জোরাজুরি ও করেছেন কিন্তু লাভ হয় নি।জারিনের একটাই কথা সে বিয়ে করবে না * * * * * 

     চার বছর পর * * * 
      
     জারিন একটা ভার্সিটিতে প্রফেসর হিসেবে আছে। তবে এখনএ একাই।কিছু মধুময় স্মৃতি আর জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার শক্তি নিয়ে সে এখন বেঁচে আছে . রিক্সা থেকে নামছিল জারিন।খুব ব্যস্ত ছিল তাই কোনদিকেই খেয়াল ছিল না হঠাৎ করেই একটা বাবুর সাথে ধাক্কা খেল .
      ~স্যরি মামনি আমি দেখিনি 
      -ইটস ওকে 
      ~ওরে বাপরে।এত পাকা কথা
       -কথা আবার পাকা হয় না কি?? 
       ~হ্যা হয়।যেমন তোমারটা হচ্ছে। তা তুমি এইখানে কেন মামনি???
      -আব্বুর সাথে এসেছি।আব্বু পাঞ্জাবী কিনছে। আমার ভাল লাগছিল না তাই বাইরে এসেছি 
     ~তা এখন তোমার আব্বু কোথায়??
      -ওই যে ওইখানে . বলেই মেয়েটা তার আঙুল দিয়ে সামনের দিকে দেখাল।জারিন তাকাল।শুধু পিছনের দিক দেখা যাচ্ছে।বুকটা ধক করে উঠল তার। সে তো মনেহয় একে চিনে 
   . মেয়েটা কে নিয়ে ওর বাবার কাছে যাচ্ছে
     ~এই যা!!!আমি তো তোমার নাম জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি । আচ্ছা মামনি তোমার নাম কি??? 
     -তিশা
    ~তিশা!!!!! . বুকটা খুব বেশিই ধক পক করছে তার। এইটা রাহাতের মেয়ে নয় তো???? . ধুর কি যে চিন্তা করছি।তবে তিশার বাবাকে কয়েকটা কথা শুনান উচিৎ। এইভাবে কেও মেয়েকে রাস্তায় একা একা ছেড়ে দেয় এই ভেবে জারিন তিশাকে নিয়ে তার বাবার কাছে গেল 
   . ~এই যে!! আপনি এত কেয়ারলেস কেন??? 
   . কেয়ারলেস!!!!! শব্দটা শুনে রাহাত পিছন ফিরে তাকাল।আর তাকিয়েই আশ্চর্য 
   -তু তু তুমি
    ~হ্যা আমি।তোতলাচ্ছ কেন?? নতুন রোগ নাকি?? 
    -না আআআসলে তোমাকে দেখে এত্ত আশ্চর্য হয়েছি যে মুখ দিয়ে কথা বের হতে অনেক কষ্ট হচ্ছে 
   ~হা হা হা।আমাকে দেখে আশ্চর্য হওয়ার কি যাইহোক আছ কেমন??? বিয়েও করে ফেলেছ দেখছি।তা তোমার বউকে কি ভালবাসতে শিখেছ নাকি তাও শেখনি??? আচ্ছা আমি যাই।স্যরি তোমাকে জেরা করার জন্য। অধিকার নেই আমার . বলেই জারিন হাটা শুরু করল।চোখের কোণে জল
   . রাহাত দৌড়ে গিয়ে জারিনের হাতটা ধরে ফেলল 
   -হ্যা আমি এখন ভালবাসতে শিখেছি। তবে যে শিখিয়েছে তাকে পাই নি তাই বিয়েও করি নি। আর এইটা আমার ভাইয়ের মেয়ে।ভাই ভাবী দুজনই এ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছেন। তাই আমাকেই এখন আব্বু ডাকে।আব্বু ডাকে বলেই নামটা তিশা রেখেছি .
   জারিন চোখের পানি না মুছেই বলল . ~ভালবাস??????
    -ভালবাসি কি না জানিনা।তবে এখনও কেও কেয়ারলেস বললে পিছন ফিরে তাকাই।এখনও রাস্তার পাশ দিয়ে হাটলে মনেহয় কেও এসে ধমক দিয়ে বলবে . "দেখি এইপাশে আস তো।তুমি যেই কেয়ারলেস রাস্তায় হাটলে তো মনেই থাকেনা ওইখানে তুমি ছাড়াও আরো অনেক কিছু চলাচল করে" এখনও সিগারেট খাওয়ার সময় মনেহয় কেও এসে বলবে . "তুমি সিগারেট খাও না।আমার কলিজাটা খাও" . যদি এর মানে ভালবাসা হয়ে থাকে তবে হ্যা আমি তোমাকে ভালবাসি .
      কথাটা শুনেই জারিন রাহাতকে জড়িয়ে ধরল। রাহাত জারিনের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে . তিশা চোখ বড় বড় করে এতক্ষণ সব দেখছিল। আস্তে করে বাবার কাছে গিয়ে বলল 
    _এই আন্টিটা কে বাবা??? 
    -তোমার আম্মু
    _কিন্তু তুমি তো বলেছিলে আম্মু হারিয়ে গেছে 
   -হ্যা কিন্তু এখন ফিরে এসেছে
    _আম্মু কি আমাকে আদর করবে???

   . জারিন হাসছে।সে তিশাকে কোলে নিল
    ~হ্যা মামনি তোমাকে অনেক আদর করব . তিশা জারিনের সাথে গল্প জুড়ে দিল 
  _জান আম্মু বাবা না পচা।বাবা আমার কথা শুনেনা ~তাই নাকি?? _হ্যা . জারিন তিশার কথা শুনে হাসছে।আর রাহাত জারিনের হাসি দেখে হাসছে।এরা দুইজন হাসছে তাই কিছু না বুঝে তিশাও হাসছে.!! 

               সমাপ্ত 

Styfen Hokin success story | স্টিফেন হকিন্স এর জীবনকাহিনী | Success Story Styfen Hokin

 Styfen Hokin success story | স্টিফেন হকিন্স এর জীবনকাহিনী | Success Story Styfen Hokin
Bangla success story :- This success story written by jayanti chakrabarti.This story revolves around Styfen Hokin.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                                   

 স্টিফেন হকিন্স


Styfen Hokin life story

 হুইলচেয়ার থেকে উঠতে পারেন না মানুষটি । মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারেন না একটিও শব্দ । শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ইচ্ছামতাে নাড়াতে চাড়াতে পর্যন্ত পারেন না । অথচ এই পঙ্গু মানুষটিই বর্তমান পৃথিবীর বিজ্ঞান জগতের মহা বিস্ময় । মহাবিজ্ঞানী নিউটনের সমান সম্মান দেওয়া হয় তাকে । কে বলাে তাে এই আশ্চর্য মানুষটি ? ইনিই হলেন প্রফেসর স্টিফেন উইলিয়াম হকিন্স । মহাবিশ্বের জন্মের রহস্য , ব্ল্যাকহােল , কোয়ান্টাম ফিজিক্স ইত্যাদি গুরুতর সব বিষয় নিয়ে তার গবেষণা এই বিশ্বের গবেষকদের সামনে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান এনে দিয়েছে । 

        স্টিফেন হকিন্সের জন্ম ইংল্যান্ডের ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মহাবিজ্ঞানী নিউটনের জন্মের ঠিক ৩০০ বছর পরে । বাবা ছিলেন । ডাক্তার । ছােটো থেকেই স্টিফেনের মনে নানারকমের জিজ্ঞাসা । কলকজাগুলাে কি করে তৈরি হয় , কেমন করেই বা সেগুলাে কাজ করে এসব জানবার জন্য অসীম কৌতূহল তার মনে । স্কুলের বাঁধাধরা পড়ায় তার মন নেই । তার যতাে আগ্রহ তা হল ছােটো ছােটো যন্ত্রপাতির মডেল বানানােয় । তাই প্রতিদিনই ক্লাসে পিছিয়ে পড়তেন তিনি । পরীক্ষাতেও ভালাে ফল করতেন না মােটেই । বাজে ছাত্র হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি । 

         অথচ ক্লাসের এই পিছিয়ে পড়া বাজে ছেলেটিই যখন বিজ্ঞানের গুরুতর জটিল বিষয় নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করতেন তখন অন্যরা তাকে নানাভাবে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত । তার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘ আইনস্টাইন’--

       “ ওই দ্যাখ দ্যাখ , আইনস্টাইন আসছে । ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতাে নিরীহ ছােট্ট ছেলেটি । বন্ধুদের মুখে বিদ্রুপ মাখানাে নিষ্ঠুর হাসি দেখে একটুও বিচলিত হতাে না সে । মনে মনে শুধু কঠিন প্রতিজ্ঞা গড়ে নিতাে— একদিন সত্যি সত্যিই আইনস্টাইন হয়ে সে দেখিয়ে দেবে সবাইকে ।

         সেন্ট আলবানের স্কুল থেকে ১২ ক্লাস পাশ করে অক্সফোর্ডে পড়তে এলেন হকিন্স । ইচ্ছা অঙ্ক নিয়ে পড়ার কিন্তু অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে অঙ্ক নিয়ে পড়ার সুযােগ না থাকায় অগত্যা তাকে পড়তে হল পদার্থবিদ্যা । বছর তিনেক নমাে নমাে করে পড়ে পাশও করে গেলেন । তখন বয়স তাঁর কুড়ি । ঠিক করলেন কেম্ব্রিজ কলেজ থেকে কসমােলজি ( মহাকাশ বিজ্ঞান ) নিয়ে পড়বেন ও গবেষণা করবেন । কিন্তু ততােদিনে তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে এক ভয়ঙ্কর দুরারােগ্য ব্যাধি । ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত মাগুলি অকেজো হয়ে পড়ল । ডাক্তার বললেন আর কয়েক বছরের মধ্যেই তার মৃত্যু হবে । 

        হয়তাে হতােও তাই । কিন্তু বাধ সাধলেন জেন ওয়াইল্ড নামের একটি মেয়ে । মেয়েটি স্টিফেনের সঙ্গে আলাপ করে তাকে ভালােবেসে ফেললেন । সে ভালােবাসা এমনই গভীর যে স্টিফেনের শরীরে দুরারােগ্য ব্যাধির বাস জেনেও জেন তাকে বিয়ে করে ফেললেন । জেন তাকে দিনরাত বােঝাতে লাগলেন- হাল ছেড়াে না । স্ত্রীর অকৃত্রিম ভালােবাসায় স্টিফেনের মনের জোর আবার ফিরে এল । মৃত্যুকে জয় করলেন তিনি । এতাে অসুস্থতা নিয়েও স্রেফ মনের জোরে পি এইচ ডি শেষ করে ডক্টরেট উপাধি লাভ করলেন । মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে নিজের পড়াশুনাে আর গবেষণার কাজে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চললেন হকিন্স । 

        কোন রহস্যময় নিয়মের সুতােয় বাঁধা হয়ে বিশ্ব চলেছে এমন সুনিয়ন্ত্রিত ছন্দে— এইটাই তার গবেষণার মূল বিষয় । চমৎকার কাটছে । দিন । সারাবিশ্বে তখন ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম । বিশ্বের নামী দামী মহাপণ্ডিতদের সমাজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন হকিন্সের গবেষণার ফলাফল জানার জন্য । এমনি একটা চরম ব্যস্ততাময় সময়ে । আবার ঘূর্ণিঝড় নেমে এল জীবনে । 

        স্টিফেনের নিউমােনিয়া হল । ১৯৫৮ সাল । বয়স তখন তার মাত্র তেতাল্লিশ বছর । সে সময় চিকিৎসা শাস্ত্রের এতাে উন্নতি হয়নি । নিউমােনিয়ায় প্রাণ বাঁচানাের জন্য একটি অপারেশন হল স্টিফেনের আর তার ফলেই চিরদিনের মতাে কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেল তার । 

         কিন্তু মনের জোর তাে হারায়নি । হারিয়ে যায়নি জীবনের নির্ভুল লক্ষ্যের বিন্দু । তাই দুর্ভাগ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়েও হাল ছাড়েননি স্টিফেন হকিন্স । কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এবং নিজের সতীর্থ বিজ্ঞানীদের কাছে যে অনেক কথা বলার আছে তার । নিজের চিন্তাভাবনার কথা , গবেষণার কথা কতাে কি আছে আলােচনা করবার । 

      বােবা যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন মহাবিজ্ঞানী । সমাধানের উপায় হাতড়াতে লাগলেন পাগলের মতাে । কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যার চমৎকার একটি সমাধান খুঁজে বার করলেন তিনি । একটি ছােট্ট কম্পিউটার লাগিয়ে দেওয়া হল তার হুইলচেয়ারের হাতলের সঙ্গে । একটি কথাবলা সিন্থেসাইজারও জুড়ে দেওয়া হল তার সাথে । ডেভিড ম্যাশন নামের কেন্ত্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধু এই সিন্থেসাইজারটি বানিয়ে দিলেন তার জন্য । 

       যন্ত্রটির  রিডে , আলতাে আঙুলে স্পর্শ করা মাত্র তা থেকে কথা বেরিয়ে আসত । যেমন হারমােনিয়ারমের রিভ টিপলেই সারে গামাপা ইত্যাদি সব স্বর বেরিয়ে আসে তেমনি এই যন্ত্রের রিড টিপলেই কথা বেরিয়ে আসত । 

       প্রফেসর হকিন্সের যখন কথা বলার ইচ্ছে বা প্রয়ােজন হত তিনি সিন্থেসাইজার বাজিয়ে কথা বলতেন । যখন কিছু লেখার ইচ্ছা হত কম্পিউটারে লিখতেন । এভাবেই একজন সক্রিয় ব্যস্ত গবেষকের যাবতীয় কাজকর্ম অনায়াসে চালিয়ে নিতে সক্ষম হলেন তিনি । এখনও অব্যাহত গতিতে কাজ করে চলেছেন তিনি । মহাকাশে ভরশূন্য অবস্থায় ভাসমান হয়ে থাকার অনুভূতিটা ঠিক কেমন তাও অস্বাদন করেছেন তিনি সম্প্রতি , সহযােগী বিজ্ঞানীদের সাহায্যে । আর এই যে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন সম্পূর্ণ পঙ্গু একটি মানুষ তার মূলে সেই হাল না ছাড়ার মনােভাব । সেই অনমনীয় দৃঢ়তার বীজমন্ত্র । 

      মানুষের মনােবলের শক্তি যে কতাে প্রবল স্টিফেন হকিন্সের জীবন । থেকেই তা বােঝা যায় । বােঝা যায় ইচ্ছাশক্তি জোর থাকলে মানুষও হয়ে উঠতে পারে ঈশ্বরের সমকক্ষ । 

      Adversity is the diamond , dust that heaven polishes its jew els with . --Bighton


Styfen Hokin ;- Styfen Hokin was an english theoretical physicist, cosmologist, and author who was director of research at the centre of theoretical cosmology at the university of cambridge at the time of his death. He was born 8th January 1942, Oxford , United Kingdom. He died 14th March 2018, Cambridge, United Kingdom . 


You can read more success story :-

টমাস আলভা এডিসন 

মেরী কুরি

 অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এর জীবন কাহিনী | Best Powerfull Motivational Success Story In Bengali | Bangla Inspirational success story

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এর জীবন কাহিনী | Best Powerfull Motivational Success Story In Bengali | Bangla Inspirational success story

Bangla success story :- This success story written by Jayanti Chakrabarti.This story revolves around Acharya Jagadish Chandra Bose like Jagadish Chandra Bose biography.We are collected this type success story that revive your lost mind.You get more success story on bengali in our website. And I think  all success story will take place in your mind.So please share this story to your friends and I sure they will also benefit from this success story.Thank you so much.                         

     আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু 

Acharya Jagadish Chandra Bose life story


     'সহস্র প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে হইবে । অবিরাম চেষ্টা ও বিরুদ্ধ শক্তির সহিত যুদ্ধ করিয়া এবং মনের শক্তি বৃদ্ধি করিয়াই আমরা দেশের ও জগতের কল্যাণসাধন করিতে পারিব ।... মানসিক শক্তির ধ্বংসই প্রকৃত মৃত্যু '--

    কে বলেছিলেন বলাে তাে কথাগুলাে ? আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু । একমাত্র বাঙালি বৈজ্ঞানিক যিনি সাম্রাজ্যবাদী যাঁতাকলের চাপে পড়ে ন্যায্য পাওনা নােবেল পুরস্কার থেকে নিষ্ঠুরভাবে বঞ্চিত হয়েছিলেন । যিনি পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে । ভয় , ভালােবাসা , রাগ , দুঃখ সবই আছে ঠিক যেমন থাকে একটি মানুষের । 

       তিনি আরাে অনেক কিছু বলেছিলেন বা বলতে চেয়েছিলেন । কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অহংকার ও উন্নাসিকতা তার কণ্ঠরুদ্ধ করে দিয়েছিলো । ভারতীয়রাও  যে মানুষ , তারাও যে বিজ্ঞান সাধনায় শ্রেষ্ঠের শিরােপা  পতে পারে , এই বাস্তব সত্যকে মেনে নিতে শাসক ইংরেজের ইগোয় বেঁধেছিল । তাই জগদীশ চন্দ্র বসুর মতাে বিরল প্রতিভা তাঁর সমস্ত সম্ভাবনাকে বিকশিত করার কোনাে সুযােগ পাননি । এমনকি , ন্যায্য পানা নােবেল পুরস্কার থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন । কিন্তু তবু তিনি হাল ছাড়েন নি । আমরণ লড়াই চালিয়ে গেছেন এবং শেষপর্যন্ত জগৎবাসীকে শুনিয়েই ছেড়েছেন তার অভিনব আবিষ্কারের কথা । আজ তোমাদের কাছে সেই অসম সংগ্রামের গল্প বলব । 

        প্রথমেই বলে রাখি , আচার্যদেব জন্ম থেকেই কিন্তু অনমনীয় দৃঢ়তার অধিকারী । তার বাবাকে তিনি দেখেছেন একের পর এক উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাত দিতে , নিজের ব্যক্তিগত তহবিল উজাড় করে দিতে এবং শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হতে এবং কিছুদিন বাদে , ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে উঠে আবার নতুন কোনাে প্রকল্পে ঝাপিয়ে পড়তে । তিনি কাপড়ের কল । করেছিলেন । কৃষি ব্যাঙ্ক , স্বদেশী চা বাগান , টেকনােলজির স্কুল কোনােটাই টেকেনি । প্রচুর লােকসান হয় তার এসব করার ফলে । কাজেই ব্যর্থতার মুখােমুখি হওয়া এবং তা থেকে উঠে আসা মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠা দুটোকেই তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন ।

        পিতার মৃত্যুর পর মায়ের গহনাবিক্রির টাকায় জগদীশ চন্দ্র চললেন বিলাতে । কিন্তু জাহাজে ওঠার পর থেকেই সংঘাতিক কালাজ্বরে একেবারে ঘায়েল হয়ে পড়লেন তিনি । দিনের মধ্যে বেশির ভাগ সময়টাই নিথর হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন । একদিন তাে এমন হল যে সবাই প্রাণের আশাই ছেড়ে দিল । কিন্তু প্রচণ্ড মনের জোরে , তীব্র ইচ্ছাশক্তির প্রয়ােগে ইংল্যান্ডের উপকূলে নামার আগেই মােটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি । 

      এবার আর এক মােক্ষম বাধার সম্মুখীন হতে হল । ডাক্তারি শিখতে গেলে মড়া কাটতে হয় । কিন্তু জগদীশ চন্দ্র এই মড়াকাটার গন্ধ একদম সহ্য করতে পারতেন না । হাজার প্রতিজ্ঞা নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেও যেই গন্ধ নাকে যেত অমনি সমস্ত শরীর গুলিয়ে উঠত তার । বমি হত । প্রবল জ্বর আসত রাতে । শেষপর্যন্ত ডাক্তারি পড়ার আশা ছেড়ে দিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশােনা করলেনও কেন্ত্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি নিয়ে দেশে ফিরে এলেন চার বছর পর । 

      দিনের পর দিন কোনাে চাকরি নেই । মাথার ওপর বাবার পাহাড় পরিমাণ দেনা । তবু চাপের কাছে মাথা নত করেন নি । অনেক টালবাহনার পর , শেষে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা চাকরি মিলল । অস্থায়ী অধ্যাপকের পদ । মাইনে সাহেব অধ্যাপকদের তিনভাগের দুভাগ ।

       প্রতিবাদ করলেন জগদীশ চন্দ্র । টানা ৩ টি বছর সম্পূর্ণ বিনা বেতনে চাকরি করে গেলেন । শেষে তার এই অনমনীয় দৃঢ়তার কাছে নতিস্বীকার করতে হল কর্তৃপক্ষকে । ৩ বছরের পুরাে বকেয়া মাইনে মিটিয়ে দিল তারা সেইসঙ্গে চাকুরিও হল পাকা । জয় হল ধৈর্যের । বকেয়া পাওনা দিয়ে জগদীশ চন্দ্র বাবার বিপুল দেনা সব শােধ করে দিলেন । 

     গবেষণার কাজে জগদীশ চন্দ্রকে কোনােদিন কোনাে সাহায্য করেনি ভারতের ব্রিটিশ সরকার । বিদেশে একজন গবেষক পান একাধিক নি জ সা সহকারী ( প্রত্যেকেই প্রায় ডক্টরেট উপাধিধারী ) প্রচুর যন্ত্রপাতি ও অঢেল সময় । সপ্তাহে মাত্র ৫/৬ ঘণ্টা পড়াতে হয় তাদের । জগদীশ চন্দ্রকে পড়াতে হত সপ্তায় ২৬ ঘণ্টা । কোনাে সহকারী ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা তৃতীয় শ্রেণির গবেষণাগারে কাজ করে যেতে হত । 

     শেষে ব্রিটিশের সাহায্যের আশা ছেড়ে দিয়ে এবার নিজেই উঠে পড়ে লাগলেন । চেনাজানা মিস্ত্রীদের ডেকে নিজেই খরচ করে বানিয়ে নিলেন প্রয়ােজনীয় সূক্ষ্ম সব যন্ত্রপাতি । তাই দিয়েই চলল গবেষণা । এক বছরের মধ্যেই গবেষণার ফলাফল জানিয়ে লন্ডনের রয়্যাল । সােসাইটিতে পত্র দিলেন । পেলেন DSC উপাধি ও বৃত্তি । 

     এই সময় জগদীশ চন্দ্র বিনা তারে , শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে খবর পাঠানাের বিষয়ে গবেষণা করছিলেন । তাঁর গবেষণা নিয়ে সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল । এই বেতার ব্যবস্থাকে মূলধন করে কোটি কোটি টাকা রােজগারের সম্ভাবনা ।

     পেটেন্ট নেওয়ার পরামর্শ নিয়ে বহু ব্যবসায়ী আসতে লাগল তার করা কাছে মুঠো মুঠো টাকার প্রলােভন দেখিয়ে । কিন্তু অর্থের জন্য তাে বিজ্ঞান নয় , বিজ্ঞান মানবসেবার জন্য । তাই জগদীশ চন্দ্র সরে দাঁড়ালেন । এমনকি বেতার আবিষ্কারের জন্য যখন নােবেল পুরস্কার ঘােষণার সম্ভাবনা দেখা দিল তখন ব্রিটিশ সরকার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামই পাঠালাে না সুইডেনের নােবেল কমিটির কাছে । কারণ একটাই— পদানত ভারতীয়ের এই শ্রেষ্ঠ সম্মান তারা মেনে নিতে পারেনি । এই সুযােগে আমেরিকার গুগলি এলসাে মার্কনী বেতার আবিষ্কার কর্তা হিসাবে নােবেল পুরস্কার পেয়ে গেলেন । 

      বঞ্চিত , হতভাগ্য বঙ্গসন্তানের প্রতিভা রয়ে গেল সবার অগােচরে কিন্তু তবুও হতাশার শিকার হননি তিনি । ভেঙে পড়েন নি । বরং নতুন উদ্যমে নিজের সাধনায় মগ্ন হয়ে গেছেন । দ্বিতীয়বার বিদেশে গিয়ে খুঁটিয়ে দেখে এসেছেন সেখানকার বিজ্ঞানসাধনার পদ্ধতি । 

     বিজ্ঞান সাধনার জন্য চাই উপযুক্ত গবেষণাগার । আগে বহুবার ব্যর্থ । হয়েছেন । আবার একবার ভারতের নতুন গভর্নর লর্ড কার্জনের কাছে । জগদীশ চন্দ্র আবেদন জানালেন বাংলাদেশে একটি আধুনিক মানের উন্নত গবেষণাগার তৈরি করে দেওয়া হােক যাতে প্রতিভাবান যুবকরা বিজ্ঞান সাধনার সুযােগ পায় এবং বিশ্বের দরবারে নিজেদের প্রমাণ করতে পারে । 

     লর্ড কার্জন চারজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর কাছে মতামত বা রিপাের্ট চেয়ে পাঠালেন এ ব্যাপারে । তার মধ্যে দুজন ছিলেন ড . বসুর বন্ধু । তাঁরা সমর্থন করলেন কিন্তু বাকি দুজন কার্জনকে চিঠি লিখে জানালেন - ‘ চন্দ্র বসু তেমন কিছু উঁচুদরের বিজ্ঞানী নন । কাজেই তার আবেদনের তেমন কোনাে মূল্য নেই । তাছাড়া ভারতের মতাে অশিক্ষিতদের দেশে কেরানি বানানাের উপযােগী কটা স্কুল কলেজই যথেষ্ট । তাদের জন্য আবার গবেষণাগার তৈরি করে মহামান্য সরকারের অর্থের অপব্যয় । করার কোনাে মানেই হয় না ।'

      স্তম্ভিত হয়ে গেলেন জগদীশ চন্দ্র । দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । তার জেদ চেপে গেল— স্বপ্নের গবেষণাগার তিনি গড়ে তুলবেনই । 

      এরপর টানা ১৭ বছর তিল তিল সঞ্চয় আর হাড়ভাঙা পরিশ্রমে সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুললেন বসু বিজ্ঞান মন্দির । আবারও জয় হল ধৈর্য নিষ্ঠা আর জেদের ।

       ইতিমধ্যে ‘ উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে’– এই বিষয়ে তাঁর গবেষণা পৃথিবীর বিজ্ঞানীমহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে । বেঁধে গেছে জোর বিতর্ক । একদল তার যুক্তি শুনে বলছে এ সম্ভব । অন্য দল- বিশেষত ফিজিওলজিস্ট , কেমিস্ট ও ফিজিসিস্টরা প্রাণপণে প্রতিবাদ করে বলছেন— এ অসম্ভব । আজগুবি । ডাক এলাে প্যারী প্রদর্শনী থেকে । তৃতীয়বার বিদেশ যাত্রা করলেন জগদীশ চন্দ্র । সভায় তার গবেষণাটি বুঝিয়ে বলার জন্য সময় পেলেন মাত্র ১৫ মিনিট । যা তিন ঘণ্টাতেও ঠিক মতাে বলা হয় না তাকেই মাত্র ১৫ মিনিটে ব্যাখা করলেন তিনি । এরপর সব শুনে কারােরই সন্দেহের আর কোনাে অবকাশ রইল না । স্বয়ং প্রফেসর লজ উঠে এসে জড়িয়ে ধরলেন জগদীশ চন্দ্রকে । অথচ ইনিই ছিলেন বিরােধী দলের পাণ্ডা ।

      অন্যদিকে ইউরােপীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা বড় অংশ জোট বেঁধে ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগল জগদীশ চন্দ্রের বিরুদ্ধে । বিজ্ঞানী ওয়ালার ও স্যান্ডারমান এঁদের নেতা । তারা দল বেঁধে জগদীশ চন্দ্রকে চেপে ধরলেন । এক অদ্ভুত দাবী তাদের মুখে । তারা বললেন— 

     ‘ স্বয়ং গাছ যদি স্বহস্তে লিখে দেয় তবে এরকম অবাস্তব আষাঢ়ে কথা তাঁরা মেনে নেবেন যে গাছেদেরও প্রাণ আছে । 

      গাছ নিজের হাতে লিখে দেবে ? এতাে রূপকথা । ম্যাজিক । এই ম্যাজিক দেখাতে না পারলে পশ্চিম দুনিয়া তার আবিষ্কারকে অস্বীকার টানে পাত কিন্তু কাগ দেও তে লিখে করবে ? সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে যাবে এতাে বছরের সাধনা ? বিশ্বের এক অমােঘ সত্য অজানা থেকে যাবে মানুষের কাছে ?

      কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না তিনি । চিন্তিত , বিষন্ন মনে পশ্চিম থেকে দেশে ফিরে এলেন । চক্রান্তকারীদের চেষ্টায় বিলাতের রয়্যাল বাঙালি করে দেওয়া হল । অধ্যাপক র্যামসে বিদায়ী সংবর্ধনার আসরে একঘর সাড়া । এব দৃঢ়তার বিজ্ঞানীর সামনে হাসতে হাসতে বললেন ,' ভারতের মতাে দেশ থেকে । একজন বিজ্ঞানীর এতােদূর উঠে আসা নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ । কিন্তু একটা  কোকিলের ধ্বনি শুনেই বসন্তের আগমন ঘটে গেছে এরকম মনে করা ঠিক নয় ।

      কথাটি শুনে তৎক্ষণাৎ জগদীশ চন্দ্র উঠে দাঁড়িয়ে সসম্রমে বললেন , ‘ আপনার চিন্তার কোনাে কারণ নেই । শিগগীরই শত শত কোকিল ডাকতে শুরু করবে ভারতের বাগান মুখর করে ।'

    সেবার প্রতিজ্ঞায় চোয়াল শক্ত করে দেশে ফিরলেন এই বঙ্গ তনয় । না , হার মানব না কিছুতেই । টানা ১২ বছর ধরে আবার শুরু হল সাধনা । 

     বিজ্ঞানাচার্য জগদীশ চন্দ্র পেলেন বাগদেবীর কাছে অমরত্বের বর । ১২ বছরের চেষ্টায় গড়ে তুললেন resonant recorder নামে এক অতিসংবেদনশীল অতি সূক্ষ্ম যন্ত্র । বাংলা নাম সমতাল । 

    অতি সূক্ষ্ম তার দিয়ে একান্ত হালকা একটি কলম তৈরি হল । সেটি রাখা হল মরকত নির্মিত জুয়েলের ওপর যাতে গাছের পাতার সূক্ষ্মতম টানেও সেটি ঘুরতে পারে । এবার টবসুদ্ধ একটি গাছকে খােলা জানলার পাশে সূর্যালােকের মধ্যে বসিয়ে রাখা হল । এবার সূর্যের আলাের স্পর্শে পাতার বুকে জাগল আনন্দের স্পন্দন । সঙ্গে সঙ্গে pen ঘুরতে লাগল । কিন্তু সাধারণ কাগজের সঙ্গে ঘর্ষণে অত সূক্ষ্ম পেন আর চলে না । কাগজ ছেড়ে এবার মসৃণ কাচের ওপর প্রদীপের কালি বা ভুযাে লেপে দেওয়া হল । এবার আর কোনাে অসুবিধা রইলাে না । সূর্যালােকের স্পর্শে আনন্দিত পাতার হৃদয় স্পন্দনের কথা , গাছ নিজেই কলম ধরে লিখে দিলাে কালাে কাচের ওপর , আঁকাবাঁকা রেখার স্পষ্ট অক্ষরে । ছােট্ট নতুন যন্ত্রটি বাক্সে ভরে এবার হাসি মুখে বীরদর্পে বের হলেন বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বজয়ে । হ্যা , সঙ্গে কাচের জারে গুটিকয় লজ্জাবতীর গাছ এবং বনচাড়ালের গাছও নিতে ভুললেন না । 

    বলা যায় না বিলিতি গাছও যদি নেটিভ কালা ভারতীয়ের যন্ত্র বলে সাড়া না দেয় !

     এবার আর তাকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়নি । জয় হয়েছিল সাধনার , দৃঢ়তার আর আত্মবিশ্বাসের ।

     No great man even complains of want of opportunities . 

                 -Ralph Waldo Emerson 


Jagadish Chandra Bose :- Sir Jagadish chandra Bose was born November 30, 1858, Mymensingh, Bengal. Died November 23, 1937, Giridih, Bihar . Jagadish Chandra Bose is one of the most prominet first Indian scientists who proved by experimentation that both animals and plants minute responses to external stimulants